নটবর আকরাম খান (শেষ পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আকরাম খান
আকরাম খান

আটটা বেজে এক মিনিট পর হলের সবগুলো আলো নিভে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চতুর্দিকে। যেন বাংলাদেশের কোনো প্রত্যন্ত গ্রামের ঘন অরণ্যের ভেতর প্রবেশ করেছি। হলশুদ্ধ মানুষ নিঃস্তব্ধ, নিশ্চুপ। টুঁ-শব্দটি নেই কোথাও। সেলফোন বাজছে না কারও পকেটে। কাশি-হাঁচির শব্দ নেই একটুও। অনুষ্ঠান চলাকালে শ্রোতা-দর্শকদের কেউ কথা বলবে না, ফোন বাজা বন্ধ রাখবে, সামান্য নড়াচড়ার শব্দও চেপে রাখার চেষ্টা করবে, এটুকু সৌজন্য পশ্চিমাজগতের সভ্যসমাজে সবাই আশা করেন।
এমন সময় পর্দার আড়াল থেকে বের হলেন একটি ছোটখাটো লোক। হাতে তাঁর সলতে-জ্বালানো নিভুনিভু হারিকেন, পরনে খয়েরি রঙের লুঙ্গি আর কোর্তা। খুঁজছেন, প্রত্যন্ত গ্রামের আরণ্যক অন্ধকারের ভেতর কি যেন খুঁজছেন। সামনে পড়ল একটা মাটির ঢিবি-কবরের মতো। তার পাশে একটি ছোট গাছ পোঁতা। তারই সংলগ্ন একটা শক্ত জায়গা, লোহার পাতের মতো কিছু একটা বস্তু। এর সবকিছুই যেকোনো গল্পের রূপক, কোনো প্রাচীন কাহিনির স্মৃতিফলক সেটা হয়তো কারোরই দৃষ্টি এড়ায়নি। একসময় তাঁর হাতে একটা প্রকাণ্ড হাতুড়ি দেখা গেল। সেই হাতুড়ি দিয়ে তুমুল জোরে ঘা দিতে শুরু করলেন সেই শক্ত পাতের ওপর। একটা নয়, দুটো নয়, পরপর আটবার। যেন সেই ঢিবির মাটি খুঁড়ে কিছু বের করতে চাচ্ছেন, অতীতকে। স্মৃতিকে। সেই কবরে যেন তাঁর বাবাই শুয়ে আছেন। তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বাবার ঘুম ভাঙাতে, তাঁকে জাগিয়ে তুলতে। তাঁর মুখ থেকে আবার সেই গল্পগুলো শুনতে চান, যা উনি প্রাণমন দিয়ে ওকে শোনাতে চাইতেন ছোটবেলায়, কিন্তু তিনি তখন কান দেননি তাতে। হে স্মৃতি, জাগ্রত হও। অতীত তুমি আবার দাঁড়াও আমার সামনে। একসময় তিনি নিজেই বাবার ভাণ করে পুরোনো গল্পগুলো বলতে শুরু করলেন। কেশমুক্ত নেড়ে মাথায় রাগী বাবার মুখ এঁকে তাঁর অনুকরণে ছেলেকে ডাকছেন নিচে এসে সবার সঙ্গে খাবার টেবিলে বসার জন্যে। তুই কি ওসব পচা বিলাতি বাজনা বন্ধ করবি? সমানে বকাবাজি করে যাচ্ছেন নিচের তলার সিঁড়ি থেকে, আর ওপরে নিজের ঘরে বসে ছেলে নির্বিকার। কানে মাইকেল জ্যাকসনের গানেতে বাবার গলা ডুবিয়ে রাখার চেষ্টা। এখন, এতকাল পর, সেই রাগী গলা, তাঁর রেস্টুরেন্ট জীবনের অকথ্য কষ্টের গল্প, তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশ, যে দেশের কথা তিনি এককানে শুনেছেন, আরেক কানে বের করে দিয়েছেন ছোটবেলার সেই অর্বাচীন বয়সে, সেই গল্পগুলো তিনি আবার কবর খুঁড়ে বের করে আনতে চান। শোনাতে চান তাঁর কাছে বসা ছোট্ট খুকি, ভাগনি ইশিতার কাছে, সেই একই গল্প। কিন্তু বাবার মতো করে নয়। মায়ের মতোও নয়। তাঁর নিজের মতো করে। যেমন করে বড়রা ছোটদের রূপকথার গল্প শোনায়। রাজরানী আর অচিনপুরের গুপ্তধনের গল্প শোনায়। বাড়িয়ে বাড়িয়ে, নানা রঙের রং মিশিয়ে, নাচে-গানে তালে তালে অবিশ্বাস্যরকম সৌন্দর্যময় করে তোলার পর। ‘দেশ’ আকরাম খানের সেই ছোটবেলার গল্প বলারই এক অনবদ্য ভঙ্গি যা দেশকাল পার হয়ে অনায়াসে সর্বজনীন মানবতার মন্দিরে গিয়ে পৌঁছায়।
‘দেশ’ নিয়ে একটা বড় কাজ করবেন এমন একটি ভাবনা অনেক আগেই উদয় হয়েছিল তাঁর মনে। এটি তাঁর অত্যন্ত ব্যক্তিগত ভাবনা যা তাঁকে একাই করতে হবে জানতেন। এই বিশেষ ‘দেশ’টির সন্ধান তাঁকে একাই করতে হবে। চিন্তাটি মনের ভেতর ঘুমিয়ে থেকেছে অনেকগুলো বছর-ঘুরপাক খেয়েছে। কর্মব্যস্ততা বা মানসিক-দৈহিক প্রস্তুতির অসম্পূর্ণতা, সব মিলিয়ে সেটা হয়ে ওঠেনি এদ্দিন। মৌলিক যে-ভাবনাটি তাঁকে পীড়া দিচ্ছিল বারবার সে-ভাবনা তো মানবজাতির প্রাচীনতম অন্বেষাগুলোরই অন্যতম—আমি কে, আমার সত্যিকার পরিচয় কি। আকরাম খানের মতো প্রবাসে জন্মলব্ধ ছেলেদের জীবনে তো সে-প্রশ্নের পরিধি সংকটের শেষ সীমানাতে পৌঁছে যায় যৌবনের প্রাক্কালে। প্রশ্ন তখন দ্বন্দ্ব হয়ে দাঁড়ায়-কখনোবা রীতিমতো যুদ্ধ। তাঁর জন্ম যে দেশে, যে দেশের আলো-বাতাসে তাঁর বৃদ্ধি ও বিকাশ, তাঁর খেলার সা​থিরা যেখানে বাস করে, সে দেশ নাকি তাঁর নয়, সে কথা তাঁকে শিখতে হয় তাঁর বাবা-মার কাছে, আত্মীয়স্বজনদের কাছে। এমনকি স্কুলের ক্লাসরুম আর খেলার মাঠে গিয়েও তাঁকে শুনতে হয় যে এই যে জন্মভূমি বলে এতকাল জানল যে-দেশটিকে, সেটিও আসলে তাঁর নয়। তখন তাঁর মনে হতে থাকে তাঁর আসলেই কোনো ঠিকানা নেই, বাড়ি নেই, তিনি একটি জলজ উদ্ভিদ ছাড়া কিছু নয়। সেই সংশয়, সেই অসহায় আর একাকিত্বের বোধ তাঁকে পরিচয়হীনতার গহ্বরে শুষে নিয়ে যায়। আকরাম জানতেন এটি তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত অভিযান, এতে কারোরই অংশ নেওয়ার উপায় নেই। তাঁর নিজের ভাষাতেই ‘ইটস অ্যাবাউট ডিফারেন্ট জেনারেশনস, অ্যাবাউট হাউ উই ক্যারি মেমোরিজ অ্যান্ড হাউ উই কিপ মেমোরিজ। ইটস মাচ ইউনিভার্সাল স্টোরি দ্যান বাংলাদেশ। অ্যাট ইটস সেন্টার ইজ এ চাইল্ড ইন ক্রাইসিস।’
নটবর আকরাম খান-দুই

এই সর্বজনীন আইডিয়াটিকে তিনি শিল্পকলার অঙ্গভূষণে সজ্জিত করে একটি স্বপ্নিল রূপ দিতে চেয়েছিলেন। দুই প্রজন্মের সংঘাত, স্মৃতি আর অতীতের সঙ্গে সমসাময়িক কালের দ্বন্দ্ব, এগুলোর মাঝ দিয়ে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন একটা সুষম সহাবস্থানের এলাকা। যা সম্ভব হয়েছে তাঁর পরিণত বয়সের আত্মপ্রত্যয়ী চিন্তার সূত্র ধরে। তাই তিনি যখন দেখতে পান তাঁর বোনের মেয়েটি, তাঁরই মতো বর্তমান যুগের জমকালো তারকা লেডি গাগার পোশাক-আশাক আর গান-বাজনাতে বিভোর হয়ে থাকতে চায় কেবল, আর তাঁর মা তাকে কেবলই শোনাতে চান তাঁর দেশের গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, স্বাধীনতা আর গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের গল্প, তখন তিনি যেন নিজেরই বাল্যকালে ফিরে যান এবং সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে তাঁরই মতো করে বলতে চান ইশিতাকে। তখনই মঞ্চের ওপর একঝাঁক আলোর ঝলক অগ্নিশিখার তীব্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চারদিকে বেজে ওঠে অগণিত গাড়ি, রিকশা, ট্রাক আর জনতার কানফাটানো