
স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন টিপু সুলতান। চেয়েছিলেন ভারতবর্ষ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক। নিজের জীবন দিয়ে স্বাধীনতার বীজ রোপণ করেছিলেন এই ভূখণ্ডের মাটিতে। পরিহাস হলো, স্বাধীন ভারতবর্ষে টিপুর বংশধরদের স্থান হলো বস্তিতে আর দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমালেন বিদেশে।
গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এভাবেই ইতিহাসের সেই দিনগুলো উঠে এসেছিল দর্শকের সামনে। নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের চতুর্থ দিনে ব্রিটিশ শাসনামলের অগ্নিগর্ভ সেই দিনগুলো ফুটিয়ে তুলেছিল ভারতের প্রাচ্য নাট্যদল। চট্টগ্রামে টিপুর স্বপ্ন নাটকের ১৩তম মঞ্চায়ন করল প্রাচ্য। নাট্যকার গিরিশ কার্নাড রচিত এই নাটকের ভাষান্তর করেছেন রতন কুমার দাশ। নির্দেশনা দিয়েছেন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় দু শ বছর আগে টিপু সুলতান স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন, স্বনির্ভর ও মুক্ত এক ভূখণ্ডের। মুক্ত স্বদেশ ছাড়া পৃথিবীর বুকে কোনো মানুষের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করেছিলেন তিনি। তাই মধ্যযুগীয় তন্দ্রা থেকে দেশকে জাগানোর ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ ঠেকাতে আধুনিক সমরাস্ত্রের মজুতও গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন মারাঠা রাজাসহ রাজা-মহারাজারা টিপুর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্ম হননি। ব্যক্তিস্বার্থ ও বিলাসের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল তাঁদের স্বদেশপ্রেম। টিপুর খুব ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত গুলাম আলী খান ও লমির সাদিকের মতো আমির ওমরাহরাও নিজেদের স্বার্থের কাছে বিকিয়ে দিয়েছিলেন দেশকে। যার ফলে অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল টিপুর স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্ন।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয় ভারতবর্ষ। মুক্ত স্বদেশে রাজকীয় বৃত্তি নিয়ে পালিয়ে গেল ষড়যন্ত্রকারীরা। আর কলকাতার ঘিঞ্জি বস্তিতে ঠাঁই হলো টিপুর বংশধরদের। অন্যদিকে টিপুর স্বপ্নের উত্তরসূরি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বংশধরদেরও হলো একই পরিণতি। শত্রু রাষ্ট্রের নাগরিকের মতো আচরণ করা হলো তাঁদের সঙ্গে।
িগরিশ কার্নাডের এই নাটকে টিপু সুলতান শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতাকামী একজন নেতায় পরিণত হন। কেবল মহিশুর নয়, গোটা ভারতবর্ষেরই মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয় দত্ত, সত্যপ্রিয় সরকার, শাঁওলী চট্টোপাধ্যায়, সুমন নন্দী, রিনিতা মজুমদার, আরাধ্য ব্যানার্জি, রিয়া মল্লিক, সুব্রত ভট্টাচার্য, অভিজিৎ দালা, শান্তনু চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। নাটকের প্রদর্শনী শেষে নাটকের নির্দেশক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের প্রদর্শনীতে যেভাবে দর্শকদের সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা মুগ্ধ। এপার-ওপার দুই বাংলাতেই সকলে ভালোবেসেই মঞ্চে কাজ করেন। এভাবে দর্শকেরা পাশে থাকলে নাট্যকর্মীদের কাজ করার উৎসাহ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’