>

জঙ্গিবাদে জড়িত বিপথগামীরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। গোটা বাংলাদেশে আমাদের তরুণেরা জড়িয়ে আছেন নানামুখী শুভ উদ্যোগের সঙ্গে। তাঁদের অভিনব ও ইতিবাচক কিছু উদ্যোগ নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।
ব্লাডম্যান কোনো সুপারম্যান বা অতিমানবের নাম নয়। এটি ঢাকার একটি ডিজিটাল ব্লাড ডোনেটিং বা স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের ডিজিটাল সংগঠন। এ সংগঠন রক্তগ্রহীতা ও রক্তদাতাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের কাজ করে। এ জন্য তাদের রয়েছে একটি কল সেন্টার; যার নম্বর ০১৬২৭-২৬০৯৩৩। তাদের ওয়েব সাইটে (www.bloodman.org) রিকোয়েস্ট ফরম (অনুরোধপত্র) পূরণ করে দিলে মুহূর্তের মধ্যেই বার্তা চলে যায় ‘ব্লাডম্যান’-এর কাছে। এ ছাড়া রক্তের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে তাদের ফেসবুক পেজে। এ জন্য আপনাকে জানাতে হবে রক্তের গ্রুপ ও হাসপাতালের অবস্থান।
ব্লাডম্যানের প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হাসান শোনালেন এর পেছনের গল্প। ‘২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। গ্রাম থেকে কোনো আত্মীয়স্বজন ঢাকার কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে রক্তের প্রয়োজন হলেই ফোন করত। যখনই রক্তের জন্য কোথাও সাহায্য চাইতে যেতাম, দেখতাম খাতা থেকে খুঁজে খুঁজে নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিচ্ছে, পরে হাতে একটি টোকেন ধরিয়ে দিচ্ছে। তা ছাড়া যে লোকটিকে ফোন দেওয়া হচ্ছে তাঁর সম্পর্কেও কেউ কিছু জানে না। তখন থেকেই মাথায় ভাবনাটা ঘুরছিল অনলাইনভিত্তিক কিছু কীভাবে করার।’ সময়টা ২০১৪ সালের জুলাই মাস। শাহরিয়ারের মনে হলো হঠাৎ তিনি তো ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের ডেটাবেজ সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে হয়। ভাবলাম, আমি যদি ঢাকার বিভিন্ন এলাকার কিছু মানুষের রক্তের গ্রুপ, ফোন নম্বর ও তাঁদের ঠিকানা ডেটাবেেজ সংরক্ষণ করি। তাহলেই তো রক্তের ব্যবস্থা করা সহজ হয়। ডিপার্টমেন্টের রিয়াজুল ইসলাম নামে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিষয়টা শেয়ার করলাম। তিনি সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করলে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। শুনে তিনি ৬০ হাজার টাকা দেন। পরে বন্ধু নিয়াজ, রফিক আনাচ—এদের নিয়ে কাজও শুরু করি।’
অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা নিয়াজ মাহমুদ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। এমন অসংখ্য লোক আছে যাদের এ শহরে কোনো পরিচিত লোকজন নেই। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সেসব মানুষ।’
ব্লাডম্যানের প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের নাক–কান–গলা িবভাগের প্রধান অধ্যাপক আলমগীর হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যে এলাকায় রক্তের প্রয়োজন হবে ব্লাডম্যান তাদের ডেটাবেজ থেকে খুঁজে সেই এলাকার ডোনারদের (রক্তদাতা) সঙ্গে কথা বলে। এর সাহায্যে জরুরি মুহূর্তে সহজেই রক্ত জোগাড় করা সম্ভব। এটা খুবই ভালো একটি উদ্যোগ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ব্লাডম্যান একটি স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠান। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেধাবী শিক্ষার্থীর দ্বারা এটি পরিচালিত হচ্ছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা আমি জেনেছি। তাঁদের উদ্যোগ ও আগ্রহকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
আপনিও হতে পারেন ব্লাডম্যান
যাঁরা রক্ত দিতে আগ্রহী, তাঁরা কল সেন্টারে ফোন করে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হাসান জানালেন, ‘কিছুদিন আগে, কম্বোডিয়ার একটি সংস্থা ব্লাডম্যানের কার্যক্রমকে সম্মান জানিয়েছে এবং সেখানে ব্লাডম্যানের মতো একটি সংগঠন খোলার অনুমতি চেয়েছে।’ ব্লাডম্যান সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে ২৫০ টাকা নেয়। কল সেন্টারের নির্বাহী কাজ বাবদ রাখা হয় ১০০ টাকা। বাকি ৫০ টাকা রাখা হয় অফিস ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ। ব্লাডম্যান কোনো দরিদ্র অসহায় রোগীর কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ রাখে না।
ব্লাডম্যান প্রতি মাসে রক্তদাতাদের একটি সম্মানজনক কোটপিন প্রদানের মাধ্যমে ‘ব্লাডম্যান’ উপাধি দেয়।
ব্লাডম্যানের স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। সদস্য সংখ্যা ১৭ জন। শাহরিয়ার জানান, ‘ব্লাডম্যানের লক্ষ্য ২০১৬ সালের মধ্যে দুই লাখ ডোনারের ডেটাবেজ সংরক্ষণ করা এবং একটি ব্লাড ব্যাংক তৈরি করা। ’