চিৎকার আর কোলাহল—সেখানে তিনি এক বিভ্রান্ত পথভোলা বালক, শব্দের তীক্ষ্ণতা দ্বারা, চারপাশের প্রবহমান জীবনের চরম উচ্ছৃঙ্খলা দ্বারা প্রহৃত ও পরাভূত। সেখানে বিশাল আকারে সহসা আবির্ভূত হয় বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক শোভাযাত্রার দৃশ্য। স্বাধীনতার দাবি, গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি, তারা নিশান ওড়াচ্ছে, চিৎকার করে ঘোষণা করছে তাদের দাবি-দাওয়া। মিছিলের একেবারে সম্মুখভাগে হঠাৎ করে দেখা দেয় একটি বালক, তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত শূন্যে উঁচানো—মুক্তি চাই মুক্তি চাই বলে তারও সেই একই ঘোষণা। সেই ছবির সামনে, বিশাল মিছিলের মাঝে আকরাম যেন নিজেকেই খুঁজে পান, ওই বালকের মতো তিনিও মুষ্ঠি আবদ্ধ করে ঘোষণা দেন: মুক্তি চাই, আমিও মুক্তি চাই। কেবল তাঁর কাঙ্ক্ষিত ‘মুক্তি’ আর মিছিলের অগ্রভাগে থাকা বালকের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি এক নয়। কিংবা কে জানে, হয়তো সেখানেও আছে কোনো গূঢ় ঐক্যসূত্র। কিন্তু তিনি মুক্তি খোঁজেন তাঁর নিজেরই দ্বন্দ্বের কারাগার থেকে। এখানেই আকরাম খান বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে নিজের অন্তর্যুদ্ধের সাযুজ্য খুঁজে পান। এই কামনা আর দাবির মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর পিতা-মাতার মাতৃভূমির সঙ্গে একাত্মÄবোধ করেন, সে দেশটি অলক্ষ্যে তাঁর নিজেরই দেশ হয়ে ওঠে।
মিছিলের বালকটির ধারণা কীভাবে উদয় হয়েছিল তাঁর মনে এ নিয়েও একটা ছোট কাহিনি আছে। ‘দেশ’ তৈরি করার জন্যে তিনি সেই প্রথম বাংলাদেশে গিয়েছিলেন কোরিওগ্রাফির কাজে—আগে যতবার গিয়েছেন ততবারই হয় জীবন নয় মৃত্যুর কাজে, অর্থাৎ হয় বিয়ে উপলক্ষে নতুবা কারও কুলখানি-চল্লিশা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি কার্তিকা নায়ার আর ইপ-হালস-জসেলিন পুকসহ ছবি নির্মাণের পুরো দলটাই। ওঁদের সবার সঙ্গে তিনি তাঁর দেশটিকে নতুন করে, তাঁর শিল্পীমনের চোখ দিয়ে, তাঁর প্রাণের রুদ্ধ পিপাসার দৃষ্টি দিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন। মোট কথা, তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন সে-দেশটিকে নিজের মতো করে আবিষ্কার করার আশাতে। সেখানে গিয়ে রাস্তাঘাট ও লোকজনদের ছবি তুলছিলেন একাধারে, পশ্চিমের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কারও অনুমতির অপেক্ষা না করেই। সামনে পড়ল একটি অর্ধনগ্ন বালক। আকরাম তার ছবি তুলে নিলেন বেশ কটি। তাঁর ছবি তোলা শেষ হতে না-হতেই, অবাক, ওই ছেলেটিই তার পকেট থেকে একটা ফোন ক্যামেরা বের করে আকরামের ছবি তুলতে শুরু করল। দৃশ্যটা খুব অসাধারণ মনে হলো তাঁর কাছে। শিল্পী আকরাম কি এক দুর্বোধ্য উপায়ে ছেলেটির মাঝে নিজেরই একটা সূক্ষ্ম প্রতিবিম্ব দেখতে পেলেন। দুজনের চোখে তো একই কৌতূহল...দুজনই দেখছে, খুঁজছে, আবিষ্কার করতে চাইছে। এই আইডিয়া থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ‘দেশ’ এর সেই মিছিলের ছেলেটির অনুকরণে তাঁর নিজের মুষ্ঠিবদ্ধ হস্ত উত্তোলন।
