টিপটপ

শুধু একরঙা টিপ দেখা যেত একসময়। এখন পরিবর্তন এসেছে টিপের ধরন ও উপাদানে। অনেকেই বেছে নিচ্ছেন কাঠের বা ধাতব টিপ। টিপ ভালোবাসেন, এমন নারীরা নজর দিচ্ছেন ভিন্ন নকশার টিপেই। এই টিপ দিয়েই হতে পারে টিপটপ সাজ।

একটি জুতসই টিপেই পুরো সাজ পেতে পারে পূর্ণতা। মডেল: তাবিন্দা, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, পোশাক: খুঁত, গয়না ও টিপ: স্বাক্ষর বাই নওরিন
কবির হোসেন

টিপ ছোট্ট, কিন্তু বদলে দিতে পারে পুরো চেহারা—যদি বুঝেশুনে কপালে টিপ পরা যায়। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। স্থান–কাল, পোশাক, কপাল–মুখের গড়ন সবকিছুর সঙ্গেই মিল রেখে বেছে নিতে হবে টিপ।

শুধু একরঙা টিপ দেখা যেত একসময়। তারও আগে সিঁদুরের রঙে রাঙিয়ে নেওয়া হতো ললাট। আর এখন? প্রতিনিয়তই দেখা যাচ্ছে নতুনত্ব। পরিবর্তন এসেছে টিপের ধরন ও উপাদানেও। চিরাচরিত একরঙা টিপের পাশাপাশি অনেকেই বেছে নিচ্ছেন কাঠের বা ধাতব টিপ। আবার সেসব টিপেও থাকছে ভিন্নতা। টিপ ভালোবাসেন, এমন নারীরা নজর দিচ্ছেন ভিন্ন নকশার টিপের ওপরেই।

টিপের নকশায় দেশিয় মোটিফ। টিপ: স্বাক্ষর বাই নওরিন
প্রথম আলো

স্বাক্ষর বাই নওরিনের স্বত্বাধিকারী নওরিন জাহান বললেন, ‘এখন বসন্তকাল। টিপেও তাই আমরা বেছে নিয়েছি হলুদ ও সবুজ রং। ধাতব টিপগুলো রুপালি বা সোনালি রঙের হয়। সেগুলোতে আরও কিছু রং যোগ করে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে।’

টিপ দিয়েই নজর কাড়তে চাইলে বেছে নিতে পারেন ভিন্ন ধরনের আকার। এখন টিয়া পাখি, মাছ, ময়ূরসহ নানা অবয়বের টিপ মেলে বাজারে। পাবেন আঁকা ছবির টিপও। যেখানে ছোট্ট করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হয়তো শৈশবের কোনো চিত্র, বেলুন ওড়ানো শিশু, রবীন্দ্রনাথের অবয়ব কিংবা রাশিচক্রের প্রতীক।

নানা উপাদানে তৈরি হচ্ছে টিপ
প্রথম আলো

টিপ বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই একবার পোশাকের দিকে তাকান। নওরিন বললেন, শাড়ির সঙ্গে সাধারণত একটু বড় টিপই মানায়। পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়েই টিপ পরেন বেশির ভাগ নারী। একান্ত না মিললে কালোই ভরসা। আবার সালোয়ার–কামিজের সঙ্গে ছোট টিপ মানিয়ে যায়।

আর্টোপলিস পেজের উদ্যোক্তা সুমাইয়া সায়েদের কাছে অবশ্য পাবেন পুরোপুরি ভিন্ন উপাদানের টিপ। তাঁর বানানো টিপের প্রধান উপকরণ হলো গোল সাধারণ টিপের ওপর বসানো ফেল্ট ফেব্রিক। এটি ভেড়ার লোম থেকে তৈরি একধরনের উল দিয়ে বানানো হয়। যেটা অনেকটা কাগজের মতো কিন্তু আদতে কাপড়। পরে রং করে সেটা লাগানো হয় টিপে। তিনি কাজ করছেন মেটাল চার্ম নিয়েও। সেটা পলিশ করে টিপের ওপর পেস্ট করা হয়। সুমাইয়া সায়েদ বলেন, সাধারণ টিপ কেটে বিভিন্ন আকার দিয়ে টিপ বানানো তো চলছেই। ফেল্ট ফেব্রিকে রং করে সেই টিপে আনা হয়েছে উৎসবের ছোঁয়া।

একরঙা বা সাদামাটা নয়, এখন নকশা করা চলছে টিপের চল। শাড়ি ও ব্লাউজ: রঙ বাংলাদেশ টিপ: আলতাপালিশ
প্রথম আলো

সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভের রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচিও বলছিলেন একই কথা, ‘বসন্তের ফুলগুলো মাথায় রেখেই আমরা বসন্তের সাজ নির্ধারণ করি। হলুদ, সবুজ আবার কখনো কখনো লাল রং বেছে নিই। টিপটাও তাই বসন্তের ফুলের রঙেই বেছে নিলে এখন ভালো দেখাবে।’

অনেক বদল এসেছে সাজের অনুষঙ্গ টিপের ধরনে। এখন নকশা করা টিপের চল। অনেকে তো হাতে এঁকেও টিপ দিচ্ছেন। আবার পাওয়া যাচ্ছে ধাতব টিপ। বিভিন্ন আকারের ধাতব টিপ আঠা দিয়ে কপালে লাগিয়ে পরা হচ্ছে। জ্যামিতিক নকশাও করছেন অনেকে। টিপের মধ্যে অক্সিডাইজড রঙের ফুল, মাছ, ময়ূর নিয়ে পেস্ট করে বাহারি টিপ তৈরি করা হচ্ছে।

ছোট্ট এসব টিপ, সাজে আনবে পূর্ণতা।
প্রথম আলো

তবে টিপ বেছে নেওয়ার আগে মুখের গড়ন আর পরনের পোশাকের দিকে একবার নজর বুলিয়ে নেওয়ার পরামর্শ শারমিন কচির। তিন আকারের টিপ বেশি দেখা যায়—ডিম্বাকার, গোলাকার ও লম্বাটে। আমাদের দেশে ডিম্বাকার মুখের গড়নই বেশি দেখা যায়। তাই তাতে গোলাকার টিপই বেশি ভালো লাগে। তারপরে অনেকের পছন্দ ডিম্বাকার, তারপরে আসে লম্বাটে টিপ। শাড়িতে গোল টিপই বেশি চলে আর সালোয়ার–কামিজে লম্বা টিপ। পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে বিভিন্ন নকশার লম্বা টিপ বা ত্রিভুজাকৃতির টিপ পরা যায়।

টিপের আঠায় অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যাও দেখা দেয়। তাই ব্যবহারের আগে আঠাটা আলাদা করে দেখে নিতে হবে, সেটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। ব্যস। তারপর নিশ্চিন্তে কপালে বসিয়ে নিলেই হলো। ছোট্ট টিপ সাজে এনে দেবে পূর্ণতা।