তিতকুটে এক মধুর গল্প

.
.

বুকভরা সবার ভালোবাসা থাকে। তার বুকভরা জমে আছে কাশি। কাশতে কাশতে তার জীবন যায় যায় অবস্থা। দু-চারটা সিরাপ শেষ করেও কাশি যখন ভালো হলো না, তখন সে যক্ষ্মা হাসপাতালের শরণাপন্ন হলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার ধমক দিয়ে বললেন, ‘যক্ষ্মা না, ছাই! শীতের দিনে হিরো সাজতে টি–শার্ট পরে ঘুরে বেড়ালে তো ঠান্ডা লাগবেই। গরম কাপড় পরবে। আর এই ওষুধ দিনে দুই বেলা দুই চামচ করে খাবে। আর অযথা হাসপাতালে ভিড় করবে না।’
ট্রাংকের একেবারে তলানির দিকে থাকা কয়েক বছরের পুরোনো জ্যাকেটটা বের করে পরা শুরু করল সে। ডাক্তারের দেওয়া সিরাপও নিয়মমাফিক খেতে লাগল। কিন্তু কাশি তার কমল না।
অবস্থা দেখে গুণীজনেরা পরামর্শ দিলেন, ‘মধু খাও। কুসুম গরম পানিতে এক চা–চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খাবা। ঠান্ডা-কাশি সব দৌড়ে পালাবে।’
বাধ্য ছেলের মতো সে গেল মধু কিনতে। দোকানিকে বলল, ‘এক কেজি মধু দেন তো! ভালোটা দিয়েন।’ দোকানি মধু দিল। সে মধু হাতে নিয়ে দাম দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কত?’
‘ছয় শ নব্বই টাকা।’
মধুর দাম সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। দোকানির মুখে টাকার অঙ্ক শুনে তার হাত থেকে মধুর বোতল পড়ে যায় যায় অবস্থা। কোনোরকমে সামলে সে মধু ফেরত দিয়ে চলে এল। ব্যাচেলর মেসে থাকে সে। মিল পদ্ধতিতে খাবার খায়। ছয় শ নব্বই টাকা তার প্রায় পনেরো দিনের খাবার খরচ। এক মধু কিনতে গিয়ে পনেরো দিন না খেয়ে থাকার মানে হয় না। সে ভাবল, এর চেয়ে প্রেয়সীর ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলেই হবে। কোনো এক কবির কবিতায় যেন পড়েছিল, প্রেয়সীর ঠোঁটের স্পর্শ নাকি মধুর চেয়েও মিষ্টি!
প্রস্তাবটা প্রেয়সীর কানে তুলতেই তার সুইট-কিউট প্রেয়সী মুহূর্তের মধ্যেই তেলে–বেগুনে জ্বলে উঠল। বলল, ‘তুমি ভেবেছটা কী? অসভ্য ছেলে, তুমি সমাজসংস্কার না মানা বাউণ্ডুলে হতে পারো, আমার তো সমাজ আছে, নাকি...?’
মধুর চেয়েও মিষ্টি ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার বদলে আগুনের চেয়েও উত্তপ্ত বাক্য শুনে তার মনে পড়ল সেই চিরায়ত বাণী, ‘এই অদ্ভুত সমাজে প্রকাশ্যে মূত্র বিসর্জন করা বৈধ, অথচ প্রিয় মানুষকে চুমু খাওয়া নিষিদ্ধ!’
হতাশ হয়ে সে আবার দোকানে ফিরে গেল। বিয়ে করতে আজকাল যে খরচ, তা দিয়ে কয়েক হাজার কেজি মধু কেনা যাবে। তা ছাড়া প্রেয়সীর চুমু পাওয়ার অধিকার নেই যে প্রেমিকের, তার না খেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। ছয় শ নব্বই টাকা দিয়ে এক কেজি মধু কিনে সে মেসে ফিরল। চুলায় পানি গরম করতে দিয়ে মধুর বোতলের মুখ খুলল। বহুদিন মধু খাওয়া হয় না। স্বাদটা কেমন দেখতে এক চামচ মধু মুখে পুরল সে। একি! মধু কোথায়, এ তো চিনির রস! নামী ব্র্যান্ডের সুদৃশ্য বোতলে চিনি আর কেমিক্যালের সঙ্গে সামান্য মধুও আছে বৈকি, তবে সেটাও শুধুই ফ্লেভার কি না, তা অবশ্য সে বুঝতে পারল না।
অতঃপর ভেজাল মধু খেতে খেতেই সে কাশতে লাগল। কাশতে কাশতে তার জীবন যায় যায় অবস্থা।