
বাসায় বা নামীদামি রেস্তোরাঁয় চা-পানের নানা আয়োজন আছে। এক কাপ চায়ে তিন-চার শ টাকাও খরচ হয় অনেক রেস্তোরাঁয়। কিন্তু পথের ধারে দাঁড়িয়ে এক কাপ চায়ের স্বাদ মুখে লেগে থাকতে পারে অনেক দিন। ঢাকার রাস্তায় এমন চায়ের আয়োজন আছে অনেক এলাকায়। ৫, ১০ বা ৩০ টাকার এই চায়ের স্বাদ বারবার আপনাকে সেখানে টেনে নিয়ে যেতে পারে।
দুধসহ বা দুধ ছাড়া চায়ের পাশাপাশি নানা ধরনের নিরীক্ষা করা হয়েছে এসব দোকানে। স্বাদে নতুন, তাই দ্রুত জনপ্রিয়তাও পেয়েছে সেগুলো। এর মধ্যে আছে মাল্টা চা, মালটোভা চা, বাদাম বা, মরিচ চা, টক-মিষ্টি-ঝাল চা, লেবু চা, গুড়ের চা, মধু চা, স্ট্রবেরি চাসহ নানা কিছু। নতুন উপাদান ব্যবহার করে বা চা তৈরির আলাদা কৌশল কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব চা।

ঘন দুধের মালাই চা
পুরানা পল্টনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে যে পদচারী-সেতুর সিঁড়ির নিচে এই দোকান। বিরামহীনভাবে এখানে ঘন দুধের চা বানান মনির হোসেন। ১৫-১৬ বছরের পুরোনো এই দোকানের মালিকানা কয়েক দফা পরিবর্তন হলেও স্বাদ আছে প্রায় অভিন্ন। বড় পাত্রে জ্বাল দেওয়া দুধের সঙ্গে চিনি মেশানো লিকার ঢেলে চামচ চালিয়ে তৈরি হয় এই দুধ চা। চা বানানোর পর ওপরে খানিকটা মোটা দুধের সর চেয়ে নিলেই হবে। ছুটির দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা আর অন্য দিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এখানে চা পাবেন। দাম প্রতি কাপ ১০ টাকা।

গরুর দুধের চা
মতিঝিলের অ্যালিকো অফিসের গলি দিয়ে কয়েক শ গজ সামনে এলেই দেখবেন কয়েকটি চায়ের দোকান। এখানে যে কয়টা দোকানে গরুর দুধের চা বানানো হয় তার সব কয়টা একই স্বাদের। তাই জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ুন একটায়। এক চামচ চিনি দিলেই চলবে। মিষ্টি বেশি খেলে বাড়িয়ে দিতে বলতে পারেন। দাম ৮-১০ টাকা। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবেন এই চা।

আদা-লেবু, তেঁতুল-মরিচের চা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়ে পাবেন নানা স্বাদের চা। ৩৪ বছর ধরে এখানে চা বানাচ্ছেন আবদুল জলিল মিয়া। সবার কাছে যাঁর পরিচিতি ‘স্বপন মামা’ নামে। তাঁর হাতের আদা-লেবুর চা সবাই পছন্দ করেন। আজকাল বানাচ্ছেন আরও নানা স্বাদের চা। এখানে কাঁচা মরিচ দিয়ে তৈরি চা বেশি পছন্দ করেন নতুন শিক্ষার্থীরা। লিকার, তেঁতুলের ক্বাথ আর অল্প চিনির সঙ্গে কুচি করে কাটা কাঁচা মরিচ দিয়ে তৈরি হয় মরিচ চা। টিএসসির এই চায়ে একবার চুমুক দিয়ে দেখতে পারেন।

এখানে বাদামবাটা, মাল্টা, গুড়ের চা খেলেও নতুন স্বাদ পাবেন। স্বপন মামা ছাড়াও টিএসসিতে কণার দোকানে পাবেন নানা স্বাদের চা। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টিএসসিতে চা খেতে আসতে পারেন। এখানে আদা চা ৬ টাকা, মাল্টা চা, মরিচ চা ও গুড়ের চা পাবেন ১০ টাকা। এ ছাড়া বাদামের চা পাবেন ১২ টাকায়।

কড়া মিষ্টির চা
ধানমন্ডির ৮ নম্বর ব্রিজ থেকে ৭ নম্বর সড়কে ঢোকার মুখে ১৫ থেকে ২০ হাত সামনে গেলেই লেকের বেড়ার মধ্যে পেয়ে যাবেন রহিম মিয়াকে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে চা বানান রহিম। যাঁরা বেশি মিষ্টি দিয়ে চা খেতে ভালোবাসেন তাঁরা এখানের দুধ চায়ের স্বাদ নিতে পারেন। তবে আরও ভিন্নতা আনবে এলাচ যোগ করে দিতে বললে। রহিম মিয়া বললেন, ‘ঈদের ছুটির পর এখনো দোকান জমেনি (ভিড় বাড়েনি)। দোকান জমলেই কয়েক দিনের মধ্যে কড়া মিষ্টির এলাচ চা আবার বানানো শুরু করব।’ এখানে রং চা, দুধ চা ও এলাচের কড়া মিষ্টি চা প্রতি কাপ ১০ টাকা।

আলমের গরম চা
এলিফ্যান্ট রোডে অ্যারোপ্লেন মসজিদের সঙ্গে লাগোয়া গলির মুখে চা বানান আলম। ফুটন্ত পানিতে চা পাতা ঢেলে কনডেন্সড মিল্ক আর চিনি দিয়ে মো. আলম চা তৈরি করেন। এখানে তাঁর মূল ক্রেতা আশপাশের দোকানিরা। তবে তাঁদের জন্য তৈরি চা গড়পড়তা স্বাদের। আলমের হাতের ভালো চা খেতে চাইলে এমন সময়ে যেতে হবে যখন ভিড় কম। ১৪ বছর ধরে এই এলাকায় চা বানাচ্ছেন আলম। পুলিশ তাড়া দিলে তাঁর দোকান একই জায়গায় না-ও থাকতে পারে। তবে আশপাশে খুঁজলেই তাঁকে পেয়ে যাবেন। সাধারণত তাঁর চায়ের দাম ৬ টাকা, তবে বিশেষভাবে তৈরি করলে অনেকে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দেন।

এলাচ চা
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের পাশে একটি ছোট পারিবারিক কবরস্থান চোখে পড়বে। তার পাশেই ফুটপাতে চা বিক্রি করেন একজন নারী (নাম প্রকাশ করতে চাননি)। মাঝে মাঝে তাঁর স্বামীও দোকানে বসেন। এই চায়ের বিশেষত্ব হলো এলাচের স্বাদ। এলাচ গুঁড়া দিয়ে ফুটানো দুধে কড়া লিকার মিশিয়ে চা বানান তিনি। স্বাদ ও গন্ধ দুটোই ভালো। ক্রেতাও থাকে সারাক্ষণ। মাঝেমধ্যে পুলিশ দোকান তুলে দিলে, বাসা থেকে চা তৈরি করে ফ্ল্যাস্কে ভরে বিক্রি করেন। সাধারণত বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে চা পাওয়া যায়।

তরল দুধের চা
মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি কাঁচা বাজারের মধ্যেই চা বানান জুয়েল। ২০০২ সাল থেকে এই এলাকায় চা বিক্রি করছেন জুয়েল। বাজারে থাকা তরল দুধ জ্বাল দিয়ে চা বানান জুয়েল। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জুয়েলের চা পাওয়া যাবে। যাঁরা চিনি বাদে চায়ে অন্য কিছু খান না, তাঁরা জুয়েলের রং চা চেখে দেখতে পারেন। এখানে দুধ চা ১০ টাকা আর রং চা খেতে লাগবে ৫ টাকা।
বিট লবণ মাল্টা চা
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রাস্তার শুরুতেই আলতাফ হোসেনের চায়ের দোকান। তাঁর দোকানে শীত মৌসুমে খেজুরের গুড়ের চায়ের জন্য থাকে অনেক ভিড়। তবে এই সময় ভালো গুড় পাওয়া যায় না বলে সেটা বন্ধ রেখেছেন আপাতত। এখন সেখানে মিলবে মাল্টা চা। মাল্টার রস আর বিট লবণ দিয়ে তৈরি এই চা খেতে বিকেলের পর ভিড় বাড়ে। বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চা বানান আলতাফ। তাঁর পাশেই আরেকটি চায়ের দোকান আছে, একই ধরনের চা বানায় সেই দোকানেও। স্বাদ কাছাকাছি। প্রতি কাপ বিট লবণে তৈরি মাল্টা চায়ের দাম ১০ টাকা।

লেবুর ঠান্ডা চা
মিরপুর ২ নম্বর এলাকার নাসিমবাগ বড় রাস্তার পাশেই দোকান টি ট্রি। ফুটপাতেই অনেক বছর ধরে চলছে নাসিমার এই চায়ের দোকান। এখন চা বানান খানিকটা দোকান করেই। ভেতরে ৫-৬ জনের বসার ব্যবস্থাও রয়েছে। দোকানের সামনের ফুটপাতে তাই বিকেলের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। লোকজন দাঁড়িয়ে থেকে আড্ডা দিতে দিতে এখানে চা খায়। এই দোকানে প্রায় ২০ রকমের চা পাওয়া যায়। তবে বেশি জনপ্রিয় আইস লেমন টি। লেবুর রসের সঙ্গে বরফ কুচি আর লিকার দিয়ে এই চা পরিবেশন করা হয়। এখানের মধু চা, গুড় চা, মাল্টা চাসহ নানা ধরনের চা আছে। ১০, ১৫, ২০ ও ৩০ টাকায় চা পাবেন এখানে। এখানে আইস লেমন টি পাবেন ৩০ টাকায়।
ওপরের সবগুলো দোকানই এখন চালু আছে। তবে যেহেতু ফুটপাতের দোকান, তাই ‘এই আছে এই নাই’ ধারণা রেখেই যেতে হবে।