নটরাজের উৎসবে 'চণ্ডালিকা' ও 'শ্যামা'

সমাজের নিষ্ঠুর বর্ণপ্রথা ও লোকাচারের শিকার চণ্ডালকন্যা প্রকৃতি। একদিন আনন্দ নামের একজন ভিক্ষু তৃষ্ণা নিবারণের জন্য জল চাইল চণ্ডালকন্যা প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতি জানায়, সে অস্পৃশ্য, কী করে জল দেবে ভিক্ষুকে? তরুণ ভিক্ষু চণ্ডালকন্যাকে মানুষের মর্যাদা দেন। জল পান করেন তার হাত থেকে।
মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় চণ্ডালকন্যা প্রকৃতির মনে স্থায়ী আসন তৈরি করে নেন আনন্দ। অসম এই প্রেম নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা। নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমির এই পরিবেশনা মন ছুঁয়ে যায় দর্শকের।

নটরাজ নৃত্যাঙ্গনের ১৭ বছর পূর্তি উৎসবে টিআইসিতে সংগঠনের শিল্পীদের সমবেত নাচ l প্রথম আলো
নটরাজ নৃত্যাঙ্গনের ১৭ বছর পূর্তি উৎসবে টিআইসিতে সংগঠনের শিল্পীদের সমবেত নাচ l প্রথম আলো

১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমির ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সর্বশেষ উপস্থাপনা ছিল এই নৃত্যনাট্য। পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন সঞ্চিতা দত্ত। নৃত্যনাট্যে প্রকৃতি চরিত্রে ছিলেন রুম্পা দেব, মা চরিত্রে প্লাবণী দেবী, দইওয়ালা চরিত্রে সুদীপ দত্ত, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও চুড়িওয়ালা চরিত্রে ছিলেন তন্ময় বড়ুয়া।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গুরুবন্দনা, সরস্বতীবন্দনা ও শিববন্দনার মধ্যে দিয়ে নটরাজের শিল্পীরা শুরু করেন সমবেত কত্থক সন্ধ্যার। নৃত্যের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় স্রষ্টার প্রার্থনা ও গুরুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিল্পীরা। এরপর ১৫ জন খুদে নৃত্যশিল্পী পরিবেশন করে সমবেত নাচ।
খুদে শিল্পীদের পর ছিল বড়দের পরিবেশনা। প্রথমে ওস্তাদ রশিদ খানের গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন সংগঠনের নৃত্যশিল্পীরা। এরপর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘তারানা’ ‘কত্থক’ ও ‘যুগলবন্দি’।
আসরে সঞ্চিতা দত্তের সভাপতিত্বে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক রাফায়েল ইয়েগার ও নৃত্যশিল্পী শারমিন হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সোমা বোস। সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানের পরে মঞ্চস্থ হয় নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিন ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আসরের প্রথম পর্বে নটরাজের নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করেন সৃজনশীল ও লোকজ নৃত্য। আসরে নজরুলের ‘প্রজাপতি প্রজাপতি’, রবীন্দ্রনাথের ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’, ‘ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ’, ‘আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়’, ‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে’ গানের সঙ্গে নাচ মুগ্ধ করেছে দর্শককে। পাশাপাশি ছিল লোকজ গানের সঙ্গে নাচ।
আসরের দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য শ্যামা। যুবক বজ্রসেনের শারীরিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ সুন্দরী নর্তকী শ্যামা। তরুণ উত্তীয় তাকে প্রেম নিবেদন করলেও কামগন্ধহীন সেই প্রেম তাকে আকর্ষণ করে না। তবে বজ্রসেনকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে সে অনায়াসে বলি দেয় উত্তীয়কে।
বণিক বজ্রসেনকে চুরির অপবাদ থেকে বাঁচাতে শ্যামা উত্তীয়কে পাঠায় কোটালের কাছে। কোটাল উত্তীয়কে হত্যা করে বজ্রসেনকে মুক্তি দেয়। অন্যদিকে বজ্রসেন মুগ্ধ প্রেমিক পুরুষ হলেও পাপ-পুণ্যের বিবেচনা আছে তার। শ্যামাকে তাই সে ত্যাগ করে কঠোরভাবে। নৈতিকতা ও শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের এই নাটক দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল। শ্যামা ও বজ্রসেন চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন সঞ্চিতা দত্ত ও সুদীপ দত্ত।