নাম পরিবর্তন যেভাবে

আইন অধিকার
আইন অধিকার

যেকোনো কারণে নাম পরিবর্তন বা নামের সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে। কিংবা আপনি চাইছেন আপনি যে নামে কাগজে-কলমে এত দিন পরিচিত হয়ে আসছেন, ওই নামে আর পরিচিত হবেন না। নামটি পরিবর্তন করবেন। এ জন্য আপনার সব সনদপত্র, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম পরিবর্তন করতে চান। কিন্তু চাইলে কি আপনি নাম পরিবর্তন বা নামের সংশোধন করতে পারবেন? হুট করে ঘোষণা দিলেই হবে না, এর জন্য মানতে হবে নির্দিষ্ট আইনকানুন। আর এই কাজে সবচেয়ে জরুরি ও বাধ্যতামূলক হচ্ছে হলফনামা সম্পাদন করা। যথাযথ নিয়মকানুন মেনেই সম্পাদন করতে হবে হলফনামা।

হলফনামায় যা থাকবে
হলফনামা হবে লিখিত। এতে হলফকারীর পূর্ণ নাম-ঠিকানাসহ বাবা এবং মায়ের নাম, জাতীয়তা, বয়স, পেশা, ধর্ম প্রভৃতি উল্লেখ করতে হবে। এর সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করতে হবে। হলফকারী ব্যক্তি কী বিষয়ে হলফ করছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হবে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আগের নাম কী ছিল এবং বর্তমান নামে কী সংশোধন হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। এর সঙ্গে কোন সনদপত্রে, পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রে হলফনামা সম্পাদনের পর থেকে কী নাম ব্যবহার করা হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিতে হবে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই হলফনামা করার পর দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। তবে হলফনামা দিয়ে বয়স পরিবর্তন করা যাবে না। অনেক স্ত্রী তাঁর স্বামীর টাইটেল বা নামের অংশ নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে চান। এ ক্ষেত্রেও হলফনামা বাধ্যতামূলক। অবশ্যই হলফকারীকে হলফনামার সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে। হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। হলফনামার শেষ অংশে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শনাক্ত করাতে হবে।

যেভাবে সম্পাদন হবে
হলফনামা সম্পাদন করতে হয় ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। হলফনামাটি লেখার পর (কম্পোজ বা টাইপ) রোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সত্যায়ন করাতে হবে। নিয়ম হচ্ছে, যিনি হলফনামাটি করলেন তিনি নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর হলফনামাটি সম্পর্কে সত্যপাঠ করবেন। তখন রোটারি পাবলিক বা ম্যাজিস্ট্রেট হলফনামাটি যাচাই-বাছাই করে এর ওপর স্বাক্ষর দেবেন এবং একটি বিশেষ সরকারি সিল ব্যবহার করে এতে ক্রমিক নম্বর বসাবেন। হলফনামাটির একটি ফটোকপি তিনি রেখে দেবেন।

জেনে রাখুন
নাম পরিবর্তনের হলফনামা করে দিলেই সব প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে আপনার নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে তা বলা যাবে না। হলফনামাটি হচ্ছে আপনি যে নাম পরিবর্তন বা সংশোধন করেছেন, তা ঘোষণা দেওয়া এবং পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তা জানান দেওয়া। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র কিছু নিয়মকানুন আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে হলফনামা দিয়ে নাম পরিবর্তন প্রযোজ্য হয় না। তবে আপনি সনদপত্র বা দলিলে নাম পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সঙ্গে হলফনামার কপি সংযুক্ত করে দিতে হবে। তবে একবার হলফনামা করে নাম পরিবর্তন করলে পরবর্তী সময়ে আবারও নাম সংশোধনের হলফনামা করতে গেলে জটিলতা দেখা দেবে। তাই হলফনামা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট