নৃত্যে আমার মুক্তির রূপ

বড় হয়ে কী হতে চাও? ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার? প্রশ্নটি একজন শিশু বা কিশোর তার জীবনে কম করে হলেও হাজারবার শুনে ফেলেছে। যারা একটু বুদ্ধি রাখে, তারা জানে যে প্রশ্নটির মাঝেই উত্তর লুকিয়ে আছে। আর সেটা বলে দিলেই অন্তত ১০ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত। আমার মতো যাঁরা নতুন করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন, তাঁদের জন্য জীবনটা কি একটু কঠিন? হতেও পারে। ছোটবেলায় এই গতানুগতিক প্রশ্নটা কানে এলেই নির্দ্বিধায় বলে ফেলতাম, ‘নৃত্যশিল্পী হব’। আরও ছোটবেলায় বলতাম ‘নাচ করব’। সবাই স্নেহমাখা হাসি হাসতেন। এ নিয়ে আলোচনা আর এগোত না। এগোবে কেন? নাচ কি কোনো ‘প্রফেশন’? এটা কি কোনো শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু? কেবল আমার মা ডা. হোসনে আরা বেগম দৃঢ়স্বরে সবাইকে বলতেন, ‘আমার ছোট মেয়ে পড়বে না, চাকরিও করবে না, ও শুধু নৃত্যশিল্পী হবে।’ আর তাই শুনে আমার সে কী আনন্দ। বিটিভির রুমঝুম নৃত্যানুষ্ঠান থেকেই আমার নৃত্যশিক্ষার শুরু।
গভীর আগ্রহ ও উত্তেজনা নিয়ে অনুষ্ঠানটির জন্য অপেক্ষা করতাম আমি আর আমার বোন। যা শিখতাম, তাই অতি আগ্রহের সঙ্গে বাড়িতে আসা অতিথিদের সম্মুখে উপস্থাপন করতাম। বাবা-মা এই আগ্রহ দেখে আমাদের দুই বোনকে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের নৃত্য বিভাগে ভর্তি করালেন। শুক্রবার সকাল আটটায় ক্লাস। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক না কেন, ক্লাসে কেউ উপস্থিত থাকুক বা নাই থাকুক, আমরা দুই বোন ইউনিফর্ম পরে হাজির। বিকেলে পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলতে বেরিয়েও খেলার মাঝেই নৃত্য অনুশীলন করে নিতাম। এ যেন খেলারই একটি অংশ। এক বছর পেরিয়ে গেল, পরীক্ষাও দিলাম। বাবার হাত ধরে রেজাল্ট আনতে গেলাম। ‘আশ্চর্য’, বাবা মাকে বললেন, ‘তোমার মেয়ে তো ফার্স্ট হয়ে গেছে।’ আমিই অবাক। ক্লাসে প্রথম হওয়ার মতো কী পরীক্ষা দিয়েছি মনে পড়ল না। তবে বাবার উচ্ছ্বাস দেখে ভালো লাগল। পড়াশোনায় বরাবরই অমনোযোগী ছিলাম। ভালো ফল কখনোই উপহার দিতে পারিনি বাবা-মাকে। নাচের রেজাল্টটাই যেন আমার একমাত্র অর্জন। ছায়ানটের শিক্ষকদের প্রাণঢালা চেষ্টা ও আমার আগ্রহে চলতে থাকে আমার নৃত্য প্রশিক্ষণ। তারই মধ্যে মনের ক্যানভাসে এঁকে চলেছি নানা ছবি, কখনো আঁকি নটরাজের ছবি, আবার ভাবি অন্য কিছু। আসলে মনের ক্যানভাসটা বড়ই মজার। এই আঁকি, আবার এই মুছে ফেলি। এই আঁকিবুঁকির খেলায় আর সব ছবি মুছে গেলেও নটরাজের জলছাপটা যেন রয়ে গেল ক্যানভাসে। হঠাৎ জানতে পারি, ছায়ানটের এক নৃত্যশিক্ষক নৃত্যে মাস্টার্স করতে ভারতে গেছেন। অবাক হলাম। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। নাচ নিয়েও পড়াশোনা হয় নাকি? নাচের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় আছে? হাতে চাঁদ পেলাম যেন। মাকে বললাম সে কথা। মা বললেন, নিশ্চয়ই পড়বি। আহ্, যেন সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল এক মুহূর্তেই। আমাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কিছুই হতে হবে না। আমাকে কারও সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে না। নৃত্যচর্চায় আরও মনোযোগী হলাম। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছে, আমি তখন তাল-বোলের বই নিয়ে চর্চা করি। আমার বড় ভাই হেসে বলতেন, এই পরিশ্রমটা যদি তুই পড়াশোনায় দিতি, তবে তোর উন্নতি নিশ্চিত ছিল। আমিও হাসতাম, কারণ আমি তো পড়াশোনাই করছি। তবে তা গতানুগতিক পড়াশোনা নয়, এটা সত্য। এইচএসসি পরীক্ষায় কোনো রকম উতরে গেলাম। সবাই তখন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর আমি তখন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। আত্মীয়স্বজন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন, ‘এই মেয়ের তো আর পড়াশোনা হবে না। বিয়ে দিয়ে দাও। নাচ আর কদিন করবে।’ অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, আমার মা এর দৃঢ় প্রতিবাদ করলেন। সেই সময়েও আমার মায়ের মনোবল আর আধুনিকতা দেখে আমি আরও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই। আমাকে নাচ নিয়ে পড়তেই হবে। কিন্তু কোথায় যাব, কার কাছে জানতে পারব? নৃত্যশিক্ষকেরাই বললেন, যেও না এখন। আগে পড়াশোনা শেষ করো। নইলে জীবনে কিছুই করতে পারবে না। আবারও একি প্রশ্ন মনে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের পড়াটা আসলে কি পড়াশোনা নয়? মনে জেদ চেপে গেল। তবে তা-ই হোক। আগে গতানুগতিক পড়াশোনা শেষ করব, তার পরেই না হয় যাব। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে। মাস্টার্স শেষ হলো। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলাম। এবার তো আর কোনো বাধা নেই। ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত মণিপুরি নৃত্য কর্মশালা পরিচালনা করতে পর পর চার বছরে ছয়বার আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসেন গুরু কলাবতী দেবী। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি, নাচ নিয়ে সারা বিশ্বে কত কিছুই হচ্ছে। তাঁদের অনুশীলনের মাত্রা, তাঁদের নৃত্য পরিচালনার ভাবনা। নাচ যে শুধু বিনোদনের বিষয় নয়, শুধু শারীরিক কসরৎ নয়, শ্রীমতী কলাবতী দেবী নাচ নিয়ে আমার মনে যে ভাবনার বীজ বুনে গিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালে তাকে বৃক্ষে রূপান্তরিত করার বোধ করি সময় এসেছে। পরিবারের হাজারো প্রশ্নের ভিড় এড়িয়ে মায়ের উৎসাহে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনে (আইসিসিআর) বৃত্তির জন্য পরীক্ষা দিই। এবার অপেক্ষার পালা। একদিন একটি চিঠি এল। আমি শাস্ত্রীয় মণিপুরি নৃত্যে রবীন্দ্রভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্সে মনোনীত হয়েছি। চিঠিটা পড়ে মনে হলো আমার পায়ের শিকল খুলে গেছে। আমি এখন মুক্ত। সব সামাজিক ও পারিবারিক প্রশ্নের বেড়াজাল থেকে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কেউ কেউ বললেন, এই তো সংসার করার সময়, এখনই তো চাকরি করার সময়। বন্ধুরা তখন বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি করছে। আর আমি তখন মাত্র ছয় হাজার ৬০০ টাকার বৃত্তি নিয়ে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছি। হ্যাঁ, পরিকল্পনা তো বটেই, কারণ সবার মতে আমার ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত? গুরুর মুখেই শোনা, শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীর ক্যারিয়ার নাকি ৩০ বছর বয়সের পর থেকে শুরু হয়। প্রশ্ন করেছিলাম, কেন এমন? বলেছিলেন, নৃত্যশিল্পীর অভিজ্ঞতা, অভিনয়, নৃত্যকৌশল—সবকিছুরই পরিপক্বতার প্রয়োজন। আর তা যেন একটি নির্দিষ্ট বয়সের নৃত্যচর্চার মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা পায়। মনোবল ফিরে আসে