
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করি। পাশাপাশি পড়াশোনা করছি স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে একজন মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক। সে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে। কিছুদিন আগে এই সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের পরিবার জেনে যায়। আমাদের দুজনের পরিবার থেকে বলে দিয়েছে, এ সম্পর্ক মেনে নেবে না। মেয়েটির পরিবার থেকে তার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। সে চায় পরিবারের অমতে আমার কাছে চলে আসতে।
আমরা দুজন একই এলাকার। ওর ভাই আমার ভালো বন্ধু। ওর পরিবারে আমার খুব যাতায়াত ছিল। আমাদের সম্পর্কের কথা জানার পর আমাদের বন্ধুত্বও ভেঙে গেছে। আমাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি। মেয়েটির পরিবার চায় আমার পরিবারের চেয়ে ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে। আমার পরিবারও চায় আমাকেও উচ্চবংশীয় পরিবারে বিয়ে করাবে। আমি পরিবারের সবার বড়, একমাত্র উপার্জনক্ষম। এ জন্য না পারছি পরিবারের অমতে কিছু করতে, না পারছি আমার ভালোবাসা বিসর্জন দিতে। কী করব?
রেজা, চট্টগ্রাম।
পরামর্শ
আমি বুঝতে পারছি তুমি একটি বড় ধরনের দ্বন্দ্বে পড়ে গেছ। মেয়েটি তো কেবল উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে। তোমারও স্নাতকোত্তর শেষ হয়নি। তুমি কি চাও না মেয়েটিও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে স্বনির্ভর হোক? তুমি তো তাকে উত্সাহিত করতে পারো। যেন সে পরিবারের কাছে দৃঢ়ভাবে বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভ করার আগে তাকে যেন কেউ বিয়ের কথা না বলে। ‘উচ্চবংশীয়’ পরিবার বলতে তুমি ঠিক কী বুঝিয়েছ, তা পরিষ্কার নয়। সেটি যদি আর্থিক অবস্থার মাপকাঠিতে বিচার করা হয়, তাহলে দুজনের পরিবার কি তোমাদের বিবাহোত্তর সুখ পরিবারের আর্থিক অবস্থা দ্বারা নিশ্চিত করতে পারবে? পরিবারের এ ধরনের চিন্তাগুলো খুব শিক্ষিত ও যুক্তিযুক্ত মনের পরিচায়ক কি না, তা ভেবে দেখবে। তুমিও তোমার পরিবারকে বলতে পারো যে তুমি যদি বিবাহিত জীবনে একটি সুখী মানুষ হও, শুধু তাহলেই পরবর্তীকালে আপন মানুষগুলোকে ভালো রাখতে পারবে। তারা তোমাকে বিয়ে দিয়ে যৌতুক আশা করছে কি না, সেটিও তাদের প্রশ্ন করতে পারো। তোমার মানসিক প্রশান্তির বিনিময়ে যদি উচ্চবংশীয় মেয়ের বিবেচনা অগ্রাধিকার পায়, তোমাকে অবশ্যই সেটি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েই আলোচনায় বসতে হবে। তোমরা তোমাদের পরিবারকে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে পারো, এ মুহূর্তে তোমরা কেউ বিয়ের কথা ভাবছ না। যদি তোমাদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা অটুট থাকে, তাহলে অবশ্যই দুজনেই আপাতত বিয়ের ব্যাপারটি অনেকটা পিছিয়ে দিয়ে প্রথমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারো। মেয়েটিও উচ্চশিক্ষার দোরগোড়ায় থাকলে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আপস মীমাংসা করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। সৃষ্টিকর্তা তোমাদের দুজনকে পরস্পরের পরিবারে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাদেরও কিন্তু দায়িত্ব রয়েছে এই অমূল্য উপহারগুলোর মন ভেঙে না দিয়ে তাদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো।