
মা-বাবা জীবদ্দশায় নিজেদের নামে থাকা জমিজমা ভবিষ্যতে সন্তানেরা যেন পায়, তা নিশ্চিত করে যেতে চান। এ নিয়ে উদ্বিগ্নও থাকতে দেখা যায় অনেককে। বিশেষ করে যাঁদের শুধু কন্যা সন্তান আছে, তাঁদের দুশ্চিন্তাই যেন বেশি। অনেক মা-বাবা বলেই বসেন, ছেলেমেয়ের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাবেন। যেন তাদের মৃত্যুর পর পুরো সম্পত্তি সন্তানেরা নিশ্চিন্তভাবে ভোগ করতে পারে। এ নিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্তও হন। রীতিমতো স্ট্যাম্পে ঘোষণা দিয়ে নোটারি করিয়ে রাখেন কেউ কেউ। কিন্তু ছেলেমেয়েদের সম্পত্তির নিশ্চয়তা করতে গিয়ে আইন সঠিকভাবে না জানার কারণে ভবিষ্যৎ আরও জটিল করে তোলা হয়। সম্পত্তি যদি নিশ্চিত করে দিতে হয়, তাহলে আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এগুলো জানতে হবে এবং মানতে হবে।
আইন কী বলে?
কেউ যদি তাঁর সন্তানদের সম্পত্তি নিশ্চিত করতে চান, তাহলে সাবালক সন্তানদের কাছে প্রথমেই বিক্রয় করে হেবা দলিল সম্পন্ন করে নিতে পারেন। মুসলমানদের ক্ষেত্রে বিক্রয় বাদে আরও দুটি পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। একটি হলো হেবা বা দান এবং অন্যটি হচ্ছে উইল। তবে অনেকেই এ দুটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না।
দান বা হেবা করতে হয় নিঃশর্তভাবে। হেবা করার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, হেবাকারীকে হেবার ঘোষণা দিতে হবে অথবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করেও ঘোষণা দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যাকে হেবা বা দান করা হচ্ছে, তার দ্বারা গ্রহণ। আর তৃতীয়ত, হেবা করা সম্পত্তির দখল গ্রহণ। হেবা কিংবা দান করা সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্যই রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে।
আর উইল হচ্ছে নিজের অবর্তমানে কাউকে সম্পত্তি দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। তবে কোনো মুসলমান তাঁর দাফন-কাফনের ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারবে না। অর্থাৎ উইলের ক্ষেত্রে পুরো সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারবেন না। যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা হয়, তাহলে সে উইল কার্যকর করা যাবে না। তবে সম্পত্তির উইলের ক্ষেত্রে অন্য ওয়ারিশদের অনুমতি নিয়ে এর বেশিও উইল করা যাবে। দান সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়। উইল কার্যকর হয় মৃত্যুর পর। তবে নাবালক সন্তান থাকলে দানের ক্ষেত্রে সন্তান সাবালক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে।
একজন হিন্দু ব্যক্তিও তাঁর সম্পত্তি উইল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একজন হিন্দু ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি উইল করতে পারেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালত থেকে উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল প্রবেট করতে হয়। প্রবেট হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে উইলের প্রমাণ। যেকোনো হেবা বা দান লিখিত আকারে হতে হবে তা রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে।