প্রার্থী তোমার নাম কী?
মার্কায় পরিচয়।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রার্থীর নাম ছাপিয়ে এই মার্কা কিংবা প্রতীকই প্রধান হয়ে উঠছে। তো এসব মার্কার সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই আছে। অসুবিধা নিয়ে প্রার্থীরা বিড়ম্বনায় আছেন, আবার সুবিধাগুলো তাঁরা প্রচারণার কাজে লাগাচ্ছেন। এখন চায়ের দোকানে, নির্বাচনী ক্যাম্পে, এমনকি ঘরে ঘরে মার্কা নিয়ে গালগল্পের শেষ নেই। প্রার্থীর চেয়ে তাঁদের মার্কার গুণাগুণ কিংবা দোষত্রুটিই বেশি উঠে আসছে মানুষের মুখে।

সদ্য বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের মার্কা কমলালেবু। রসে ভরা এই ফলের সুবিধা নিচ্ছেন তিনি। তাঁর সমর্থকেরা কমলার গুণগান গাইছেন। আর বলছেন, এই শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তায় কমলার দেখা মেলে। ফলের দোকান কোথায় নেই? সেখানে থরে থরে সুন্দর করে সাজানো কমলা। তা দেখলেই প্রার্থীর কথা মনে পড়বে ভোটারদের। আর যাঁরা কমলার সমর্থক নন, তাঁদের কথা অন্য রকম। থরে থরে সাজিয়ে রাখা কমলালেবুর মধ্যে বিষ। ফরমালিন মেশানো। কমলালেবুর বড় অসুবিধা হয়ে গেল সাদাকালো পোস্টারে। দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারগুলোয় দূর থেকে কমলালেবু, নাকি টেনিস বল, সেটি ভালো করে বোঝা যায় না।
এদিক দিয়ে সুবিধা পাচ্ছেন হাতি মার্কার প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। হাতি এমনিতেই কালো। তাই সাদাকালো পোস্টারে শুঁড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা হাতির ছবিটি বহুদূর থেকেও বোঝা যায়। কিন্তু হাতি তো আর কমলালেবুর মতো শহরের সবখানে সুলভ নয়। সেদিক থেকে শুধু হাতির ছবি দেখিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন তাঁর সমর্থকেরা। এই জন্য তাঁর সমর্থকেরা কেউ কেউ বলছেন, লাখ টাকার হাতি কি আর ওই কমলালেবুর মতো পথে–ঘাটে পচে–গলে থাকবে। এ রকম প্রতীকের পক্ষে–বিপক্ষে নানা কথা, ঠাট্টা–তামাশা চলছেই অবিরাম। কেউ বলছেন, ‘বনের হাতি বনে যাক, হাতে সবার কমলা থাক।’ আবার কেউ বলছেন, ‘আসছে রে ভাই দুর্দিন, কমলাতে ফরমালিন।’
জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের মার্কা ডিশ অ্যানটেনা। এই মার্কা নিয়েও লোকমুখে অনেক কথা। একজন তো আফসোস করেই বললেন, আহা, অন্তত ১০ বছর আগে যদি তিনি এই মার্কা নিয়ে দাঁড়াতেন, তবে তাঁর কষ্ট করতে হতো না। তখন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ডিশ অ্যানটেনা থাকত। এখন তো আর সেই যুগ নেই। তবে ডিশ অ্যানটেনার মতো এই মার্কার প্রার্থীকেও মানুষ বাতিল করে দেবে কি না, সেটা কিন্তু বলা যাচ্ছে না।
পয়লা বৈশাখ এলে পান্তা-ইলিশের কদর বাড়ে। সেদিক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যেন সাংস্কৃতিক প্রচারণা পেয়ে গেলেন ইলিশ মাছ মার্কার প্রার্থী আলাউদ্দিন। আর সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে দাপটের সঙ্গে ব্যাট ঘুরিয়েছিলেন আমাদের ক্রিকেটাররা। সে কথা মনে রেখেই কি ক্রিকেট ব্যাট মার্কাটি বেছে নিলেন সৈয়দ সাজ্জাদ দোহা? এদিকে ইসলামিক ফ্রন্টের মুজিবুল হক শুক্কুরের সমর্থকেরা ভাবছেন অন্য কথা। নির্বাচনটা আর কদিন পরে এলেই ভালো হতো। বৃষ্টি–বাদলের দিনে তাঁদের মার্কা ময়ূরের রং–বাহারি নাচের কথা বলা যেত। আর ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিনের মার্কা সেই ঐতিহ্যবাহী চরকা। মহাত্মা গান্ধীর কথা তাঁর সমর্থকেরা না বললেও এই মার্কা দেখে অনেকে মনে ভেসে ওঠে ভারতের জাতির জনকের কথা। সাইফুদ্দিনের ফ্ল৵াস্ক আর আবুল কালামের আজাদের দেশলাই নিয়েও কথা বলছে। নিত্যব্যবহার্য এই জিনিস দুটি প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে থাকে। সুতরাং তাঁদের আর প্রচার-প্রচরাণার দরকার কী! সে কারণেই হয়তো তাঁদের প্রচারণা আর পোস্টার পথে–ঘাটে কম দেখা যাচ্ছে।
এদিকে পাড়ায় পাড়ায় নানা রসিকতা চলছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মার্কা নিয়ে। শিল–পাটার জন্য ভোট চাইলেই ভোটাররা ঠাট্টা করে বলে ওঠেন, অত ভারী জিনিস তাঁরা বইতে পারবেন না। তাৎক্ষণিক উত্তর, ‘হালকামির আর দিন নাই, রাশভারি লোক চাই।’ কোনো কোনো প্রার্থীর গোলগাল চেহারার সঙ্গে তাঁর মার্কা মিষ্টিকুমড়ার মিল দেখতে পান। আবার কেউ কেউ পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে ভোট চাইছেন পানপাতা প্রতীকের জন্য। এই মার্কার এক নারী কাউন্সিলরের পক্ষে কেউ কেউ বলছেন, তিনি পানের পাতার মতো নরম। কেউ কেউ আবার ছড়া কেটে কেটে বলছেন, ‘ভোট দিয়ো ভাই ফাল (লাফ) মারি, ঘরে ঘরে আলমারি।’ আর শহরের রাস্তায় রাস্তায় যাত্রীভর্তি বাস থেকে দেখে অনেকেই বলছেন, তাঁদের মার্কা ঝড়ের গতিতে চলছে। আর সবার মুখে একই কথা, ‘তোমার–আমার মার্কা কী, অমুক ছাড়া আবার কী।’ মার্কার পক্ষে-বিপক্ষে যত কথাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত ২৮ এপ্রিল ভোটাররা মার্কার পেছনের মানুষটাকেই ভেবে ভোট দেবেন। সেটাই হবে যথার্থ ভোটারের কাজ।