
ঘরের মানুষ কিংবা বাইরের, পরিচিত এই মানুষগুলোর সঙ্গে চলার পথে দেখা দেয় মনোমালিন্য। তাতেই চেনা মানুষগুলোর সঙ্গে তৈরি হয়ে যায় দূরত্ব। ‘কেন সে আমার ব্যাপারটি বুঝল না?’ বাদ-বিবাদের পর কথাটি আমরা বলে থাকি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার নিজের কোনো দোষ আছে কি না? কিংবা আপনি নিজের সেই দোষ স্বীকার করছেন কি না?
স্বীকার করুন নিজের দোষটাও
কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আলগিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দু-তিনজন ব্যক্তির মধ্যে যখন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তখন শুধু এক পক্ষকে আমরা দায়ী করে থাকি। বিষয়টা কিন্তু একেবারেই ভুল। হয়তো কারও দোষ কম বা বেশি থাকে, তবে প্রত্যেককেই নিজের অবস্থান থেকে বিষয়টি বুঝতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ কেউ একজন হয়তো আপনাকে দোষারোপ করছে, কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি এমন কিছু করেছেন কি না, যার ফলে অপর ব্যক্তিটি এমন আচরণ করছেন।’
আবার এমনও রয়েছে, ব্যক্তি কোনো কাজে সফল হতে না পারলে দোষ সরাসরি চাপিয়ে দেন অন্যের ওপর। হয়তো একটি সিদ্ধান্ত খারাপ হলো, আর অমনি আপনি দোষ দিয়ে বসলেন আপনার পরিবারকে। কেননা ‘পরিবারের জন্যই তো আমি এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছি’ বলে বসলেন।
আর এর ফলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে পরিবারের অন্যদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। অনেক দিনের চেনা বন্ধুও এ কারণে পরিণত হন একেবারে অপরিচিত মানুষে।
তাই ভেবে দেখুন কিছু বিষয়
সুলতানা আলগিন এই সমস্যায় বেশ কিছু পরামর্শ দেন—
১. অন্যের অবস্থানে নিজেকে বিবেচনা করা
আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো দোষটা অপর ব্যক্তিরই। কিন্তু খেয়াল করুন, অপর প্রান্তের ব্যক্তিটিও হয়তো তা-ই মনে করছেন। শেষমেশ কোনো সমাধানই কিন্তু হচ্ছে না। তাই বিষয়টিকে অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করুন। আপনারও কোনো দোষ আছে কি না, যার ফলে সূক্ষ্ম কারণে হলেও এই বিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।
২. ভালো-মন্দ মেনে নেওয়ার মানসিকতা
জীবনে চলার এই পথটা একান্তই আপনার। তাই পরিবার বা কাছের মানুষ বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। সেটি নেওয়ার সময় সফলতা কিংবা ব্যর্থতা দুটোকেই মাথায় রাখুন। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক না-ও হয়, তারপরও অযথা কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। কেননা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নিজেরই।
৩. নিজে ছোট হওয়ার কিছুই নেই
হ্যাঁ, ভুলত্রুটি তো মানুষই করে। আপনিও না হয় ভুলবশত এমন কিছু বলে ফেলেছেন যার ফলে এই দ্বন্দ্ব। কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করে অপর প্রান্তে থাকা মানুষটিকে জানিয়ে দিন। তাঁকে বুঝিয়ে বলুন। আর এই ভুল স্বীকার করায় ছোট হওয়ার কিছু নেই।
৪. আলোচনা করে বুঝিয়ে বলুন
কোন বিষয়টি আপনাকে আঘাত করেছে, সেটি খোলামেলা করে বুঝিয়ে বলুন। কেননা কোনো কিছু চাপিয়ে না রেখে আলোচনা করার মাধ্যমেই সমাধান মিলবে। এবার ভেবে দেখুন তো, আপনার নিজের দোষটা কোথায়!