নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পাখিরা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার খাল–বিলের চর, ফসলের খেত—সর্বত্রই তামাকের আগ্রাসন। তামাকখেতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত কীটনাশক। এ জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে পাখির বিচরণক্ষেত্র। উপজেলার যে ​কয়েকটি স্থানে তামাক চাষ হয় না, সেখানেই খাবার ও আশ্রয়ের সন্ধানে ভিড় করে নানা জাতের পাখি। ছবিটি ৮ মার্চ পাবলাখালী বিল এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার খাল–বিলের চর, ফসলের খেত—সর্বত্রই তামাকের আগ্রাসন। তামাকখেতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত কীটনাশক। এ জন্য সংকুচিত হয়ে আসছে পাখির বিচরণক্ষেত্র। উপজেলার যে ​কয়েকটি স্থানে তামাক চাষ হয় না, সেখানেই খাবার ও আশ্রয়ের সন্ধানে ভিড় করে নানা জাতের পাখি। ছবিটি ৮ মার্চ পাবলাখালী বিল এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার খাল, বিল ও নদীর চর এবং ফসলি জমিতে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য–সংকটে পড়েছে পাখিরা। তামাকখেতে ক্ষতিকর কীটনাশক ছিটানোর কারণে অনেক এলাকায় পাখির সংখ্যাও কমে গেছে। তামাক চাষ হয় না এমন কয়েকটি এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে পাখিরা।
উপজেলার পাবলাখালী ও তারাবনিয়া বিলের একাংশে তামাক চাষ হয় না বলে নিরাপদ পরিবেশ ও খাদ্যের সন্ধানে এ দুই বিলে ছুটে আসছে নানা জাতের পাখি। সম্প্রতি ওই এলাকাগুলোতে গিয়ে সাদা বকসহ নানা জাতের পাখি দেখা গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখির সংখ্যা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে পাবলাখালী বিলে দেখা যায়, বিলের কৃপাপুর গ্রামের কাছাকাছি সদ্য রোপণ করা ধানের জমিতে সাদা বক, শালিক, মাছরাঙা ও ঘুঘু পাখি চরে বেড়াচ্ছে। খেতে কর্মরত চাষিরা জানান, পাখিদের কেউ বিরক্ত করে না। কয়েক বছর ধরে এ বিলে পাখি শিকার করতে দিচ্ছে না এলাকাবাসী। কৃপাপুর গ্রামের সুভাষ চাকমা (৪৫), রূপায়ণ চাকমা ও (৩৮) নয়না চাকমা (২৪) বলেন, ‘প্রতিবছর তামাকের চাষ শুরু হলে পাবলাখালী বিলে বকসহ নানা জাতের পাখি আসে। আমাদের গ্রামে পাখি শিকার নিষেধ। আমরা যখন জমিতে কাজ করি, তখন পাখিরা আমাদের আশপাশেই বিচরণ করে। আমরা বিরক্ত করি না। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখির সংখ্যা কমে গেছে। অন্যান্য বছর সাদা বকের বড় একটি দল আসত। এ বছর সাদা বকের বড় দলটি আসেনি।’
তারাবনীয়া বিলে গিয়ে দেখা যায়, এ বিলের দুই অংশে তামাক চাষ থাকলেও তারাবনীয়া গ্রামের পাশের বিলের একাংশে তামাক চাষ হয় না। বিলের জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। ধানি জমিতে বিচরণ করছে সাদা বক ও ঘুঘু পাখির দল। বিলের মধ্যে বিচরণ শেষে আশপাশের গ্রাম ও বাড়ির আঙিনার গাছে আশ্রয় নেয় পাখিরা।
৮ মার্চ বিকেলে তারাবনিয়া এলাকার সবিতা চাকমার বাড়ির একটি গাছে পাখিদের আশ্রয় নিতে দেখা যায়। সবিতা চাকমা বলেন, ‘বকের দলটি আমাদের ভিটার গাছটিতেই থাকে। আমরা কখনো বিরক্ত করি না।’
তারাবনীয়া গ্রামের কয়েকজন কিশোর জমির পাশেই আড্ডা দিচ্ছিল। কথা হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী পরান্টু চাকমা, বিশ্বজিৎ চাকমা, ছোটন চাকমাসহ কয়েকজন কিশোরের সঙ্গে। তারা বলে, তারাবনীয়ায় পাখি শিকার সম্পূর্ণই নিষেধ। প্রতিবছরই বকসহ নানা জাতের পাখি আসে তারাবনীয়া বিলে। তিন বছর আগে এক ব্যক্তি ঘুঘু শিকার করার জন্য এসেছিল। আমরা গ্রামবাসীরা তাঁকে ধাওয়া করেছি। এখন আর শিকারিরা আসতে সাহস করেন না।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী বলেন, পাখিরা নিরাপদ পরিবেশ চায়। আর দীঘিনালায় এখন সবত্র তামাকের আগ্রাসন ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পাখিদের খাদ্য সংকট হয়েছে। ফলে নিরাপদ খাদ্যের সন্ধানেই পাখিরা হয়তো তারাবনীয়া ও পাবলাখালী বিলে বিচরণ করছে। তবে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।