দুর্ঘটনা যাঁদের দমাতে পারেনি

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণপ্রেমী শিক্ষার্থীদের ক্লাব—চুয়েট অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটি। কীভাবে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ান তাঁরা, জানালেন সংগঠনটির টিম লিডার তৌশিন আহমেদ

রুখবে তাঁদের কে!
ছবি: সংগৃহীত

একঘেয়েমি কাটানোর দারুণ কার্যকর এক উপায় হলো ঘোরাঘুরি। যান্ত্রিক জীবনের জটিলতা ভুলে কিছুদিনের জন্য কোনো পাহাড়, সমুদ্র বা গাছপালায় ঢাকা গহিন অরণ্যের কাছাকাছি সময় কাটানো। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া।

এ উদ্দেশ্যেই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে বিভিন্ন ট্রিপের আয়োজন করে চুয়েট অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটি। ২০১৫ সালে গড়া এ সংগঠন অনেকের মধ্যেই বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছে। বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা থেকে শুরু করে দুর্গম ঝরনা খুঁজে বের করা; সমুদ্রসৈকত, বিভিন্ন দ্বীপ, পাহাড়ের চূড়া বা জঙ্গলে ক্যাম্পিং করার মতো আয়োজন আমরা নিয়মিতই করি। আমাদের আয়োজনগুলোর মধ্যে গা এলিয়ে আয়েশ করার মতো ভ্রমণ যেমন আছে, তেমনি আছে দুর্গম জায়গায় পা রাখার রোমাঞ্চও। তবে এ সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পথটা সহজ ছিল না। যাত্রা শুরুর পর ২০১৫ সালে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল খাগড়াছড়ি। কিন্তু সেই যাত্রাতেই বাস খাদ পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানি না হলেও আহত হয়েছিল প্রায় সবাই।

এ ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে আবার নিয়মিত ট্রিপ আয়োজন করতে শুরু করি আমরা। যদিও করোনার সময় কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ছোট ছোট দলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কিছু জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি।

অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটি থেকে বাইরের দেশেও কিছু ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ভারত, নেপাল উল্লেখযোগ্য। সাকা হাফং থেকে শুরু করে মিরিঞ্জা রেঞ্জের সবচেয়ে উঁচু বুশিতং সামিট, মদক রেঞ্জের জোত্লাং, যোগী হাফং সামিট, চিম্বুক রেঞ্জের ক্রিসতং রুংরাংসহ দুর্গম সাইম্প্রা ঝরনা, আন্ধারমানিক কিংবা নারিশ্যা ঝিরিতেও পদচিহ্ন রেখে এসেছে চুয়েট অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। এ ছাড়া কাপ্তাই, সীতাকুণ্ড—এসব তো আমাদের ক্যাম্পাসের আশপাশেই।

আরও পড়ুন

প্রতিটা ভ্রমণেই নতুন নতুন গল্প তৈরি হয়। নতুন নতুন সব জিনিস দেখা, নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া, বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া, প্রকৃতির কাছে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা—এ এক অদ্ভুত নেশা। শহুরে কোলাহল পেছনে রেখে প্রকৃতির কোলে বসে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা, রাতে চাঁদ–তারার দিকে তাকিয়ে থাকা, জঙ্গলে বা ঝিরি ঝরনায় বৃষ্টিবিলাসের যে অনুভূতি, এসব বলে বোঝানো কঠিন। একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকতে চুয়েট অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির এ কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও ব্যাপ্তি ছড়াবে, এটাই চুয়েটিয়ানদের প্রত্যাশা।