
জীবন মানেই শব্দ, শব্দ মানেই জীবন। সহজ শব্দ প্রকাশ করে জীবনের সহজবোধ্যতাকে। আর জীবনের যাবতীয় জটিলতা-কুটিলতার প্রকাশক হলো কঠিন আর দাঁতভাঙা শব্দ! জীবন আর শব্দ তাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ঠিক এ আন্তরিক সম্পর্কটিই প্রকাশ পেয়েছে বঙ্গ একাডেমি থেকে প্রকাশিত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার আধুনিক সহজ বঙ্গ অভিধান বইটিতে। ছকে বাঁধা যাপিত জীবন এক অনুপম প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে সুচারুরূপে উপস্থাপিত হয়েছে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। একটি বইয়ের সার্থকতা তো ঠিক এখানেই নিহিত।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার জন্য সহজ বঙ্গ অভিধান বইটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক এর ঝরঝরে, জীবনঘনিষ্ঠ আর প্রাঞ্জল ভাষা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ৩৩ পৃষ্ঠায় ‘মাইরালা’ শব্দটির অর্থ লেখা হয়েছে ‘মারিয়া ফেল’। আরও পরিষ্কার করার জন্য বাক্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘কেউ আমারে মাইরালা’! অযথা কথা প্যাঁচানোর বাহুল্য দোষ থেকে বইটি সম্পূর্ণ মুক্ত।
বইটি পড়তে গেলে পাঠকমাত্রেরই এই উপলব্ধি হবে, ‘ওমা, এ তো আমার নিজেরই কথা!’ যেন পাঠকের আটপৌরে জীবনটাই উঠে এসেছে পরম মমতায়। আর তাই একবার পড়তে শুরু করলে শব্দ তথা জীবনের সব অর্থ উদ্ধার না করে উঠতে ইচ্ছা করে না! (বইটি পড়তে শুরু করার আগে তাই প্রকৃতির ডাকসহ যাবতীয় কাজকর্ম সেরে রাখা ভালো।)
প্রকাশভঙ্গিতে যথেষ্ট মুনশিয়ানা থাকলেও অভিধানটিতে সচেতন কিংবা অবচেতন অযত্নের ছাপস্বরূপ কিছু ত্রুটিও লক্ষণীয়। যেমন এর নাম। সহজেই বোঝা যায় যে বইটির সর্বজনীনতা প্রকাশ করার জন্য এ নামটি বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু ‘আবাল’ শব্দটি যেহেতু একটি বিশেষ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে, তাই এ ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। প্রচ্ছদেও রয়েছে দৃষ্টিকটু অসংগতি। প্রাসঙ্গিকতা বোঝাতে গিয়েই হয়তো প্রচ্ছদে এলোমেলোভাবে কয়েকটা বর্ণ আর শব্দ দিয়ে জগাখিচুড়ি বানানো হয়েছে। এটা আরও গোছানো আর গভীর হওয়া উচিত ছিল।
মোটা দাগে বলতে গেলে বইটি সমকালীন সমাজ বাস্তবতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রিপ্রেজেন্ট করে। বিদগ্ধ পাঠকমাত্রেরই অবশ্যপাঠ্য বই এটি।