টানা নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

হাটহাজারীর কান্নহাট ঘাটে টানা নৌকায় এভাবে হালদা নদী পার হন স্থানীয় লোকজন l প্রথম আলো
হাটহাজারীর কান্নহাট ঘাটে টানা নৌকায় এভাবে হালদা নদী পার হন স্থানীয় লোকজন l প্রথম আলো

নৌকা আছে, মাঝি নেই। এমনকি বইঠাও নেই। নদীর এপার থেকে ওপারে টানানো রশি টেনে পার হতে হয় যাতায়াতকারীদের। এদিক-ওদিক হলেই পড়তে হবে নদীতে। দুর্ভোগের এখানেই শেষ নয়। কূলে উঠতে হয় কাদামাটি মাড়িয়ে। এভাবে হাটহাজারীর কান্নহাট ঘাটে টানা নৌকায় প্রতিদিন হালদা নদী পার হতে হয় উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মানুষকে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি সেতু স্থাপনের।
স্থানীয় লোকজন জানান, ফটিকছড়ির সমিতিরহাট, জাফতনগর, আবদুল্লাহপুর, হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দ্দন ও রাউজানের নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক লোকের পারাপারের এটিই একমাত্র পথ। শুষ্ক মৌসুমে ঘাট ইজারাদার অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করলে যাতায়াত কিছুটা সহজ হয়। কিন্তু বর্ষায় ওই সাঁকো তুলে নিলে তখন দুর্ভোগ বাড়ে। এ সময় টানা নৌকা একমাত্র ভরসা হয়ে পড়ে।
ফটিকছড়ির সমিতিরহাট গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সেতুটি হলে লোকজনের দুর্ভোগ যেমন কমত, তেমনি উৎপাদিত শাকসবজি বিভিন্ন উপজেলার বাজারে সহজে নিয়ে বিক্রি করা যেত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াতও সহজ হতো।’ রাউজানের নোয়াজিশপুর গ্রামের মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এটি তিন উপজেলার মিলন মোহনা। এখানে সেতু হলে হলদিয়া থেকে হাটহাজারীর-সরকারহাট দিয়ে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করা যাবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের মানুষ ও কয়েকজন শিক্ষার্থী নদীর এপার থেকে ওপার যেতে কাদামাটি মাড়িয়ে জুতা হাতে নিয়ে নৌকায় উঠছে। টানা নৌকায় নদী পার হচ্ছে তারা। আর নৌকা এপার থেকে ওপারে আসতে না আসতেই উভয় পারে ভিড় জমে যাচ্ছে।
ঘাট ইজারাদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘নৌকাটি চালাতে নদীর ওপর একটি রশি বাঁধা থাকে। এতে যাতায়াতকারী নিজেরাই রশি টেনে নৌকায় পারাপার হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এক-দুই টাকা ঘাট চাঁদা নেওয়া হয়। তবে এ জন্য কাউকে জোর করা হয় না।’
ফটিকছড়ির সমিতিরহাট ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, তিন উপজেলার ছয় ইউনিয়নের লোকজন হালদা নদী পার হয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক দিয়ে শহরে যাতায়াত করেন।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীও প্রতিদিন নদী পাড়ি দেয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, কান্নহাট বাজারসংলগ্ন হালদার ওপর একটি সেতু প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ওই এলাকায় সেতু নির্মাণের বিষয়ে আবেদন পেলে তা অবশ্যই প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’