
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। আমার পরিবারে বাবার কর্তৃত্ব প্রায় শতভাগ। তিনি ব্যবসায়ী এবং তেমন শিক্ষিত নন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা আমার নিজের ইচ্ছায় নয়। আমার খালাসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের পরামর্শে (হয়তো তা ছিল আমার মঙ্গলের জন্য) আমার বাবা ভর্তি করাতে রাজি হন। কিন্তু আমি আমার বাবার আচরণ সম্পর্কে সজাগ ছিলাম। তিনি ছোটবেলা থেকেই অন্যদের উদাহরণ দিয়ে বলতেন, ‘ওই ছেলেটা পড়ালেখা করে আবার নিজের সব খরচ নিজে চালায়, এরপর বাসায়ও টাকা পাঠায়; তুই কী করিস, তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।’ বাবার কথা শোনার ভয়ে আমি ভর্তিতে রাজি ছিলাম না। কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে পড়তে হবে। প্রতিবার টাকা দেওয়ার সময় ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু তারপরও মুরব্বিদের সামনে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি যথাযথভাবে খরচ বহন করবেন। কিন্তু ইতিমধ্যে আমার আশঙ্কা সত্য হচ্ছে, তিনি এখন এমন আচরণ করছেন যেন মনে হচ্ছে, ‘শিক্ষার টাকা দিচ্ছি, অন্ন-বস্ত্রের টাকা দিতে পারব না।’ এখন বলছেন আর পড়াতে পারবেন না। এমনকি তিনি আমাকে বারবার ‘ত্যাজ্যপুত্র’ করবার কথা বলেন। মনে হয় পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য কিছু করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা স্বাধীনচেতা, পরিণামদর্শী ও সচেতন থাকতে চেষ্টা করি। আমরা দুই ভাইবোন, আমি বড়; আমার বাবা যথেষ্ট বিত্তশালী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
বাবা যে ছোটবেলা থেকে এভাবে তোমাকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন, তাতে তোমার আত্মমর্যাদাবোধ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কথা। বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের এতে মঙ্গল হবে এই চিন্তা করেই কথাগুলো বলেন। তবে এতে তাদের মনের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মনে হচ্ছে তোমাকে অন্য আত্মীয়স্বজন খুব ভালোবাসেন। এই কারণেই তাঁরা বাবার ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি করাতে তিনি বাধ্য হয়েই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যেহেতু এতে তাঁর সায় ছিল না, তিনি হয়তো নিজের সিদ্ধান্তের ওপর পরে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না।
তিনি তোমাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে চাইছেন কেন তা বুঝতে পারছি না। তুমি কি তাঁর সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়েছিলে? হয়তো বাবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর এই আচরণটি তোমার জন্য গ্রহণ করা খুব কঠিন। তারপরও তাঁর সঙ্গে এই মুহূর্তে তোমাকে ধৈর্যের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। ভবিষ্যতে পড়ালেখা শেষ করে তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। যেভাবেই হোক, অন্তত স্নাতক শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার লেখাপড়ায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য বাবার সঙ্গে একধরনের সমঝোতায় থাকা খুব প্রয়োজন। এই মুহূর্তে নেতিবাচক আবেগগুলোকে প্রশ্রয় না দিয়ে যুক্তিপূর্ণ চিন্তাকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলো, কেমন? বাবাকে মাথা ঠান্ডা করে বলো, তুমি যখন উপার্জন করতে পারবে, তখন বাবাকেও প্রয়োজনে সহায়তা দিতে পারবে। যদি সম্ভব হয় দু-একটি টিউশনি করতে পারলে নিজের ওপর আস্থা ও মর্যাদাবোধ তৈরি করা সহজ হবে। বাবারও মনে হবে তুমি সত্যিই ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছ।