ডিম রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়

ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, তাতে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থাকে। এত দিনের এ ধারণা আসলে সত্যি নয়। ডিম খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ততটা বৃদ্ধি পায় না। একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষ দৈনিক গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারে। আর একটি ডিমে রয়েছে মাত্র ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। সবচেয়ে বড় কথা, রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয় ডিম। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখে, ভালো রাখে চোখ ও হাড় ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।

 যেকোনো ব্যক্তি ডিমের সাদা অংশ খেলে কোনো সমস্যা তো হবেই না, এমনকি কুসুমসহ সম্পূর্ণ ডিম খেলেও উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থাকে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে একটি ডিম হার্টের জন্য ক্ষতিকর নয়। সকালের নাশতায় একটি ডিম কোলেস্টেরল প্রোফাইলের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না, যতটা প্রভাব ফেলে সকালের নাশতায় মিষ্টি বা চর্বি–জাতীয় খাবার থাকলে।

ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, রিবোফ্লোবিন, ফলেট ও ভিটামিন ডি রয়েছে, তা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেয়। এমনকি অনেক দিন সংরক্ষিত বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার চেয়ে ডিম ভালো বিকল্প খাদ্য হতে পারে।

অনেকে সাদা বা লালচে ডিম খাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। আসলে সব ধরনের ডিমের পুষ্টিগুণ একই রকম। তরুণেরা এবং যাঁরা বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁরা নিয়মিত ডিম খেতে পারেন। এমনকি বয়স্ক ব্যক্তিরা সপ্তাহে কয়েকটি ডিম খেতে পারবেন। আর যাঁরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, তাঁদের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত।

ডিমের পুষ্টিগুণ: ডিমে প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি২, টোটাল ফ্যাট, ওমোগ-৩ ফ্যাটস, ভিটামিন এ ডি ই ও কে, ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন বি৫, বি৬, বি১২; ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি১, বায়োটিন, সোলিনিয়াম প্রভৃতি রয়েছে।

এর মধ্যে আয়রন মানব কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে ও রক্তশূন্যতা দূর করে। ডিমে বিদ্যমান আয়রন সহজে হজম হয়। ভিটামিন এ ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী ও বৃদ্ধি করে দৃষ্টিশক্তি। ভিটামিন ডি হাড় এবং দাঁতের জন্য উপকারী। ভিটামিন ই একধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন বি১২ হার্টকে ভালো রাখে। ফলে নতুন কোষ তৈরি ও রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং গর্ভবতী মায়েদের গর্ভপাতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। প্রোটিন পেশি, অঙ্গ, ত্বক, চুল এবং বিভিন্ন টিসু্যর জন্য প্রোটিন হরমোন, এনজাইম এবং অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে।

সতর্কতা: কেউ কেউ কাঁচা ডিম খেতে পছন্দ করেন, এমনকি কাঁচা ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি বলে মনে করেন। এ ধারণাটাও সত্যি নয়। বরং কাঁচা ডিম খেলে সালমোনেলা–জাতীয় ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিডনি অকেজো বা রেনাল ফেইলরের রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন। কারণ, কিডনি ফেইলরে প্রোটিন কম খাওয়া উচিত। তবে কারও কারও বেলায় ডিম খেলে অ্যালার্জি–জাতীয় সমস্যা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল