তিনি শিক্ষক, তিনিই বন্ধু

আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার—বন্ধু দিবস। স্বপ্ন নিয়ের আহ্বানে পাঠকেরা লিখে পাঠিয়েছেন তাঁদের সেই সব বন্ধুর কথা, যাঁরা দুঃসময়ে বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত।

শিক্ষকের সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত আসে, যখন বেঁচে থাকার আশাটাই ক্ষীণ হয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা, পরিবারের সঙ্গে মনোমালিন্য বাড়তে থাকে। হতাশা ও বিষণ্নতায় মনে চলে আসে আত্মঘাতী নানা চিন্তাভাবনা। আমার জীবনের এ রকম খারাপ একটা সময়ে পাশে পেয়েছিলাম একজন শিক্ষককে। তিনি মাশিয়াত ম্যাম।

গত বছর বাড়ি চলে আসার পর টানা কয়েক মাস চার দেয়ালে বন্দী থেকে মানসিকভাবে এত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়ে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ ও নার্ভ ঠান্ডা রাখার ওষুধ খেতে হয়েছে। তারপর ডিসেম্বরে যখন ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলাম, ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব, কিংবা ঢাকায় কোথাও থেকে যাব। কোনোভাবেই আর বাসায় ফিরব না। ভোরবেলা ক্যাম্পাসে গিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একা একা বসে খুব কেঁদেছিলাম। মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে থাকার মতো যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি।

তখন হঠাৎ মুঠোফোনে তাঁর কল পেয়ে জীবনের গতিপথটাই যেন পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি আমাকে বুঝিয়েছিলেন, ‘এই মৃত্যুর মিছিলে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ ভুলেই গিয়েছিলাম কী করে হাসতে হয়। সেই শিক্ষকই আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার মতো সুন্দর করে কয়জন মানুষ হাসতে পারে? এই হাসি কখনো হারিয়ে ফেলা যাবে না।’ ঠিক সেদিন থেকেই হয়তো আমি আবারও হাসতে শুরু করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও সব সময় তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অকপটে বলতে পেরেছি নিজের ব্যক্তিগত কত কথা। ক্লাসে পেছনের সারির স্টুডেন্ট হওয়ার পরও কঠিন কাজগুলোতে অভয় দিয়েছেন তিনি, বলেছেন—তুমি পারবে। সমাবর্তনের দিন বলেছেন, ‘তুমি অনেক ভালো কিছু করবে। একটু সময় লাগলেও নিশ্চয়ই তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’

এই কথাগুলোর জন্যই এখনো স্বপ্ন দেখতে পারি। কখনো হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে, চোখ বন্ধ করে দেখতে পাই কেউ হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে উঠে দাঁড়ানোর জন্য। ভালোবেসে পরম মমতায় বলছে, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে লিজা, একটু ধৈর্য ধরো। প্রস্তুতি নিতে থাকো, আর কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবে। আমি পাশে আছি তো!’

লেখা পাঠাতে হলে যোগাযোগ করতে পারেন স্বপ্ন নিয়ের ফেসবুক পেজে