ছোটবেলার সেই নির্বোধ সময়গুলোতে বাবার মুখে শুনতে না-চাওয়া গল্পগুলো আজকে, এতকাল পর, যখন গল্পের পাত্র-পাত্রীদের রূপকথার চরিত্র বলে আর মনে হয় না, তখনই, বিচ্ছিন্নতা আর একাকিত্বের নিবিড়ে নির্বাসিত শিল্পী তাঁর বিমোহিত দর্শকদের নিয়ে যান সেই হারানো গল্পের কল্পরাজ্যে, যেখানে প্রতিটি বস্তুই কী এক জাদুর স্পর্শে শতগুণে বৃদ্ধি পেয়ে যায় কলেবরে। বাস্তব হয়ে যায় অধিবাস্তব। একটা দৃশ্যে আমরা দেখলাম তাঁর মধু খেতে ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু মধু তো বাজারে চলে গেছে বিক্রি হবে বলে। এখন মধু পেতে হলে মৌমাছির শরণাপন্ন হতে হবে। তখন তিনি নিজেই মৌমাছি হয়ে যান। মৌমাছির মতো পাখা ঝাপটাতে থাকেন কথক নাচের ভঙ্গিতে। কথক তাঁর রক্তের মধ্যে, বরাবরই তা বলেন তিনি। সংসারের সবকিছুকেই তিনি কথকের চোখ দিয়ে দেখেন। তাই কন্টেম্পরারি নাচের ভেতরও প্রায়ই এক-দুটি কথক মিশে যায়, সেটি তিনি অকপটে স্বীকার করেন। আরেকটি দৃশ্যে ইশিতার জুতোর ফিতে বেঁধে দিচ্ছিলেন। কিন্তু ফিতে আর ফিতে থাকে না-প্রথমে একটি লতানো গাছ, তারপর একটা বড় ডাল হয়ে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। সেই ঊর্ধ্ব চলে যায় সীমাহীন অন্তরিক্ষতে। শিল্পী আকরামের কল্পনা যেন মহাশূন্যেরই এক নিঃসঙ্গ সারথি।
দেশে যাওয়ার পর প্রথমেই চোখে পড়ে তাঁর চরম বিশৃঙ্খলা। এবং তাঁরই মাঝে খুঁজে পান তিনি এক সৌম্য সুসাম্য। আধুনিক বিজ্ঞানে যেমন আমরা নিত্যই বলে থাকি ক্যাওয়াসের মাঝে হারমনির কথা-চূড়ান্ত এলোমেলোর মাঝেই পরম ঐকতান, যা প্রকৃতিরই আপন ধর্ম। নগরের রাজপথে যে উন্মত্ত কোলাহল তিনি দেখেছেন সেটাই যে বাংলাদেশ নয়, তা তিনি নিজেই আবিষ্কার করেছেন সেই দেশেরই বৃক্ষলতা পত্রপুষ্পশোভিত প্রকৃতির দুয়ারে গিয়ে। যেখানে তিনি দেখেছেন আকাশভরা মেঘ, ঢেউ খেয়ে খেয়ে চলছে তারা এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে, দেখেছেন অঝোর অঢেল বৃষ্টি, বর্ষার জলে ভেসে যাওয়া পথঘাট প্রান্তর। ঘন অরণ্যের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের ভেতর তিনি নিজেকে পেয়েছেন এক বিভ্রান্ত, বিস্মিত বিমোহিত বালকের মতো। সেখানে শ্বাপদ জন্তুদের নিত্য আনাগোনা, সেখানে প্রকাণ্ড অজগর পেঁচিয়ে ধরে বড় বড় গাছের ডাল, সেখানে বর্ষার ক্ষুরধার স্রোতে টলমল করে কাঠের নৌকা, সেখানে বৃষ্টি নামে গানের মতো শব্দ করে, ইচ্ছে হয় তিনিও সেই বৃষ্টির সঙ্গে অঝোরধারায় বর্ষিত হতে থাকেন ওপর থেকে। দুলতে থাকেন ঝুলতে থাকেন শূন্যে, মহাশূন্যে। সেসব অলীক অপরূপ দৃশ্যগুলো আমরা ভোগ করতে পেরেছিলাম আকরাম খানের কাব্যিক কল্পনা আর তাঁর সহযোগীদের অসাধারণ কারিগরি নৈপুণ্যের সহায়তায়। হলভর্তি এতগুলো মানুষ আমরা পুরো দেড়টি ঘণ্টা দম ফেলতে ভুলে গেলাম। আমরা নিজেদের অজান্তে অলক্ষ্যে চলে গেলাম ভূলোক থেকে দূর দ্যুলোকে। আকরাম খানের মতো করেই আমরা যেন ঝুলতে থাকলাম মেঘের রাজ্য থেকে, ঝরতে থাকলাম অবারিত বারিধারার মতো।
অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ দৃশ্যটিতে তিনি আবার সেই কবরের পাশে উপস্থিত এবং হাতে সেই একই হাতুড়ি। এবারও ঠিক একইভাবে হাতুড়ি পেটাচ্ছেন। একবার, দুবার, বহুবার। কিন্তু এবারের পেটানো আর সেই প্রথমবারের পেটানো এক নয়। এবার তিনি গাছটিকে ওপড়াতে চাচ্ছেন না, মাটিতে গুঁজে দিতে চাইছেন পুনরায়। এবার তিনি বোঝাপড়া স্থাপন করে ফেলেছেন তাঁর অতীতের সঙ্গে। সন্ধি হয়ে গেছে অতীতের সঙ্গে, স্মৃতির সঙ্গে। এবার তিনি স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এবার, হে অতীত, তুমি কেবল ইতিহাস হয়েই বিরাজ করতে থাকো।
আকরাম খান নৃত্যমঞ্চের এক অবিশ্বাস্য জাদুকর, নিঃসন্দেহে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাত-আট শ দর্শক একরকম যন্ত্রচালিত অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে গেলাম তৎক্ষণাৎ-করতালিতে ফেটে পড়ল বিরাট প্রেক্ষাগৃহ। আকরাম খান স্টেজে এসে বিনয়নম্র সৌজন্যের সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আড়াল হলেন পর্দার পাশে। কিন্তু করতালি তখনই থেমে যায়নি। মুহুর্মুহু বেজে চলল। এভাবেই সবাই জানিয়ে দিলেন তাঁরা কতখানি আনন্দ নিয়ে যাচ্ছেন সেখান থেকে-একবার, দুবার, তিনবার। একটা অনন্য সন্ধ্যার ঘোর তখন আমাদের দেহমনে। অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে থাকল আমার অপরূপা দেশটির গান-কবিতা গল্প আর বৃষ্টি।
আগেই ঠিক করা ছিল সব। আমাদের সাতজনের মাঝে চারজন চলে গেল মনির গাড়িতে করে, বাসায় গিয়ে খাবারদাবার তৈরি করবে। আমি, অহনা আর অমিয়াকে নিয়ে চলে গেলাম স্টেজের পেছন দিকে, আকরামকে তুলে নেব বলে। সেখানে রীতিমতো ভিড় জমে গেছে ইতিমধ্যে। লোকজন এসেছে ওর সঙ্গে দেখা করতে, করমর্দন করতে, অটোগ্রাফ নিতে, কেউবা টুকটাক আলাপ করতে। আমরা অপেক্ষা করে থাকলাম ঘরের বাইরে। অহনা-অমিয়া দুই বোন, তখনো যেন স্বপ্নের ঘোরে আবিষ্ট হয়ে আছে—এমন অভিজ্ঞতা তাদের আগে হয়নি কখনো।
বাসায় গিয়ে পৌঁছলাম যখন ঘড়িতে সোয়া নয়টা। ক্ষিধে পেয়ে গেছে সবারই। সবচেয়ে বেশি নিশ্চয়ই আকরামের—পরিশ্রমটা তো ওরই হয়েছে সবচেয়ে বেশি। পাকা ৮০ মিনিট ধরে একা একা নেচে যাওয়া এতগুলো লোকের সামনে এবং কঠিন শারীরিক পরিশ্রমের আধুনিক নাচ যেকোনো লোকের পক্ষে কাবু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আকরামকে দেখে তা মনে হলো না, মনে হলো যেন জিম থেকে একটা ওয়ার্কআউট করে এসেছে মাত্র, তার বেশি নয়। ও যে আমাদের মতো সাধারণ নাম না-জানা ব্যক্তি নয় সেটা তো নতুন করে বলতে হবে না কাউকে। আমার মতো নগণ্য লোকের বাড়িতে এসে একবেলা খেতে রাজি হওয়াটাই এক বিরাট ব্যাপার। সৌভাগ্যবশত আমাদের পরিচয়ের সূত্রটা পারিবারিক। সেই যে বললাম ওর মা আমার প্রিয় শিক্ষকের মেয়ে। তদুপরি আমার লন্ডনবাসী বোনের মেয়ে সুহানা কথক শিখেছে আকরাম খানের কাছে। ওই পরিচয় আস্তে আস্তে দানা বেঁধেছে।
