
সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। ক্যাম্পাসে পৌঁছাতেই ডোনা আমার দিকে একটি নীল রঙের গিফট বক্স এগিয়ে দিল। আমি উচ্ছ্বাসে প্রায় চিৎকার করে উঠলাম, ‘ওয়াও! নীল! নীল তো আমার ভীষণ প্রিয়।’
আর তখনই আচমকা কোত্থেকে একটা ছেলে এসে বলল, ‘তাই, আমাকে তোমার ভালো লাগে?’ ঘটনার আকস্মিকতায় কেমন যেন একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। আর সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটিকে একটা জোরালো ধমক দিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে। এটাই ছিল নীলের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা।
১.
কিছুদিন পর, টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে আর আমি ছাতা নিয়ে লাইব্রেরির দিকে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ বর্ষণের মাত্রা এত বেড়ে গেল যে ছাতাও বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পারল না। আমি দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। এমন সময় দেখি, সামনে কয়েকটি পথশিশুর সঙ্গে নীল। ওদের সবার হাতে কুলফি মালাই। এই বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় আইসক্রিম হাতে লাফালাফি করছে। দৃশ্যটা উপভোগ্য। কিন্তু আমি আরও দ্রুত হাঁটছি। হঠাৎ নীল দৌড়ে এল আমার সামনে। দুহাতে দুটি আইসক্রিম। একটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘মালাই খাবে?’ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এবার আর ধমক দিতে পারলাম না। সত্যিই কোনো ছেলের চোখে এত মায়া থাকতে পারে, সেটা প্রথম বুঝেছি নীলকে দেখে। ছোট এক শব্দে বললাম, ‘না।’ ও সঙ্গে সঙ্গেই পুরো মালাই মুখের পুরে দিয়ে চলে গেল।
২.
আরও কিছুদিন পর, দুপুরের প্রচণ্ড রোদ মাথায় করে হলের দিকে যাচ্ছি। একটু পরই আবার ফিরে আসতে হবে ল্যাবরেটরিতে। বিজনেস ফ্যাকাল্টির পাশে দেখলাম নীলকে। কৃষ্ণচূড়াগাছের নিচে, গিটার বাজিয়ে গান করছে। অসাধারণ ওর গানের গলা! মোহনীয় সুর আমাকে যেন থমকে দিল। নীলকে ঘিরে ভিড় জমেছে। আর আমি কোথায় যেন হারিয়ে গেছি। আবারও আচমকা একটা কাণ্ড ঘটল। নীল সামনে এসে বলল, ‘আমার গান তোমার ভালো লেগেছে?’ আশপাশের ছেলেরা শব্দ করে হেসে উঠল। আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। তাই ওকে কিছু না বলেই দ্রুত চলে গেলাম।
৩.
পরদিন মনে মনে ওকে অনেক খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। তার পরের দিনও না। আরও এক দিন গেল, সেদিনও দেখা পেলাম না।
৪.
আজ এত দিন পরেও খুঁজে পাইনি নীলকে। জানি না সেদিনের ঘটনাগুলো সত্যিই ঘটেছিল কি না। নাকি তা ছিল শুধুই আমার মনের অবাস্তব কল্পনা। তবু যদি এখনো কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কাউকে ভালো লাগে?’ একটু হেসে আমি তাকে এড়িয়ে যায়। কারণ, কথাটি আমি শুধু তোমাকেই বলতে চাই, নীল।
‘নীল আমার ভীষণ প্রিয়।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়