ডিয়ার জন
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এতে বোঝাই যাচ্ছে, চাইলেই যে কেউ যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। হলিউডের বিখ্যাত ছবি ডিয়ার জন-এও নায়ক-নায়িকার মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান হয়। সেই ছবি দেখেই বোধ হয় জন কেরির হঠাৎ চিঠি পাঠানোর ইচ্ছা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও কেরির কাছে চিঠি লিখলে কেমন হতো, সেটাই ভাবার চেষ্টা করেছেন আদনান মুকিত

এরশাদের চিঠি
ডিয়ার জন,
আমি অত্যন্ত মর্মাহত, গভীরভাবে শোকাহত মন নিয়ে পত্র লিখছি। আমি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ ১০ বছর আমি ক্ষমতায় ছিলাম, মানুষের সেবা করেছি। আজকে যে বাংলাদেশ আপনারা দেখছেন, এর অনেক উন্নয়নই আমার হাতে গড়া। ঢাকাকে ঘিরে বেড়িবাঁধ করার উদ্যোগ আমি নিয়েছিলাম। যাই হোক, কথা হচ্ছে, দেশের চলমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আপনি শুধু দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার জন্য চিঠি দিলেন, অথচ আমি কোনো চিঠি পেলাম না। আমাকে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনি হয়তো জানেন না, আমি চিঠি পেতে খুব পছন্দ করি। ইন দ্য ইয়ার নাইনটিন এইটি...যখন আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম, অনেক তরুণী আমাকে চিঠি লিখত। যাই হোক, দুই নেত্রীর চক্র থেকে আমাদের বেরোতে হবে। আমি এখনো মনে করি, কোথাও ভুল হয়েছে। নইলে আমার কাছে আপনার চিঠি না আসার তো কোনো কারণই নেই। ভবিষ্যতে অবশ্যই আমাকে চিঠি পাঠাবেন। ধন্যবাদ।
ইতি
হু মু এরশাদ
সাবেক রাষ্ট্রপতি
অনন্ত জলিলের চিঠি
ডিয়ার জন,

ইউ সি, দ্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ ডেভেলাপ। নাউ, হলিউড মুভির মতো বাংলা ছবিতে স্পেশাল ইফেক্ট আছে, অ্যাকশন আছে। একটান দিয়ে হার্ট বের করার দৃশ্য হলিউডের কোনো মুভি এখনো দেখাতে পারেনি। নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আমি তা করে দেখিয়েছি। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন হলিউডের মুভির চেয়ে বাংলা মুভি বেশি জনপ্রিয় হবে। সেই ভয়েই হয়তো আপনি দুই নেত্রীর কাছে চিঠি রাইট করে থাকতে পারেন। আই ডোন্ট কেয়ার। আই অনন্ত জলিল, বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করব। বাংলা ছবি বিদেশে এক্সপোর্ট করব। আপনি ফরেন মিনিস্টার। আপনাকে তখন আমার প্রয়োজন হতে পারে। আসুন না, দুই দেশের চলচ্চিত্রকে আরও উন্নত করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। রিমেম্বার, অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ!
ইতি
অনন্ত জলিল
অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক
জনৈক শিক্ষকের চিঠি
ডিয়ার জন,
আপনি আমেরিকার মতো উন্নত একটা দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন। অত্যন্ত চমৎকার ব্যাপার। একটি চিঠির কপি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। চিঠিতে আমি কিছু গ্রামাটিক্যাল এবং স্পেলিং মিসটেক লক্ষ করেছি। দিস ইজ নট ফেয়ার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে পড়ালেখাকে ভুলে গেলে চলবে না। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ট্রান্সলেশন করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০টা নতুন শব্দ অর্থসহ মুখস্থ করতে হবে। এতে ভোকাবুলারি সমৃদ্ধ হবে। আমি নিশ্চিত, কাজের চাপে আপনি এসবের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন না। কিন্তু দিতে তো হবে, নাকি? দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে বানান ভুল বা স্পেলিং মিসটেক থাকাটা শোভনীয় নয়। এ বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। আর আমেরিকায় যদি শিক্ষকদের জন্য কোনো সুযোগ থাকে...একটু দেখবেন। শুনেছি, ওখানকার ছেলেমেয়েরা হোয়াটস আপ, ওয়ানা বি, গনা বি, ব্রো—এই টাইপের ভুল ইংলিশ বলে। আমাকে সুযোগ দিলে থাপড়ায়ে ওদের ইংলিশ ঠিক করে দিতাম। আমি ইংরেজিতে এমএ। একটু ভেবে দেখবেন। বিদায়।
ইতি
কাদের আলী
সিনিয়র শিক্ষক (বিএ অনার্স, এমএ ইংরেজি)

জনৈক ভাষাবিদের চিঠি
ডিয়ার জন,
আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, আপনি দুই নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ইংরেজিতে! কী অদ্ভুত। আপনি একটি উন্নত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ন্যূনতম ভদ্রতা আপনার থাকা উচিত ছিল। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের দেশের নেতারা আপনাদের কাছে এ পর্যন্ত যত চিঠি পাঠিয়েছেন, সবই লেখা হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। আপনাদের ভাষার প্রতি সম্মান দেওয়ার জন্যই আমাদের নেতারা ইংরেজিতে চিঠি লিখেছেন। অথচ, আপনি আমাদের নেতাদের কাছে বাংলায় চিঠি না লিখে লিখেছেন ইংরেজিতে। কোনো মানে হয়? বাংলা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা। পরবর্তী সময়ে চিঠি পাঠালে অবশ্যই বাংলায় পাঠাবেন। ধন্যবাদ।
আ খ ম মইদুল
ভাষাবিদ