আমার বাড়ির অন্য অতিথিরা, আকরামকে কীভাবে আদরযত্ন করবে, কীভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলবে, লোকটা অহংকারি কি না, নাক উঁচু ভাব আছে কি না তাঁর, থাকাটা খুব অস্বাভাবিকও নয়, সেসব প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঁকি দিয়েছিল ওদের মনে। কিন্তু ওঁকে দরজায় ঢোকার সময়তেই হয়তো ওরা বুঝতে পারল এই লোকটাকে নিয়ে ওসব ভাববার কোনো কারণ নেই। আকরাম সত্যি সত্যি একটি ‘ফলভারে অবনত বৃক্ষ’। এমন নম্রভদ্র অমায়িক স্বভাবের মানুষ আপনি ক্বচিৎ​ কদাচিৎ পাবেন সংসারে। তিনি ঘরে ঢুকেছেন অত্যন্ত সরল সাধারণ পোশাক পরে। তাঁর বিখ্যাত টেকো মাথাটির প্রতি স্বভাবতই তিনি খুব যত্নবান—খুব ঠান্ডা ছিল না সেদিন তবু গরম টুক দিয়ে আঁট করে ঢেকে রেখেছেন। কথা বলেন খুব নিচু গলায়, প্রায় ফিসফিস শব্দে। তাঁকে এক সাংবাদিক একবার প্রশ্ন করেছিলেন বাংলাদেশি সম্প্রদায়েরর সঙ্গে তাঁর কী রকম সম্পর্ক তা নিয়ে। আকরাম উত্তরে বলেন, ‘আমি কক্ষণোই সমাজের কারও সঙ্গে জোর গলায় কথা বলিনি।’
বিস্মিত সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, কেন। আকরামের সোজা জবাব, ‘কারণ তাতে অসম্মান হয় লোকটার।’
বিস্মিত শুধু সাংবাদিক ভদ্রলোকটিই হননি, আমিও হয়েছিলাম ওটা পড়ে। লন্ডনে জন্মানো এ প্রজন্মের কোনো ছেলের পক্ষে এতটা বিনয়নম্র স্বভাব যে আদৌ সম্ভব সেটাই কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়। সুতরাং আমার বাসাতে আকরামের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলাতে কোনো সমস্যা দাঁড়াবার প্রশ্নই ওঠে না। তাই অতি অল্পসময়ের মাঝেই ওরা সবাই হাজার রকমের গল্পে মজে গেল। ততক্ষণে সেরীন-ফেরদৌস আর মনিকার খাবার টেবিলে সব প্রস্তুত। আকরাম যে পুরোপুরিই বাঙালি এবং সম্ভবত একেবারে ভেতো বাঙালি তার প্রমাণ পাওয়া গেল তাঁর খাবারের প্লেট দেখেই। দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মাঝে এটা কিন্তু বেশ বিরল-বাবামা দেশি খাবার খেলেও ছেলেমেয়েদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হয়। আকরামের বেলায় তার ব্যতিক্রম দেখার কারণ কেবল তাঁর বাবা-মার শিক্ষাই হয়তো নয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত তিনি বাবা-মার সঙ্গেই থাকতেন এবং একই খাবার খেতেন, নিজের পছন্দেই খেতেন, সেটা আমি আগেই জানতাম। অতএব তাঁর আগমন উপলক্ষে দেশি খাবারের আয়োজন করতে আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধা করিনি। খাওয়া-দাওয়া সারা হলে পাকঘরের সিঙ্কে প্লেট রাখতে গিয়ে আকরাম ফেরদৌসকে বলেন, আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন। ফেরদৌস তো হতবাক, এত বড় একটা মানুষ ওকে বলছে তুমি করে বলতে, শুধু কিছু বয়সের ফারাক থাকার কারণে? এতেই বোঝা যায় কোন দরজার মানুষ আমাদের বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি শিল্পী আকরাম খান।
