
পাখির নাম কমন সুইফট। প্রতি জুলাইয়ে এরা দল বেঁধে ইউরোপ ছেড়ে পাড়ি জমায় আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে। ফেরে একেবারে পরের জুনে। এই সময়ের মধ্যে ১০ মাস ধরে তারা প্রায় একটানা উড়ে চলে। তারা আফ্রিকায় গেলেও হয়তো সেখানকার মাটিতে একবারও পা রাখে না।
সুইডেনের লান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক সুসান আকেসন বলেন, মাঝারি আকারের এই পাখিরা উড়ন্ত অবস্থায়ই খায়, সঙ্গীর সঙ্গে মেশে এবং যাবতীয় কাজ সেরে নিতে পারে। তারা কোনো গাছের ডালে, বা বাড়ির ছাদে অথবা অন্য কোথাও নামতে পারে, কিন্তু ভূমিতে নয়। কারণ, কমন সুইফটের ডানা অনেক বেশি লম্বা আর পা-জোড়া খুব ছোট। পায়ের আকৃতি এত ছোট বলেই এরা সমতল থেকে উড়াল দিতে পারে না। ফলে পাখিটি প্রকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশচারী প্রাণীগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। দীর্ঘদিন একটানা আকাশে কাটিয়ে দেওয়ার অসাধারণ সামর্থ্যই এদের অনন্যতা দিয়েছে।
সত্যিই কি পাখিগুলো এতটা পথ একটানা উড়তে পারে? সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। পাখিটির এই অদ্ভুত সামর্থ্য সম্পর্কে জানলেও কেউ তা এত দিন নিশ্চিত করতে পারেনি। সুসান আকেসন ও তাঁর স্বামী অ্যান্ডার্স হ্যাডেনস্ট্রম ১৯টি কমন সুইফটের গায়ে ২০১৩ সালে খুব হালকা যন্ত্র জুড়ে দেন। সেগুলো তথ্য সংগ্রাহক যন্ত্র। দুই বছর পর পাখিগুলোকে ধরে তাঁরা পেয়ে গেলেন এদের ওড়ার সময়কার নানা তথ্য। যেমন স্থানীয় আলোর মাত্রার নিয়মিত রেকর্ড। আর তা থেকে জানতে পারলেন, পাখিগুলো কখন কোথায় ছিল। পাশাপাশি এদের ওড়ার গতি, কার্যক্রম এবং শারীরিক অবস্থানের তথ্য ঘেঁটে গবেষক দম্পতি জানতে পারলেন, এরা নির্দিষ্ট সময় উড়ছিল নাকি বিশ্রামে ছিল।
সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বলছে, কিছু পাখি ওই দূর যাত্রাপথে প্রায় কখনোই নিষ্ক্রিয় ছিল না। যেমন: ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একটি পাখি মাত্র চার রাত (ফেব্রুয়ারিতে) বিশ্রামে ছিল। পরের বছর এটি কখনোই কোনো পুরো রাত বিশ্রামে থাকেনি। একই পর্যায়ে পাখিটি মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য থেমেছিল।
অবশ্য সব পাখি যে একই রকম আচরণ করে, তা নয়। কিছু কমন সুইফট প্রায়ই জিরিয়ে নিয়েছিল। গবেষক দম্পতির ধারণা, এদের ডানায় বোধ হয় কোনো সমস্যা ছিল। পুরোনো পাখা পড়ে গিয়ে নতুন পাখা না গজালে তো ঠিকমতো ওড়ায় বিঘ্ন ঘটতেই পারে।