নিরাপদে পানি পান...

.
.

পানির বিকল্প কোনো কিছুই নয়। তবে সেটা যদি হয় বিশুদ্ধ, তবেই। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে তা আপনার জীবনের অনেক ক্ষতি পর্যন্ত করতে পারে। নানাভাবে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। পানি ফুটিয়ে বা ফিটকিরি ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া অনেক পুরোনো। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার। কম সময়ে, কোনো ঝামেলা ছাড়াই, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার সহজ পদ্ধতি এটা।
বিশুদ্ধ পানিবিষয়ক নানা গবেষণার গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শারমিন রুমি আলীম বলেন, ‘বর্তমানে শহরের পানিতে প্রচুর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব থেকে থেকে টাইফয়েড, জন্ডিস, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওয়াটার ফিল্টার একটি ভরসার নাম। আমরা আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছি যে বাজারে যেসব ফিল্টার পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই ভালো।’ তবে কিছু নকল কোম্পানি থেকে সাবধান থাকতে হবে। আর ফিল্টার ব্যবহারেও সাবধান থাকতে হবে। নিয়মিত পানি পরিবর্তন ও একটি নির্দিষ্ট সময় পর ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে।
বসুন্ধরা সিটির ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে প্রায় সবাই পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার ব্যবহার করছেন। কারণ, ঢাকাসহ সারা দেশেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়া দুষ্কর। এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে বাজারে নতুন নতুন কোম্পানির আরও উন্নত পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার আসছে মাঝেমধ্যেই। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কয়েক স্তরে পানি বিশুদ্ধ করা হয় এই পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টারে।
বাংলাদেশে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার
বাংলাদেশের বাজারের বিভিন্ন দেশের নানা ব্র্যান্ডের পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার রয়েছে। প্লাস্টিক ও ইস্পাতের তৈরি ফিল্টার বাজারে পাওয়া গেলেও সব ধরনের মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লাস্টিকের তৈরি ফিল্টার। এই ফিল্টারের মধ্যেও অনেক ভাগ আছে। তবে রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। এই ফিল্টার পানি বিশুদ্ধকরণের এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে দূষিত পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ করে ফেলা যায়। শতভাগ বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা পাবেন এই ফিল্টারে। কার্বন ফিল্টার সম্পূর্ণ পানি পরিষ্কার করতে পারে না। ব্র্যান্ডের কথা বিবেচনা করলে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রায় সব পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার পাওয়া যায়। এর মধ্যে বর্তমান বাজারঘুরে চীনের ব্রান্ড নোভা, নোকা, এ্যাকোয়া, জেসিএল সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে লক্ষ করা গেল। তবে ইভা, ডেলকোল, কোকো, এভারকো, মিয়াকো, পিওরেড, বাজাজ ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলোও বেশ কিনছেন ক্রেতারা। এ ছাড়াও ক্রেতার চাহিদার তালিকায় আছে হল্যান্ডের গ্রিন কিট বা ভারতের পিউর ইট বা কেন্ট। প্রাণ আরএফএল কোম্পানিও বাজারে এনেছে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার।
কীভাবে পরিষ্কার রাখবেন
বিশুদ্ধ পানি পেতে পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা উচিত। ফিল্টারের মধ্যে কোনোভাবেই শেওলা জমতে দেওয়া যাবে না। প্রতি সপ্তাহের একবার ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে। তবে ফিল্টারের ভেতর সাবান বা ডিটারজেন্ট দেওয়া যাবে না। একটা বাটিতে ডিশ ওয়াশিং লিকুইড গুলিয়ে হালকা নেট দিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। পানিতে কেমন ময়লা থাকে তার ওপর ভিত্তি করে নিয়মিত কার্টিজ বদলাতে তবে। প্রতি ছয় মাসে কার্টিজ বদলানো আবশ্যক।‌
পানির ফিল্টারের উপকারিতা
বিশুদ্ধ পানি ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। বর্তমান সময়ে বিশুদ্ধ পানির উৎস নেই বললেই চলে। তাই ফিল্টারের আমাদের পানিই ভরসা। আমাদের প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির চাহিদা এখন মেটাচ্ছে বাজারের নানা ব্র্যান্ডের এসব ফিল্টার। এতে খুব সহজে, কম খরচে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছেন আপনি।
পানির ফিল্টারের অপকারিতা
কিছু কিছু ভুয়া কোম্পানি বাজারে তাদের তৈরি পানির ফিল্টার বিক্রি করছে। এসব ফিল্টারে পানি ঠিকমতো বিশুদ্ধ হয় না। ফলে অজান্তেই জীবাণুযুক্ত পানি পান করে ফেলতে পারেন আপনি। তাই পানির ফিল্টার কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে পানির ফিল্টার মধ্যে শেওলা জমে যায়। এই পানি পান করলে আপনার শরীরের ক্ষতি হবে।
ফিল্টারের দাম
ব্র্যান্ডভেদে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টারের দামও পরিবর্তিত হয়। অনেক ভালো ব্র্যান্ডের ফিল্টারের গুণগত মান, পানির ধারণক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে দাম বেশি হয়। বাংলাদেশের বাজারে পিউরইট ২৩ লিটার, গ্রিন কিট ২৩ লিটার, কেন্ট ২০ লিটার ও মিয়াকো, জেসিল, নোভা পাওয়া যাচ্ছে ১৪ থেকে ৩২ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এই হিসেবে দামে ভিন্নতা রয়েছে। ২৩ লিটার পিউর ইট ক্ল্যাসিক পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার ৯৯০ টাকায়, কেন্ট ৩ হাজার ৩০০ টাকায়, গ্রিন কিট ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। অন্যগুলো পাওয়া যাবে আকারভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তির ফিল্টারের দাম ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ঢাকার প্রায় সব বড় মার্কেটেই এখন পাওয়া যায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, উত্তরা, রামপুরাসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক ও গৃহস্থালি সামগ্রীর দোকানে পাওয়া যাবে পানির ফিল্টার। তবে মাথায় রাখতে হবে মার্কেটভেদে অনেক সময় দামের একটু ওপর-নিচ হয়।