দৃশ্য-কাব্য-গল্প

নাটকের চূড়ান্ত মহড়ায় সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাবের সদস্যরা
নাটকের চূড়ান্ত মহড়ায় সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাবের সদস্যরা

চেনা একটা প্রবাদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন একটু ঘুরিয়ে, ‘সময়, স্রোত আর পরীক্ষা কারও জন্য অপেক্ষা করে না!’ আর ‘লাগাতার পরীক্ষা’ নাকি চলতেই থাকে। এক বিষয়ের কুইজ শেষ না হতেই আরেক বিষয়ের মিডটার্ম হাজির! পড়ালেখার চাপে শিক্ষার্থীরা যখন জবুথবু, এসবের ভিড়েও একদল ছেলেমেয়ে একটু অন্য রকম। ক্যানটিন-গ্যালারির আড্ডায় সব সময় তাঁরা একজোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই দলটাকে একটু অন্য চোখে দেখেন। দেখবেন না-ইবা কেন, তাঁরা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাবের (এনএসইউসিডিসি) সদস্য।
যে মেয়েটি স্যারের সামনে নিচু স্বরে কথা বলেন, সংলাপ বলার সময় কেমন ভোজবাজির মতো বদলে যায় তাঁর কণ্ঠস্বর! যে ছেলেটি ক্লাসের একদম পেছনে বসে ঘাড় গুঁজে থাকেন, মঞ্চে তাঁর কী দৃপ্ত পদচারণ! কস্টিউম, লাইট আর দর্শকসারিতে আধো আলোতে দেখা কালো কালো মাথা কী যেন এক ঘোরে বেঁধে ফেলেছে এনএসইউসিডিসির সদস্যদের। ১৮ বছর ধরে নিয়মিত বিভিন্ন ধাঁচের নাটক মঞ্চস্থ করে আসছে সংগঠনটি।
মহুয়া, কিনু কাহারের থেটার, কমেডি অব এররস, আর্সেনিক অ্যান্ড ওল্ড লেইস, ইম্পর্টেন্স অব বিয়িং আর্নেস্ট, ফাঁস, সিন্দুক, আ মিডসামার নাইটস ড্রিম, ব্র্যান্ড, মার্চেন্ট অব ভেনিস, ফুয়েন্তে অভেজুনা, অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান তাঁদের মঞ্চায়িত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনার হয় নিয়মিতই। এ ছাড়া প্রতিবছর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করে সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাব। শিল্পকলা একাডেমীতে বিভিন্ন সময় তাঁদের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, এটিও সংগঠনটির সদস্যদের কাছে একটি বড় অর্জন।

চলছে মহড়া
চলছে মহড়া

এনএসইউসিডিসির জ্যেষ্ঠ সদস্য আবু হাসান বলছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে। কোনো নাটকে আমি প্রেমিক, কোনোটায় আমি সুপারস্টার, কোনোটায় জংলি, আবার কখনো গ্রামের অশিক্ষিত যুবক। একটা নাটকে তো এমন হয়েছে যে আমি পরিদের রাজ্যে চলে গেছি। সেখানে পরিদের রানি আমার প্রেমে পাগল! প্রথম প্রথম নিজেকে “আমি” মনে হলেও একটা সময় চরিত্রের ভেতর এমনভাবে ঢুকে যাই যে আর আমি হয়ে না, চরিত্রটা হয়েই সংলাপ বলি।’
একসময় প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সাহায্য নেওয়া হতো। আবু হাসান জানান, এখন তাঁদের নিজেদের মধ্যেই অনেকে নাটকের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া সব ব্যাপারেই সহায়তা করছেন সংগঠনটির অভিভাবক, ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার রাফসান এলাহি।
‘এক্সপ্লোর ইওরসেলফ’ অর্থাৎ নিজেকে আবিষ্কার করাই নাট্যদলটির সদস্যদের মূল মন্ত্র। এনএসইউসিডিসির সদস্যদের অধিকাংশই আগে সেভাবে নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। মঞ্চের ব্যাকরণ, নিয়মকানুন কিছুই তেমন জানা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নাট্যদলে যোগ দিয়ে বড় ভাই-আপুদের কাছ থেকে একটু একটু করে শিখেছেন। এনএসইউসিডিসির আরেক সদস্য ওয়াসিম আকরাম বলছিলেন, ‘আগে কথা বলার সময় নিজেকে সেভাবে প্রকাশ করতে পারতাম না। এখানে এসে যখন মঞ্চে বিভিন্ন নাটক করেছি, এখন যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোটা সহজ হয়ে গেছে। ক্লাসে প্রেজেন্টেশন দিতে অনেকে ভয় পায়, সিডিসির সদস্যদের জন্য সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলাটা খুব সহজ।’ এনএসইউসিডিসির সঙ্গে যোগ দিয়ে এভাবেই লাবিব, রনিকা, রুবেল, আনান্দ, জুনায়েদ, সামিন, তানভির, নাইম, মিম, নাইমা, ফারাবির মতো সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিজেকে আবিষ্কার করছেন নতুন করে।