কোনো অপরাধের শিকার হলেন এবং আইনি প্রতিকার নিতে কাছের থানায় গেলেন মামলা করতে। আপনি অভিযোগটি লিখেও নিয়ে গেলেন। কিন্তু পুলিশ গড়িমসি শুরু করল মামলা নিতে বা এজাহার রুজু করতে। শেষ পর্যন্ত এজাহার রুজু করতে পারলেন না। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে মামলা না করতে পারলে আপনি হয়তো আরও বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। কী করবেন আপনি? থানা যদি কোনো কারণে এজাহার করতে রাজি না হয়, তাহলে এর কি কোনো বিকল্প উপায় খোলা আছে?
কী উপায়?
সাধারণত কেতাবি নিয়ম হচ্ছে, কোনো আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের পর কেউ থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ বিনা মূল্যে সেই মামলা নিতে বাধ্য। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় শোনা যায়, পুলিশ মামলা নিতে চায় না। কোনো কারণে পুলিশ যদি মামলা নিতে না চায়, তাহলে এর বিকল্প পথ খোলা আছে। অভিযোগটি নালিশি অভিযোগ আকারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করার সুযোগ রয়েছে। অনেক জেলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের এখতিয়ার দেওয়া হয়ে থাকে মামলা আমলে নেওয়ার। এলাকা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া থাকে। সে ক্ষেত্রে যে এলাকায় অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে, সেই এলাকার এখতিয়ারাধীন আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। অভিযোগ লিখিত আকারে আইনজীবীর মাধ্যমে দায়ের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় শপথ নিয়ে অভিযোগকারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করতে হয়। জবানবন্দির ভিত্তিতে আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারেন। কখনো মামলাটি থানায় প্রাথমিক তদন্তের জন্য পাঠাতে পারেন।
আবার এমনও হতে পারে, মামলার ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় আবেদনটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত আদেশ দিলে থানার এজাহার নিয়ে গড়িমসি করার সুযোগ নেই। আদালতে সরাসরি অভিযোগ আকারে মামলা দায়ের হলে সাধারণত এই মামলাগুলোকে সিআর (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার) হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে নালিশকারী ফরিয়াদি বা বাদী হিসেবে থাকেন। ফরিয়াদিকে প্রতি তারিখে হাজিরা দিতে হবে। না হলে ফরিয়াদির অনুপস্থিতিতে মামলাটি খারিজ হয়ে যেতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন নেওয়ার জন্য আদালতে হাজির হওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। যদিও জানি, দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি আইন অনুযায়ী আদালত বিবেচনা করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা থানা এজাহার হিসেবে না নিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা হিসেবে দায়ের করা যায়। তবে নালিশি মামলা দায়ের করলে হলফনামা করে বলতে হবে যে থানা এজাহার হিসেবে মামলাটি গ্রহণ করেনি বিধায় ট্রাইব্যুনালের আশ্রয় নিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তখন মামলার ফরিয়াদির শপথ গ্রহণপূর্বক জবানবন্দি নেবেন, তবে মামলাটি সরাসরি আমলে নেবেন না। মামলাটি প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য তাঁর অধীনস্থ কোনো আদালতে পাঠাবেন। এই বিচারকের কাছ থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদন আসার পরই ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন। পরে আদালতে বিচার শুরু হবে।
সাইবার অপরাধের অভিযোগ
সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে এজাহার না নিলে সরাসরি আদালতে মামলা দায়েরের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে অভিযোগটি নালিশি মামলার মতো কেউ লিখিত আকারে উপযুক্ত প্রমাণ ও কাগজপত্রসহ ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ) অফিসের কন্ট্রোলার বরাবর দায়ের করতে হবে। এই অভিযোগ আইনজীবীর মাধ্যমেও দায়ের করা যায়। এ ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগটির ওপরে কন্ট্রোলার বরাবর একটি পত্র দিতে হবে এবং বলতে হবে কেন, কী কারণে এই অভিযোগ দায়ের করেছে। কন্ট্রোলার বরাবর অভিযোগ দায়েরের পর এই অফিসে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে অনুসন্ধান করবেন। এ বিষয়ে সিসিএর তদন্তকারী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এলে আমরা দুই পক্ষের জবানবন্দি নিই এবং অভিযোগের সত্যতা বিষয়ে অনুসন্ধান করে কন্ট্রোলার বরাবর প্রতিবেদন জমা দিই। কন্ট্রোলার মহোদয় এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগটি আমলে নেওয়া যেতে পারে বলে সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠাবেন। পরে ট্রাইব্যুনাল অপরাধটি নিজে আমলে নিয়ে বিচার শুরু করতে পারেন কিংবা থানায় এজাহার হিসেবে দায়েরের নির্দেশ দিতে পারেন।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট