‘দাঁড়াও, ঢাকা’
সাদা কালোয় ফ্রেমবন্দি হয়ে আছে শহরের নানান শ্রেণি–পেশার মানুষ। ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে সেগুলো। সবই চলন্ত মুহূর্ত। ইটকাঠের শহরে ছবিগুলোকে ঝুলিয়ে না রেখে দাঁড় করিয়ে রাখা। কেননা, আলোকচিত্রী বশীর আহমেদ, সুজন নামেই যিনি বেশি পরিচিত, যেভাবে ঢাকা শহরে হেঁটে হেঁটে ছবিগুলো তুলেছেন, দর্শককে তিনি সেভাবেই দেখাতে চান।
দর্শকও যেন তাঁর মতো হেঁটে হেঁটে ঢাকা শহরের মানুষের সাধারণ জীবনযাপনের ছবিগুলো দেখেন। ‘দুনিয়াদারি আর্কাইভ’–এর আয়োজনে ‘দাঁড়াও, ঢাকা’ শীর্ষক আলোকচিত্রের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও একক প্যানোরমিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে এমনই দেখা গেল।
রাজধানীর উঁচু উঁচু ভবনের আদলে ছবিগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে। প্যানোরমিক (বিস্তৃতভাবে দেখা) আলোকচিত্রের প্রদর্শনীতে অভিনবত্ব নিয়ে এসেছে ‘দাঁড়াও, ঢাকা’। একজন মানুষ দাঁড়িয়ে শহরটা যেভাবে দেখেন, ঠিক সেভাবেই দেখতে পাবেন পুরো প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী কিউরেটিং ও বইয়ের সম্পাদনা করেছেন আমিরুল রাজিব ও নাঈম ঊল হাসান।
বশীর আহমেদ বলেন, ‘যে ছবিগুলো দেখছেন, সেগুলো ঢাকার রাস্তায় ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তোলা। পাশাপাশি করোনাকালীন কিছু ছবিও এ প্রদর্শনীতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত মানুষ কীভাবে ঢাকাকে দেখেন, সেটিই ছবির মাধ্যমে প্রকাশের চেষ্টা করেছি। এখানে প্রদর্শিত প্রতিটি ছবিই দিনের শেষ ভাগে অর্থাৎ গোধূলিলগ্নে তোলা।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন। তিনি বলেন, ‘প্রদর্শনীর ধরন ও আলোকচিত্রের বইয়ের গঠনে অভিনবত্ব নিয়ে এসেছে “দাঁড়াও, ঢাকা”। বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্যানোরমিক আলোকচিত্রের প্রদর্শনী ও বই এটি। গ্যালারিতে আলোকচিত্রের প্রদর্শনেও রয়েছে নতুনত্ব।’
আগত দর্শকদের একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওরীন আহমেদ। প্রদর্শনী দেখার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আমি প্রদর্শনী হলেই দেখার চেষ্টা করি। এভাবে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। হয় ছবিগুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়, নতুবা ডিজিটালি বদলাতে থাকে। ছবিগুলোও শহুরে বিল্ডিংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। খুব অল্প সময়ে অনেকটা বদলে গেছে ঢাকা শহর। সেই বিষয়টি এসব ছবিতে ধরা পড়ে। তবে মতিঝিল আর পুরান ঢাকার বাইরে ঢাকার ছবি কম।’
এক মত পোষণ করে আরেক আলোকচিত্রী সৈয়দ লতিফ হোসাইন বললেন, ‘ভিজ্যুয়াল সংস্কৃতিতে এমন প্রদর্শনী অভিনব। এর আগে এই আলোকচিত্রী দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের নদীকেন্দ্রিক জনজীবনের ছবি তুলেছেন। ঢাকা শহরের এই ছবিগুলো তুলছেন বিশেষ প্যানারোমিক ক্যামেরা দিয়ে। প্যানারোমিক ক্যামেরায় আমরা সাধারণত চওড়াভাবে তোলা ছবি দেখি। কিন্তু উনি ছবিগুলো তুলেছেন উল্লম্বভাবে। বিশ্ব যে এখন উল্লম্বভাবে তরতর করে বেড়ে চলেছে, ঢাকায় একটার পর একটা হাইরাইজ বিল্ডিং উঠছে, সে ব্যাপারটি ধরা আছে। সমালোচনা যদি করতেই হয়, তাহলে বলব, সব ছবি একই উচ্চতায় রাখা। এটা কিঞ্চিৎ একঘেয়ে। কিছু ছবিকে ছাদ পর্যন্ত তুলে দেওয়া যেত। তাহলে আরও বৈচিত্র্য আসত।’
২৫ বছরের কর্মজীবনে সুজন বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। এখনো নিয়মিত ছবি তোলেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীটি ১৩ থেকে ২১ মে পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রতিদিন লা গ্যালারি বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেখা যাবে ‘দাঁড়াও, ঢাকা’।