নারীর রক্তশূন্যতা স্বাভাবিক?

অনেকের ধারণা, মেয়েদের খানিকটা রক্তশূন্যতা সব সময়ই থাকে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ধারণাটা ঠিক নয়। এ কথা ঠিক, নারীদের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পুরুষদের স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। পুরুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। নারীদের রক্তে তা ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম। কিন্তু এই মাত্রার চেয়ে কম হিমোগ্লোবিন থাকা স্বাভাবিক নয়।

অনেকে ভাবেন, মেয়েরা মাসিক চক্রে ও সন্তান জন্মের সময় অনেকখানি রক্ত হারায়। তাই রক্তে ৯-১০ মাত্রার হিমোগ্লোবিন কোনো ব্যাপার নয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে (১২ গ্রাম/ডেলি) থাকা মানেই এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। এ সমস্যার প্রতিকার দরকার।

কোনো নারীর হঠাৎ রক্তশূন্যতা ধরা পড়লে অনেকে ধরেই নেন যে মাসিকের সঙ্গে বেশি রক্ত যাচ্ছে বলে রক্তশূন্যতা হচ্ছে। এটাও ভুল ধারণা। ব্লিডিং পেপটিক আলসার, যকৃতের সমস্যা, পাকস্থলী বা অন্ত্রের কোনো ক্যানসার, পাইলসের মতো রোগ যা রক্তশূন্যতার জন্য দায়ী, তা কেবল পুরুষদের হয়, নারীদের হতে পারে না—এমন ধারণা ঠিক নয়। বিশেষ করে মধ্যবয়সী ও বয়স্ক নারীদের রক্তশূন্যতা হলে অন্যান্য জটিল রোগের ও ক্যানসারের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

গর্ভধারণকালে ও স্তন্যপান করানোর সময় আয়রনের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এই চাহিদা পূরণ না হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। অনেক সময় প্রসবে রক্তক্ষরণ এ জন্য দায়ী। তাই বলে এর কোনো চিকিৎসার দরকার নেই—এই ধারণাও ভুল। মায়ের গর্ভকালীন এনিমিয়া গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, মায়ের হার্টেও জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই যথাযথ চিকিৎসা দরকার।

থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য জন্মগত হিমোগ্লোবিনের ত্রুটি অনেকেরই থাকে। এ ধরনের রোগ শৈশবেই ধরা পড়ার কথা। কিন্তু মৃদু ত্রুটি শৈশবে ধরা না–ও পড়তে পারে। অনেক সময় গর্ভধারণকালে এই সমস্যা প্রকট আকারে ধরা পড়ে। কেননা এই সময়ই অনেকের জীবনে প্রথম হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা হয়। তাই সব এনিমিয়াই যে আয়রনের স্বল্পতার জন্য হচ্ছে, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা

পুরুষ
১৩.৫–১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার

নারী
১২–১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর