তালাক দিতে হয় সঠিকভাবে

তানজিম আল ইসলাম

যেকোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তবে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে হলে আইন অনুযায়ী কিছু পদ্ধতি মানতে হবে। বিশেষ করে তালাকের নোটিশ পাঠানোর বেলায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব নিয়ম যথাযথ না মানলে তালাক কার্যকরে জটিলতা সৃষ্টি হবে। তালাকের নোটিশ কার্যকরে যথাযথ পদ্ধতি না মানলে আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। তবে স্ত্রীর বেলায় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে যদি তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া থাকে, সে ক্ষেত্রে সরাসরি তালাক প্রদান করতে পারবেন। যদি এ ক্ষমতা স্ত্রীকে দেওয়া না থাকে, তাহলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হবে।

 তালাকের নোটিশ দেওয়ার পদ্ধতি

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, যেভাবেই বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক ঘটুক না কেন, যে পক্ষ তালাক দিতে চাইবে, সে পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপর পক্ষের ঠিকানা-সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে নোটিশ লিখিতভাবে পাঠাবে। ওই নোটিশের কপি অপর পক্ষের কাছেও পাঠাতে হবে। তবে আদালতের মাধ্যমে কোনো তালাকের ডিক্রি হলে সে ডিক্রির কপি চেয়ারম্যানকে প্রদান করলেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তালাকের নোটিশ উপযুক্ত সাক্ষীর উপস্থিতিতে কাজির মাধ্যমে পূরণ করে পাঠানো উচিত। এতে আইনগত জটিলতা তৈরি হবে না।

 তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব

যে পক্ষ থেকেই তালাকের নোটিশ দেওয়া হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। সালিসি পরিষদ উভয় পক্ষকে লিখিত নোটিশ পাঠিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবেন। প্রথম নোটিশে কোনো পক্ষ হাজির না হলে পরবর্তী দুই মাসে আরও দুটি নোটিশ পাঠাবেন। সমঝোতার চেষ্টা সফলও হতে পারে, ব্যর্থও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাজ হলো আপসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে না সফল, তা লিপিবদ্ধ করা।

 তালাকের নোটিশ না দেওয়ার সাজা

তালাকের ক্ষেত্রে আইনে প্রদত্ত নিয়ম পালন না করলে এক বছর পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড কিংবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

নোটিশ দেওয়ার পর পুনরায় সংসার

যে পক্ষ থেকেই নোটিশ দেওয়া হোক না কেন, সংশ্লি­ষ্ট সালিিস পরিষদের চেয়ারম্যান নোটিশ পাওয়ার পর উভয় পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে আপসের চেষ্টা করবেন। উভয় পক্ষের মধ্যে আপস হয়ে গেলে তালাকের নোটিশের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না এবং তাঁরা পুনরায় সংসার করতে পারবেন।

 তালাকের কার্যকারিতা

চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সে দিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিিস পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।

 তালাক নিবন্ধন

যে পক্ষই তালাক প্রদান করুক না কেন, তালাক কার্যকরের পর তালাকটি যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক।

কোনো কারণে তালাক নিবন্ধন অস্বীকার করলে ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করার বিধান আছে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট