নাচেই প্রিয়াংকার পরিচয়

প্রিয়াংকা সরকার
প্রিয়াংকা সরকার

সাধারণ নৃত্য থেকে শুরু করে ভরত নাট্যম, কত্থক বা লোকনৃত্য—সব ধরনের নাচের তাঁর দখল রয়েছে। নিজে নাচেন, নাচ শেখান। গত দুই বছর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। তিনি আবার বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন ‘রেঞ্জার’-এর একজন সক্রিয় সদস্যও। ইতিমধ্যেই রেঞ্জার সদস্য হিসেবে ভারতে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর নাম প্রিয়াংকা সরকার। এসবের মধ্য দিয়েই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রিয়াংকা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছেন। বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢোকার ইচ্ছে থাকলেও ‘নৃত্যশিল্পী’ পরিচয়টা তিনি কখনো হারাতে চান না।
বাড়ি রাজবাড়ী জেলা সদরে। বাবা ফণীভূষণ সরকার ও মা পুতুল রানী রায় সব সময় পাশে ছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে নাচে হাতেখড়ি। এরপর আর নাচের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়নি প্রিয়াংকার। বাড়ি থেকে উৎসাহ ছিল। বিশেষত বড় চাচার, তিনিই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রিয়াংকাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে প্রিয়াংকা নাচটা ধরে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও। বলছিলেন, ‘ছোটবেলায় সবাই কমবেশি নাচ-গান করে। পরে সেটা ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু নাচটা আমার অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে গেছে। ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়ে ঠিক করেছিলাম, আর যা-ই করি, নাচ ছাড়ব না। তবে এ জন্য মায়ের অবদানই সবচেয়ে বেশি।’
সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তির পর ক্যাম্পাসের নবীনবরণ, পয়লা বৈশাখসহ সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই মঞ্চে প্রিয়াংকাকে দেখা গেছে। তাঁর নাচে মুগ্ধ বন্ধুরা সব সময়ই বলতেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে। উত্সাহী হয়ে প্রিয়াংকা ২০১১ সালে অংশ নেন ‘ম্যাংগলী নাচো বাংলাদেশ নাচো’ প্রতিযোগিতায়। বাংলাভিশনে প্রচারিত সেই অনুষ্ঠানে তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন তিনি। পরের বছর ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’র দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত ছিল তাঁর উপস্থিতি। ২০১৪ সালে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার একক সাধারণ নৃত্য বিভাগে প্রথম পুরস্কার (স্বর্ণপদক) পেয়েছেন। ২০১৫ সালে এই প্রতিযোগিতার ভেন্যু ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবারও তিনি একক লোকে নৃত্যে এবং দলীয় নৃত্যে দলনেতা হিসেবে প্রথম পুরস্কার পান।
সাফল্যের জন্য তিনি বন্ধু-শিক্ষক ছাড়াও ধন্যবাদ দিতে চান নিজের গুরু রাজশাহীর নিক্বণ নৃত্যশিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক হাসিব পান্না, নৃত্যশিল্পী দীপ্তি গুহ্ ও আবদুস সাত্তারকে, যাঁদের কাছ তিনি ভরত নাট্যম, কত্থক, লোক ও সাধারণ নৃত্যে তালিম নিয়েছেন।
ক্যাম্পাসে ক্লাস ছাড়া বাকি সময়ের বেশির ভাগই নাচের অনুশীলনে ব্যস্ত থাকেন। তাই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া রেঞ্জারের সদস্য হিসেবেও সময় দিতে হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর ভারতের পুনে গিয়েছিলেন একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিতে। নিজে এখনো শিক্ষার্থী হলেও এর মধ্যেই নাচের শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন প্রিয়াংকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের ১৫ জন ছাত্রীকে তিনি নাচ শেখান। প্রিয়াংকা বলেন, ‘মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর পারিবারিক বাধাসহ নানা কারণে নাচ থেকে দূরে সরে যায়। আমি চেষ্টা করছি, ওদের চর্চাটা যেন থাকে।’
প্রিয়াংকার নাচের ভক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল মাহমুদ বলছিলেন, ‘প্রিয়াংকা আপুর নাচের কোনো অনুষ্ঠানই বাদ দিই না। খুবই ভালো লাগে। প্রিয়াংকা আপু ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলে আমরা তাঁকে খুব মিস করব।’