নিয়তিই আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে

ডিজাইনার গ্রেস মুনছবি: সুমন ইউসুফ

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিস ফ্যাশন উইকে সেরা ডিজাইনার হওয়ার পরপরই গ্রেস মুন বাংলাদেশে আসেন। তাঁর এ সিদ্ধান্ত সবার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। অথচ তিনি এসেছিলেন। আর ভালোবেসেছিলেন বলেই ফিরে এসেছেন। ঢাকায় ‍উপস্থাপন করেছেন তাঁর সংগ্রহ।

শুরু করা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গ দিয়ে। গেল বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ফেস অব এশিয়ার বিচারক হিসেবে এলেন বাংলাদেশে। তার আগে কতটুকু জানা ছিল এই দেশ সম্পর্কে?

গ্রেস মুন: তৈরি পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি আছে। এখানে অনেক ভালো মানের পোশাক তৈরি হয়। এটুকুই জানতাম।

প্যারিস ফ্যাশন উইকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর আপনার বাংলাদেশে আসার বিষয়টিকে সবাই কীভাবে নিয়েছিল?

মুন: আসলে কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি। বিশেষত প্যারিসের সাফল্যের পর সবারই নানা পরিকল্পনা থাকে। তার ওপর তখন মহামারি শুরু হয়ে গেছে। ফলে সবাই চিন্তিত ছিল। কিন্তু আমি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাইনি।

গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শোতে গ্রেস মুনের নকশা করা পোশাক পর হাঁটছেন এক মডেল
ছবি: খালেদ সরকার

কিন্তু কেন আবার ফিরে আসা? এবার কি বাধা আসেনি মহামারির জন্য?

মুন: বাধা নয়, অনেকে এবারও চিন্তিত হয়েছেন। কিন্তু ওই যে বললাম আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকি। তবে বলতে পারি নিয়তিই আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।

কতটুকুই দেখা কিংবা জানা হলো এখানকার ফ্যাশনশিল্প সম্পর্কে?

মুন: প্রথমবার আমার সফর ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। সে সময় যতটুকু পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি, তাতে আমার মনে হয়েছে এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এবার বেশ খানিকটা সময় থাকার সুযোগ হয়েছে। আমি দোকানগুলোতে গেছি। কাজ দেখেছি। কাপড় অনেকটা কোরীয়দের মতো। রং মজার। তবে সত্যি বলতে কি, অনেক কিছু দেখে ওঠা হয়নি।

কী ভাবছেন বাংলাদেশ নিয়ে। নতুন কোনো পরিকল্পনা? কোনো কোলাবরেশন?

মুন: আমি ট্র্যাডিশনাল কাস্টম ডিজাইনার নই। বরং আমি ওয়েস্টার্ন কমার্শিয়াল ডিজাইনার। তা সত্ত্বেও বলতে পারি, শাড়ি আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই পোশাক নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে হতেও পারে।

গ্রেস মুনের নকশা করা পোশাক
ছবি: খালেদ সরকার

মহামারি ফ্যাশনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কী শিক্ষা দিয়ে গেল?

মুন: যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা। এটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় শিক্ষা। কারণ, এর আগে তো আমরা এভাবে ভাবতে পারতাম না।

এই সময়ে ফ্যাশন প্রদর্শনী বা ফ্যাশন উইকের নানা ধরন দেখলাম। ফিজিক্যাল, ডিজিটাল আবার দুটো মিলিয়ে ‘ফিজিটাল’ শোও হয়েছে। কোনটার পক্ষে আপনি?

মুন: ফিজিক্যাল। কারণ, আমরা এই মহামারির কারণে মানুষের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। দেখা হওয়া, কথা বলা, স্পর্শ এসবের ভীষণ গুরুত্ব রয়েছে। এ জন্যই আমি ফিজিক্যালের পক্ষে।

সময়ের দাবি হলো পুনর্ব্যবহার, টেকসই পণ্য তৈরি। আপনার কাজে এর প্রতিফলন কতটুকু?

মুন: আমি এরই মধ্যে রিসাইকেলড কাপড় নিয়ে কাজ করেছি। প্লাস্টিক থেকে একটি প্রতিষ্ঠান সুতা তৈরি করছে। আমি তাদের সঙ্গেও কাজ করছি।

১৮ বছরের একটা মেয়ে নিজের জগৎ ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে যাচ্ছে পড়তে। ভয় লাগেনি? আর কেনই–বা ফ্যাশন ডিজাইনে পড়তে যাওয়া?

মুন: আমি তো ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। কারণ, আমি ইংরেজি জানলেও ভালো বলতে পারতাম না। এখানে তো ছেলেমেয়েরা বেশ ভালো ইংরেজি বলে। আর ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছি আইকন হতে। যেটা আমার সময়ে ছিল না। কোরিয়ায় না হলেও নয়, আমেরিকা এবং ইউরোপে এশিয়ান-আমেরিকানরা আমাকে অনুসরণ করে।

আপনার কি কোনো আইকন আছে?

মুন: কোকো শ্যানেল আমার চিরকালের আইকন। নানাভাবেই তিনি আমাকে প্রভাবিত করেন, প্রাণিত করেন।

নতুনদের জন্য কোনো বার্তা?

মুন: কোনো সহজ পথ নেই সাফল্যের। নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙতে হবে। আবার গড়তে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সম্ভাবনা থাকলে হবে না; বরং তাকে সাফল্যে রূপান্তর করতে পারে কজনা? সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগোতে হবে।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মুন: ধন্যবাদ আপনাকেও।