নিউইয়র্কের প্রদর্শনীতে ১০০ ছবির ৪৫টিই বাংলাদেশের

‘জীবন ছোট, কিন্তু শিল্প চিরকাল বেঁচে থাকে,’ রোমান দার্শনিক মার্কাস টুলিয়াস সিসেরোর কথাটি দিয়েই শুরু করলেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার আর্টের শিক্ষক ফাহমিদা খাতুন। সম্প্রতি তাঁর আঁকা একটি ছবি ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ফেয়ারে স্থান পেয়েছে। ২৭ থেকে ২৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইভ গ্যালারিতে হয়েছে এই প্রদর্শনী।

ফাহমিদা খাতুনের আঁকা ছবিটি
ছবি: সংগৃহীত

নিজের আঁকা ছবিটির বর্ণনা দিতে গিয়ে এই শিল্পী বলেন, ‘মহামারিকাল আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে। চিন্তাচেতনায়, চলায়, জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। সময়টা জানান দিয়েছে, মানুষ মানুষের জন্য, এর চেয়ে বড় সত্য আর নেই। এই সময় নিজের জীবনের পরোয়া না করে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অন্যের জীবন বাঁচাতে। তাঁদের ধন্যবাদ জানাতেই আমার এই ছবি। শক্তির প্রতীক সাদা দিয়ে সমগ্র মানবজাতির পক্ষ থেকে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। ছড়ানো নীলে উঠে এসেছে তাঁদের আত্মত্যাগ আর বলিদান। তাঁদের ত্যাগের মধ্য দিয়ে যে নতুন জীবন, হলুদ ফুলের ছটা, সেই আনন্দ, আশা আর সাহসের প্রতীক। অর্গানিক ফর্ম, রেখা, স্পেস ও অ্যাক্রিলিকের কয়েকটা স্তরের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক কর্তব্য ও বক্তব্য তুলে ধরেছি। সময় এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যে কঠিন সময় পার করে এলাম, তার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে আমার এই ছবি।’

এই প্রদর্শনীর আরকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন ছিল শিল্পী সম্মেলন। বাংলাদেশে ক্লাব ফর ইউনেসকোর সভাপতি, শিল্পী দিলরুবা লতিফ এই প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা। বিশ্বের নানা দেশের শিল্পীদের আঁকা ১০০টি শিল্পকর্ম স্থান পায় এই প্রদর্শনীতে। সংগত কারণেই সেখানে ছিল বাংলাদেশি শিল্পীদের আধিপত্য। ১০০-এর ভেতর ৪৫টি ছবিই ছিল বাংলাদেশি শিল্পীদের আঁকা। বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে এই প্রদর্শনীতে ফাহমিদা খাতুন ছাড়াও অংশ নিয়েছেন একুশে পদক পাওয়া চিত্রশিল্পী জামাল উদ্দিন আহমেদ ও ড. ফরিদা জামান, রোকেয়া সুলতানা, শামীম সুবরানা, জি এম খলিলুর রহমান, মিনি করিম, রিফাত জাহান, মুক্তি ভৌমিকসহ আরও অনেকে। প্রদর্শনীতে প্রত্যেক শিল্পীর একটি করে ছবি স্থান পেয়েছে।

দিলরুবা লতিফের আঁকা ছবি
ছবি: সংগৃহীত

এসব ছবিতে উঠে এসেছে মহামারিকালে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের সংগ্রাম, লকডাউনে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া জীবন, চারপাশের সমাজব্যবস্থা, ধ্বংসস্তূপ থেকে নারীর জেগে ওঠা—এ রকম নানা কিছুর শিল্পরূপ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গ্রিক, টার্কি, ইরানি আর মার্কিন শিল্পীদের ছবিতেও ঘুরেফিরে উঠে এসেছে একই রকমের বাস্তবতা। ছবিগুলো ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আঁকা। এই ছবিগুলো জানান দেয় যে মহামারিকালে সারা বিশ্বের সব মানুষ কমবেশি একই ধরনের বাস্তবতার ভেতর দিয়ে জীবন যাপন করেছে। মহামারিকাল সব শ্রেণিবিভাজন ভেঙে গুঁড়িয়ে সবাইকে একই ধরনের সংগ্রামের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। শিল্পীদের শিল্পকর্মের রঙের সঙ্গেও সাদৃশ্য পাওয়া যায়। যা বার্তা দেয়, সব শিল্পী আসলে ‘একই পৃথিবী’র মানুষ। তাঁদের মাথার ভেতরের জগৎটা অনেকটা একই রকম।  

প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া ১০০ ছবির ৪৫টিই বাংলাদেশের
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে শিল্প ও সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশ অব্যাহত রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ইউনেসকো অ্যাকশন আর্ট ক্লাব। এই প্রদর্শনী বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য বিশ্বব্যাপী তাদের চিন্তাভাবনা এবং সংস্কৃতি বিনিময় করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ।