তোমার নামে চিঠি

মাত্র তিন মাস আগেও তুমি ছিলে। মালদ্বীপে আমাদের ছবির মতো সংসার ছিল। ঘরভর্তি সুখ, স্বপ্ন আর ভালোবাসা ছিল।
সেই তুমি নেই, আমাদের সংসার আর আমার সমস্ত সুখ এখন গল্প হয়ে আছে। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না, জানো?
২৯ ফেব্রুয়ারি, তোমার জন্মদিন। বিশেষ দিনটি লিপ ইয়ার ছাড়া পালন করার সুযোগ হয় না। এ বছর কত পরিকল্পনা ছিল দিনটি ঘিরে। ঢাকা শহর খুব অনুভব করছিলে বলে তোমার জন্মদিনের পরিকল্পনাও সেভাবে সাজিয়েছিলাম। এই যেমন মালে সিটিতে দুই দিনের ভ্রমণ। এই দুই দিনে আমরা তোমার পছন্দের রেস্তোরাঁয় খাব, সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখব, কেনাকাটা করব, বাসে চড়ব আর খুব ঘুরব। একদম ঢাকায় যা যা করতাম, সে রকম।
তোমাকে পরিকল্পনা জানানোর পর সে কি খুশি তুমি! শিশুদের মতো আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলে। অথচ ৬ ডিসেম্বরে কী হলো, ১০ সেকেন্ডের নোটিশে তুমি ঘুমিয়ে গেলে। মুহূর্তে আমার পৃথিবী লন্ডভন্ড হয়ে গেল। আমার এত আদরে গড়া সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল।
আশপাশের মানুষ বলে, সব নাকি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কই? আমার কষ্ট তো কমে না। আমি রোজ ভুল করে তোমাকে ডেকে ফেলি, ফোনটা হাতে নিয়ে তোমাকে কল দিতে যাই, কতবার কত প্রশ্নের জবাবে বলি, ‘এটা তো তনু জানে!’...আর মাঝেমধ্যে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে চিৎকার করে কাঁদি।
তোমার মুখটা কল্পনা করতে করতে ঘুমাই, যদি তুমি স্বপ্নে আসো। এরপর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। তোমাকে ছাড়া কেন বেঁচে থাকতে হবে—এই ভেবে নিজের সঙ্গেই যুদ্ধ করি।
আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি। একটা এতিমখানায় শ খানেক শিশুর মধ্যে বসে থাকব। ওদের সঙ্গে তোমার জন্মদিন পালন করব। আমাদের সর্বশেষ বিবাহবার্ষিকী এভাবেই পালন করেছিলাম, মনে আছে? সেদিন তুমি ছিলে, আজ নেই।
মা বলে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে। আমি কীভাবে বোঝাই, তুমিই ছিলে আমার শক্তি।
শুভ জন্মদিন, প্রিয়তম। তোমাকে ভালোবাসি।
ইতি
তোমার আদরমাখা ভালোবাসা
(লেখকের স্বামী শাফিউল মুজনাবীন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন মালদ্বীপে। গত ৬ ডিসেম্বর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।)