
ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে আইনজীবী বা এয়ারহোস্টেজ হবেন। আইন পড়ার জন্য তো যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাওয়া প্রায় ঠিকই হয়েছিল। ক্লাসের মেধাবীদের তালিকায়ও তিনি ছিলেন। বড় হয়ে তিনি হয়েছেন ডিস্ক জকি (ডিজে)। সেটিও একটি গল্প। সনদে নাম মারজিয়া কবির সনিকা হলেও, দেশজুড়ে যাঁর ডিজে সনিকা নামেই হাঁক-ডাক।
বয়স যখন উনিশ বছর, তখন প্রথম অনুষ্ঠান মাতানোর এই কাজটা শুরু করেন সনিকা। উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্রবাসে খণ্ডকালীন চাকরি কী হবে, সেটা ভেবে ভেবেই তাঁর ডিস্ক জকির কাজ শেখা। টানা কয়েক মাস এ জন্য ঢাকায় ডিজে রাহাতের গ্যারেজ স্কুলে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০০৮ সালে প্রথম পেশাদার ডিজে হিসেবে মঞ্চে আগমন তাঁর। চট্টগ্রামে বন্ধু দিবসের এক অনুষ্ঠানে অভিষেক হয় ডিজে সনিকার। এমন সময় তাঁর আগমন ছিল, যখন দেশে ডিজে হিসেবে নারীদের কাজ ছিল কঠিন এক বিষয়। শুরুর দিকে সনিকার আশপাশে কাজের পরিবেশ কেমন ছিল? মানুষ কেমনভাবে গ্রহণ করত? সনিকার উত্তর, ‘সে সময় নারীরা যে ডিজে হতে পারেন, সে ধারণাই ছিল না বেশির ভাগ মানুষের। একজন নারীকে সাবলীল ভঙ্গিমায় ডিজের কাজ করতে দেখে অনেকেই অবাক হতেন।’ নারীরাও পুরুষ ডিজেদের মতোই সমানতালে জনপ্রিয় হয়েছেন বলে মনে করেন সনিকা। ‘এখন মানুষের ধারণা বদলেছে। বিভিন্ন অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, কনসার্টের অর্ধেক আনন্দই আর নাচানাচি ডিজের ডিস্কের তালের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। যেকোনো অনুষ্ঠান মাতাতে ডিজেদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। মেধার গুরুত্ব দিয়েই ডিজেরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন।’
ঢাকার শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের সেই চুপচাপ মেয়ে সনিকা এখন শুধু দেশেই নন, নিয়মিত বিদেশেও যান ডিজে হিসেবে। নিয়মিত ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শোতে তাঁর ঝলক দেখা মেলে। ডিজের কাজের পাশাপাশি উপস্থাপনা আর অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর। এই দুই ভুবনেও সনিকা এখন নিয়মিত পা রাখছেন।
সনিকার জন্ম আর বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়। মা-বাবার দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে হওয়ায় আদর পেয়েছেন বেশ। মা আমিনা খাতুন মিনা রেডিওতে গান করতেন। বাসায় গান শোনার নিয়মিত চর্চা ছিল বলেই ধীরে ধীরে গানকে কেন্দ্র করে ভিন্নধারার এই পেশায় আসেন সনিকা। তাঁর ভাষায়, ‘নিজের মধ্যে গান শোনার চর্চা ছিল ছেলেবেলা থেকেই। বড় হয়ে ভিন্ন কিছু করার লক্ষ্যে প্রচলিত পেশাকে এক পাশে রেখে এই জগতে পা রাখা। জগৎটা বাংলাদেশে নতুন বলেই চ্যালেঞ্জিং ছিল। নারী হয়ে সেই চ্যালেঞ্জটা ধীরে ধীরে ভাঙতে পেরেছি। ভাঙার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’