জীবন এখানেই শেষ নয়

তানিয়া-কমলের (ছদ্মনাম) প্রেমের বয়স প্রায় ছয় বছর। দুজনে পার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। ঠিক করেছিলেন, চাকরিতে একটু থিতু হয়ে বিয়ে করবেন। হঠাৎ তানিয়া বুঝতে পারেন, কমল কেমন বদলে যাচ্ছেন। অজানা আশঙ্কায় বুকের ভেতরটা কুঁকড়ে উঠল তানিয়ার। খুব বেশি দিন আর অপেক্ষা করতে হলো না তঁাকে। একদিন কমল এসে নিজেই জানিয়ে দিলেন তঁার অপারগতার কথা। এত বছরের সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়া সহ্য করতে পারলেন না তানিয়া। মেয়ের সেই দুঃসময়ের দিনগুলোয় তানিয়ার মা হয়ে উঠলেন তঁার সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা। মায়ের এই আশ্রয় তানিয়াকে আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখার শক্তি জুগিয়েছে জীবনের পরবর্তী ক্ষেত্রগুলোয়।আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়তই ঘটছে এমন ঘটনা। ছেলেমেয়ে উভয়ের জীবনেই ঘটতে পারে সম্পর্ক ভাঙার মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনা। Èকিন্তু জীবন এখানেই শেষ নয়। জীবন অনেক বড়। সম্পর্ক ভাঙার মতো ঘটনায় সবকিছু থামিয়ে দিলে চলবে না; বরং সামনের জীবনের জন্য নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করে গড়ে তুলতে হবে।' এমনটাই বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহজাবীন হক।পরিবারের সবাইকে বুঝতে হবে, যঁার জীবনে সম্পর্ক ভাঙার এ ঘটনা ঘটেছে, তিনি খুব কষ্টে আছেন। তঁার মনের কষ্ট কমিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরিবারের কাছের মানুষের। তঁাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া ও কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে; প্রয়োজনে তঁাকে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যেতে পারেন।জীবনে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান থাকবে∏এটিই স্বাভাবিক। সম্পর্ক ভাঙার মতো চরম সত্যকে মেনে নেওয়ার মতো মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। হঠাৎ করে প্রিয় মানুষ প্রতিশ্রুতি ও বিশ্বাস ভাঙলে তা মেনে নেওয়া খুব সহজ কোনো বিষয় নয়; এটি বেদনাদায়ক। তবু এর জন্য জীবনকে থামিয়ে দিলে চলবে না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, Èমনে রাখতে হবে, আপনি একটি পরিবারের সদস্য। পরিবারের প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, আপনার ভালো থাকা ও খারাপ থাকার ওপর তাদেরও ভালো-মন্দ নির্ভর করে। তাই মা-বাবা ও ভাইবোনের ভালোবাসার বন্ধনকে ছোট করে দেখে স্বার্থপরের মতো কোনো ভুল সদ্ধিান্ত নেবেন না।'কাছের মানুষটির কাছে মন খুলে সব দুঃখ ভাগাভাগি করে নিন। দেখবেন, অনেক হালকা হয়ে গেছেন। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজনের মধ্যে সময় পার করুন। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। বিতর্ক, আবৃত্তি ও খেলাধুলার মতো গঠনমূলক ও সামাজিক কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। ব্যায়াম করলেও অনেক সময় হতাশা কমে যায়। আর এটি হতাশাগ্রস্ত হওয়ার মতো কোনো কারণ নয়। এটিকে জীবনের আর দশটি ছোটখাটো অপ্রাপ্তির ঘটনার মতো ভাবতে চষ্টো করুন।বেদনার সাগরে ডুবন্ত ব্যক্তিটি পরিবারের সবার কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা তঁাকে আপ্রাণভাবে বোঝানোর চষ্টো করতে হবে। তবেই বেদনায় ডুবতে থাকা ব্যক্তিটি একদিন হাসিমুখে আবার সুখের স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন।