টমেটো নিয়ে বিপাকে টেকনাফের চাষিরা

উপজেলার সদরের পল্লানপাড়ার টমেটোচাষি কালা মিয়া। এবার ১১ কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু এখন পড়েছেন বিপাকে। হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক না হওয়ায় টমেটো পাঠাতে পারছেন না হিমাগারে। বাজারেও দাম পাচ্ছেন না। পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। এদিকে খেতে টমেটো পেকে ঝরে পড়ছে। কক্সবাজারে কোনো হিমাগার না থাকায় খেতে থেকে তোলা টমেটো সংরক্ষণের জন্য পাঠাতে হয় ১৯৮ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়।
কালা মিয়ার মতো টমোটো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন টেকনাফের সব চাষি। তিনি বলেন, ‘টমেটো তোলার সময় হয়ে গেছে, কিন্তু তুলতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে চাষের খরচ তোলাও মুশকিল হবে।’ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, দুই বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে চলতি মৌসুমে ৫৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল।
মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু অবরোধের কারণে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি কৃষক টমেটো বিক্রি করতে পারছেন না।
মহেষখালীয়াপাড়া গ্রামের চাষি হামিদ হোসেন বলেন, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে (প্রতি কেজি ২৫ টাকায়) প্রতি মণ এক হাজার টাকা দরে প্রায় ৬০ মণ টমেটো বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে তাঁর খেতে পেকে যাওয়া আরও ৩৫ মণ টমেটো বিক্রি হয়নি। বেশি পেকে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা না কেনায় বাধ্য হয়ে ফেলে দিতে হয়েছে। খেত থেকে তুলে বাজারে আনতে যে খরচ হয়, বিক্রি করে তা-ও উঠছে না।
এখনো খেতে প্রচুর টমেটো রয়েছে। তিনি বলেন ‘এভাবে চললে আমরা চাষিরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।’
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলায় ভালো টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে জেলা সদরে টমেটো সরবরাহ করা হয়।
হরতাল-অবরোধের কারণে টমেটো সরবরাহ করতে না পারায় এবং ভাপসা গরমে টমেটোতে পচন ধরছে।
কৃষকেরা টমেটো সস্তা দামে বিক্রি করলেও গাড়ির সংকটের কারণে পাইকারেরা তা বাজারে আনতে পারছেন না।
বাসস্ট্যান্ড এলাকার পাইকার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কম দামে টমেটো কিনলেও অবরোধের কারণে আড়ত পর্যন্ত নিতে গাড়ি পাচ্ছি না। মালিকেরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি বের করতে দিচ্ছেন না। দু-একটি অটোরিকশা পাওয়া গেলেও ভাড়া বেশি চায়।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ জানান, কয়েক বছর আগেও এখানকার মানুষ সাতকানিয়া, পটিয়া, সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা ও নরসিংদীর উৎপাদিত টমেটোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। চলতি মৌসুমে টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে।
তবে হিমাগার অভাবে মজুত করতে না পারায় স্থানীয় চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।