মনি আর সেরীন দুজনেরই সামান্য সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা। অতএব দুজনের হাতেই লম্বা ফর্দ প্রশ্নের। আকরাম মোটামুটি সবগুলো প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে গেলেন ভদ্র ও নম্র, সৌজন্যের সঙ্গে। ওর প্রশ্নোত্তরের ভঙ্গিতেও একটা নিজস্বতা আছে। কঠিন বিষয়টিকেও অত্যন্ত সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারে। শৈল্পিক ব্যাপারগুলোতে ওর দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনোও আঁকাবাঁকা পথ খোঁজার প্রয়াস নেই-সবকিছু একেবারে জলের মতো পরিষ্কার তাঁর কাছে। যেসব দৃশ্য একটা আপাত অর্থ নিয়ে দেখা দেয় আমাদের চোখে সেখানে তিনি একটা প্রতীকী তাৎপর্য তুলে ধরেন আমাদের কাছে। আসলে সমসাময়িক নৃত্যকলার বৈশিষ্ট্যই বোধ হয় তাই—অনেকটা আধুনিক কবিতা বা আধুনিক ছবির মতো। যা প্রতীয়মান বা দৃশ্যমান তাই তাঁর বক্তব্য নয়। এ সম্বন্ধে আকরাম খানের প্রযোজক, অন্তরঙ্গ বন্ধু, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ফারুক চৌধুরী, যাঁকে আকরাম তাঁর ‘আপন ভাই আর প্রাণের বন্ধু’ বলে মনে গণ্য করেন এবং যে নিজেও একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ নৃত্যশিল্পী। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আধুনিক নৃত্যশিল্প আর ধ্রুপ​দি নৃত্যশিল্পের তফাতটা খানিক আধুনিক কবিতা আর গদ্য সাহিত্যের পার্থক্যের সঙ্গে তুলনীয়। গদ্যের একটা একক অর্থ থাকে, যা আধুনিক কবিতায় থাকে না, কবিতার গূঢ় অর্থটি একেক পাঠকের কাছে একেকভাবে প্রকাশ পায়। আধুনিক নাচও তেমনি একেক দর্শকের চোখে একেক রূপে দেখা দেয়।’ এই কথাগুলো আকরাম যত সহজে বোঝাতে পারেন মানুষকে অন্য কাউকে ততটা সহজভাবে বোঝাতে দেখিনি আমি।
প্রায় ঘণ্টা তিনেক চলল আমাদের ঘরোয়া আড্ডা। তখন আর কোনো বেড়াই থাকল না কে কত বড় কে কত ছোট। কেউ কারও চেয়ে ছোট বা বড় নয়। আমরা সবাই মানুষ, আমরা সবাই আমাদের দেশকে ভালোবাসি এবং সেই গ​ণ্ডিবদ্ধ ভালোবাসার মধ্য দিয়েই আমরা ভালোবাসতে শিখেছি পৃথিবীর আপামর মানবজাতিকে। আকরাম তাঁর ‘দেশ’এর মধ্য দিয়ে যেমন দেখিয়েছেন সংসারের আরও অনেক দেশের মানুষকে, আমরাও তেমনি সেই মোহন রাত্রির আনন্দ মদিরার মাঝে দেখতে পেলাম বৃহত্তর মানবজাতির আনন্দবেদনার একক মূর্তিকে।
বিদায় নেওয়ার আগে আকরাম কথায় কথায় একটি চমৎকার গল্প শুনিয়ে গেলেন আমাদের। একবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন অনুষ্ঠান করতে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর হল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি করে হোটেলে ফেরার উদ্যোগ নেন। সামনে ট্যাক্সি দাঁড়ানো। ট্যাক্সিওয়ালা দরজা খুলে দেন তাঁর জন্যে। তিনি ঢুকবেন ট্যাক্সিতে। ঠিক ঐ মুহূর্তে ঝাঁ করে ট্যাক্সির খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল একটি মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ দম্পতি। কোনোরকম মাপজোঁক চাওয়ার বালাই নেই। যেন এই তাদের জন্মগত অধিকার। কালোরা দরজা খুলে দেবে, আর সাদারা কষ্ট করে তাতে ঢুকবে কেবল! অপমানে রাগে আকরামের গা জ্বলে যাচ্ছিল। চোখে পড়ল আরেকটি ট্যাক্সি। থামতে বললেন সেটিকে। ট্যাক্সিতে পা রেখে ওর হঠাৎ করে দারুণ ইচ্ছে হলো বাবাকে ডাকতে তাঁর সেলফোনে। বাবাকে পেয়ে গেলেন