জানা থাক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কৌশল

ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট নামের ওয়েবসাইট থেকে শেখা যায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নানা কৌশল
সংগৃহীত

ইংরেজিতে লিখতে-বলতে-পড়তে পারা কিংবা লেখালেখি বা যোগাযোগের জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার জানা এখন মৌলিক দক্ষতার অংশ। ডিজিটাল দুনিয়ার বিপণন (মার্কেটিং) কৌশলসহ নানামুখী যোগোযোগ দক্ষতা বাড়ানোর সময় এখন। যাঁরা ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায়, বিশেষ করে বিপণনে পেশা গড়তে চান, তাঁদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং জানা খুব জরুরি। তবে এর বাইরেও ভবিষ্যতের পেশাই বলি, বা ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’, ডিজিটাল মার্কেটিং বা যোগাযোগ কৌশল জানা থাকলে এগিয়ে থাকবেন আপনি।

ফেসবুক, লিংকড–ইনের ব্যবহার আমরা হয়তো ভালোই জানি। এর সঙ্গে কিছু টুলস আর কৌশল রপ্ত করে নিজেকে একটু হালনাগাদ রাখলেই হলো। ক্যাম্পাস বন্ধের এই সময়টা কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারেন এখনই। ৪৫ থেকে ৯০ ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করা যায় ঘরে বসেই।

শিখতে চাই ডিজিটাল মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে হলে প্রযুক্তিগত প্রাথমিক ধারণা বা কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা থাকতে হবে। লেখালেখি, ছবি সম্পাদনা, গ্রাফিকস সফটওয়্যারের কাজ জানা থাকলে বাড়তি দক্ষতা হিসেবে কাজে আসবে। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এসইও সম্পর্কে অবশ্যই ভালো জানাশোনা থাকতে হবে। ব্লগ তৈরির ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেসে বিনা মূল্যে একটি ওয়েবসাইট খুলে প্রতিদিন নিজেই এসইও নিয়ে অনুশীলন করা যেতে পারে।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, ই–মেইল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। ই–মেইল বিপণনে কার্যকর ই–মেইল লেখার কৌশল জানতে হবে। ই–মেইলের ভেতর কী লিখতে হবে, লেখার ধরন কেমন হবে, এসব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা চাই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে দক্ষ হতে হলে আরও বাড়তি কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। ফেসবুক ছাড়াও ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদির পেজ বা চ্যানেল পরিচালনা, অর্থের বিনিময়ে প্রচারণা (পেইড ক্যাম্পেইন) চালানো, ইউটিউবে ভিডিওর প্রচার ও বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি কনটেন্ট মার্কেটিং, ডেটা ও অ্যানালিটিকসের প্রাথমিক ধারণা রাখা চাই।

তবে সবচেয়ে জরুরি হলো ইন্টারনেটের দুনিয়ায় কী হচ্ছে, তা জানতে চোখ–কান খোলা রাখা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নানা ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়া ফিচারগুলোর সর্বশেষ তথ্য, অ্যালগরিদমের পরিবর্তনসহ নতুন যেকোনো ধরনের হালনাগাদের নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে। এ জন্য টেকক্রাঞ্চের মতো সাইট কিংবা ফোরামগুলো ফলো করা যেতে পারে।

অনলাইনে ব্র্যান্ড কিংবা নির্দিষ্ট পণ্যের বিপণনের জন্য গুগল অ্যাডওয়ার্ডস, মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম, গুগল ডিসপ্লে নেটওয়ার্কসহ গুগলের আরও কিছু মার্কেটিং টুল বেশ কার্যকর। গুগলের নিজস্ব কিছু অনলাইন কোর্স রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে গুগলের এই সেবাগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ঘরে বসেই ডিজিটাল মার্কেটিং

ফেসবুক ব্লু প্রিন্ট নামের ওয়েবসাইটটিতে ফেসবুক কাজে লাগিয়ে বিপণনবিষয়ক বহু কোর্স রয়েছে, যেগুলো করা যাবে বিনা মূল্যে। সাধারণত ১৫ থেকে ৫০ মিনিটে সম্পন্ন করা যায়, এ রকম বেশ কিছু কোর্স পাওয়া যায়। সনদপ্রাপ্তিসহ কোর্স শেষে পরীক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে। অন্যদিকে গুগলের বিপণন সেবাগুলোতে দক্ষতা অর্জনের জন্য গুগল স্কিলশপে বিনা মূল্যে কোর্স করা যায়। এ ছাড়া ইউডেমি, কোর্সেরার মতো আরও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকেও ডিজিটাল মার্কেটিংবিষয়ক বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।

এখন যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ, তাই অনলাইনে এই কোর্সগুলো করার মাধ্যমে সময়টাকে দারুণভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে মোটামুটি ভালো মানের দক্ষতা অর্জনের জন্য তিন মাস যথেষ্ট। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট অর্থাৎ তিন মাসে ৪৫ ঘণ্টা সময় দিলেই এই দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।

বাড়ছে কাজের সুযোগ

বাংলাদেশে এখন ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের (ফেসবুক নির্ভর বাণিজ্য) বড় একটি বাজার তৈরি হয়েছে। নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কিংবা অনলাইন কেনাকাটার এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও বিপণনের কাজ আছে, তার প্রায় সবগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ আছে। ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার বা সোশ্যাল মিডিয়া মডারেটরের মতো নতুন কিছু চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও এই খাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে। আর নিজে উদ্যোক্তা হতে চাইলেও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এই দক্ষতা নানাভাবে কাজে আসবে।

লেখক: হেড অব বিজনেস, প্রথম আলো ডিজিটাল