নীলা নামের মেয়েরা

.
.

একটা মেয়ে আছে, নীলা। সারাক্ষণ বকবক করে, আর আমি হা করে তাকিয়ে থাকি মন্ত্রমুগ্ধের মতো। কী এত কথা বলে মেয়েটা, বুঝি না। আমি শুধু জানি, নীলা কথা বললে চোখের তারা দুটো লাফাতে থাকে। সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে খেলা করা হরিণ। দাঁত দুটো একটু হলদে হলেও হতে পারে, আমার কাছে প্রবাল দ্বীপের মুক্তা। নীলা একটা কথা শুরু করেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। একটা আস্ত পৃথিবীর মতো ঘুরঘুর করে ওর মন, আমি বোকা একটা উপগ্রহ, পোড়ামুখো চাঁদ। নীলা গ্রহটার রাতের আকাশে এক কোনায় পড়ে থাকলে বর্তে যাই।
আরেক নীলা কাঁদতে জানে খুব। এই নীলাটাকে আমি আরও ভালোবাসি। গত শরতে কাশবনের মাঝে বসে হাতটা যখন ধরলাম এক সোনা বিকেলে, আর বললাম ভালোবাসি, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই কেঁদে ফেলল মেয়েটা। নানা টিউব আর ডট কমের যুগে কেউ এত সুন্দর করে কাঁদতে পারে মনের ভেতর থেকে, জানতাম না। এই অশ্রুর দাম আমি কীভাবে দেব, নীলা?
নীলা যখন রাগ করে, ঝগড়া করে, গাল ফুলিয়ে ধুম মেরে থাকে, আমিও এক-আধবার মাথা গরম করে ফেলি, সেদিন কুরুক্ষেত্র বেধে যায়। তখন যেন আরেক নীলা। এই নীলা অভিমান করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন বন্ধ করে রাখে, দিনের পর দিন ফেসবুক থেকে সরে থাকতে পারে, মাসের পর মাস রাত জেগে ফোঁপাতে পারে, আর জীবনের পর জীবন ভালোবাসতে পারে। শুধু ভালোবাসতেই পারে।
মজার একটা নীলাও কিন্তু আছে। ভার্সিটির মাঠে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে নেমে যায়, ঝুম বর্ষায়। সাঁতরে ঘোলা করে গ্রামের পুকুরের জল। রসায়নের অ্যাসাইনমেন্টের আগের রাতে অনন্ত জলিলের সিনেমা দেখে ক্লাসে জবুথবু হয়ে বসে থাকে। রাত দেড়টায় টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে ফোন করে শিল্পীকে বলে, ভাই আপনি কে, আপনাকে তো জীবনে দেখিনি!
আমি খুব ভালো স্বপ্ন দেখতে পারি। একটা স্বপ্নে আমি নীলা নামের একটা মেয়েকে দেখি। লাল শাড়ি, কালো টিপ পরে বউ সেজে বসে আছে। আর একটাও গয়না নেই। আমাদের বিয়ে হচ্ছে, একটা ছোট্ট নদীর তীরে, প্রিয় সোনালি কাবিন। ওপরে একটা নীল আকাশ, নিচে সাদা কাশবন। আমরা দুজন বসে আছি। নীলা আমার বুকে মাথা গুঁজে আছে। নদীর ঢেউ ভাঙছে, আর একটা চাপা পরিণয়।
এই একজীবনে আমার কল্পনার নীলা নামের মেয়েগুলো আমাকে জড়িয়ে রাখে। প্রিয় উত্তরীয় একটা।
আহাদ আদনান
মাতুয়াইল, ঢাকা