এক চেষ্টাতেই। কথা বলছেন বাবার সঙ্গে, হয়তো তার ট্যাক্সিগত তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতেই। এমন সময় তাঁর দ্বিতীয় ট্যাক্সির চালক ফোড়ন কেটে জানতে চাইলেন ‘আপনার বাবার বাড়ি কোথায়’, কারণ আকরামের কথাবার্তা থেকেই টের পেয়েছিলেন ওর বাবার নাম মোশাররফ হুসেন খান। আকরামের তখন মেজাজ খারাপ। আমার বাবার বাড়ি জেনে আপনার দরকার কী? আহা, বলুন না, কোথায়? দরকার আছে। আকরাম তাতে আরও বিরক্ত হয়ে ভাবলেন ঠিক আছে মিয়া সাহেব, আমাকে হোটেলে নিতে হবে না, এখানেই নামিয়ে দিন। চালক এবার একটু নরম সুরেই বললেন, গ্রামের নাম জানলে আমার মনের একটা পুরোনো ধাঁধা দূর হতে পারে, তাই। তখন আকরাম তাঁর বাবার গ্রামের নাম বললেন চালককে, আলগীর চর। তারপর এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। স্বভাবতই সেই চালকটি বাংলাদেশ থেকে আসা। গ্রামের নাম আর তাঁর বাবার নাম শোনামাত্র লোকটি ছোট বাচ্চার মতো ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করলেন। সেকি, আপনি কাঁদছেন কেন? কী হয়েছে? আকরাম একটু অপ্রস্তুত হয়ে যান—একটা বয়স্ক মানুষ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠা হঠাৎ করে, নিশ্চয়ই গুরুতর কোনো কারণ আছে। তখন ভদ্রলোক বললেন সবটা গল্প। আজ থেকে বহু, বহু বছর আগে যখন এই ট্যাক্সিচালক আর তাঁর বাবা একই গ্রামের একই পাড়াতে বাস করতেন, গভীর বন্ধুত্ব ছিল দুজনের মধ্যে, এতটাই বন্ধুত্ব যে একজনের ভালোর জন্যে আরেকজন তাঁর সর্বস্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ছিলেন। তখন একটা সুযোগ এসে যায় বিলেতে গিয়ে চাকরি নিতে। কিন্তু কেবল একজনই যেতে পারবে, দুজন নয় এবং নিজের খরচে যেতে হবে। দুঃখের বিষয় যে ওই সামর্থ্যটি দুজনের বাবাদের কারোরই ছিল না। দুজনের মধ্যে ছাত্র হিসেবে আকরামের বাবাই ছিলেন একটু মাথাওয়ালা। তখন সেই বন্ধুটি নিজের উদ্যোগে, টাকা ধার করে, বন্ধুকে বললেন, তুমিই যাও দোস্ত, আমার তো গোবর মাথা, তার চাইতে বিলেতে গিয়ে তুমিই পারবে উন্নতি করতে। সেই বন্ধুর ধার করা টাকা নিয়েই বিলেতে এসেছিলেন আকরাম খানের বাবা। তারপর কেমন করে যেন, জীবনের নানা টালমাটাল স্রোতের টানে ভেসে ভেসে একে অন্যের সূত্র হারিয়ে ফেলেছিলেন একসময়। কেউ জানতে পারলেন না কে কোথায় আছেন।
গল্পটি আকরাম খান পরের দিন হলভর্তি দর্শকদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন। অনেকে তখন বললেন ওকে যে সেই অভদ্র দম্পতিটি আসলে ছিলেন তাঁর দৈবদূত, ট্যাক্সির ব্যাপারটা ছদ্ম ঘটনামাত্র।
সেদিন আমার বাসার ঘরোয়া ভোজানুষ্ঠানে আমরা কটি গুণমুগ্ধ বাংলাদেশি আকরাম খানের একটি প্রচণ্ডরকম মানবিক মূর্তির পরিচয় পেয়ে ধন্য হলাম। উচ্চমার্গের গুণীজনেরা সব সময় উচ্চমানের মহৎ ব্যক্তি হয় না। আকরাম খানের মাঝে সেদিন তাঁর বিরল ব্যতিক্রম দেখে আমাদের মন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেল। (শেষ)।
(এই লেখাটি ২০১৩ সালের নভেম্বরে লেখা। সে সময় আকরাম খান অটোয়া এসেছিলেন।)

গণিতবিদ
অটোয়া, কানাডা