আবারও। পাড়ি জমালাম ভারতে। সঙ্গে আমার মা আর বোন। পুঁজি তখন একমাত্র মনোবল। রবীন্দ্রভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। গুরুগৃহে থেকে শেখার যে আনন্দ, তা কি আর কিছুতে আছে? জানা নেই। ভোর পাঁচটায় উঠে অনুশীলন করা, সকাল ১০টা অবধি চলে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া। সারা দিন নৃত্যবিষয়ক কত কিছু নিয়েই যে আলোচনা। মনের জানালাগুলো যেন একে একে খুলে যাচ্ছে। কত কিছুই যে জানতাম না। নৃত্য যে শুধু এখন বিনোদন নয়, নৃত্যের মাধ্যমে চলছে সমাজ সংস্কারের কাজ, ড্যান্স থেরাপির মাধ্যমে মানুষকে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত করা হচ্ছে, কারাগারের সংশোধনাগার কেন্দ্রে নৃত্যের মাধ্যমে অপরাধীদের সংশোধন চলছে, আরও কত কী? মুগ্ধ হয়ে পড়ি নৃত্যগুরুদের আত্মকাহিনি, কত লড়াই, কত পরিশ্রম, কত আত্মত্যাগের কাহিনি। দেখি কত আন্তর্জাতিক মানের নৃত্য পরিবেশনা। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে কত কিছুই না জমা হচ্ছে। ভাবতে ভালো লাগছে, মনের মধ্যে নৃত্য সম্বন্ধে যে বীজটা ছিল, তা অবান্তর কিছু নয়। নৃত্য শুধু নৃত্যশৈলীর প্রদর্শন নয়, তার সাথে সংযুক্ত হয় আলোক সম্পাদন, মঞ্চসজ্জা, পোশাক, নাটকীয়তা। তবেই না একজন পরিপূর্ণ নৃত্যশিল্পীর দক্ষতা প্রকাশ পাবে। চলতে থাকে আমার নৃত্যের চর্চা। বৃত্তির টাকায় অনেক চাহিদাই হয়তো পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু মনের চাহিদাটা পূরণ হয়েছে সত্য। আমার গুরু কলাবতী দেবী একদিন মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, ‘আমার ইচ্ছে তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অর্জন করো। এটাই আমার গুরুদক্ষিণা। তবে না হলেও ক্ষতি নেই। প্রাণ ঢেলে নাচ করবে।’ রবীন্দ্রভারতী বিদ্যালয়ে শিক্ষাকালীন পাঁচটি বছরের এমন একটি দিনও নেই যেদিন আমি আমার এ কথাটি স্মরণ করিনি। কখনোবা অনুশীলন করতে করতে কখন যে রাত তিনটে বেজে গেছে, খেয়াল করতে পারিনি। শুধু জানতাম, ভালো আমাকে করতেই হবে। নিজের জন্য, দেশের জন্য, আমার গুরুর জন্য তো বটেই। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করি। স্বর্ণপদকটি হাতে পেয়েই মনে হলো, এই বোধ করি নৃত্যজীবনের যাত্রা সবে শুরু হলো। অনেক কাজ করতে হবে। পেরোতে হবে অনেক পথ। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নটীর পূজা অবলম্বনে হে অনন্ত পূণ্যতা নামক প্রথম নৃত্যনাট্যটি পরিচালনা করি। এরপর কবিগুরুর তাসের দেশ-এ কাজ করতে গিয়ে মনে হলো নটীর পূজার শ্রীমতী আর তাসের দেশ-এর ‘হরতনী’ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি। যারা কিনা তথাকথিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের বেড়াজাল ভেঙে নৃত্যের মাধ্যমেই তাদের মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছিল। সাধনা প্রযোজিত এ দুটি নৃত্যনাট্য বেশ প্রশংসাও পেয়েছিল।
সুস্থ নৃত্যচর্চার বিষয়টি ছায়ানট আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে। তবে সুশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা আমাদের দেশে এখন অবিরাজমান। এখনো স্বপ্ন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃত্য বিভাগে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। গর্বের সাথে বলছে, ‘আমি একজন নৃত্যশিল্পী, নৃত্যই আমার পেশা।’ ভারতে শিক্ষাকালীন নৃত্যের সুবাদে দিল্লি, লক্ষ্ণৌ, কলকাতা, আহমেদাবাদ, পাটনা, বিশাখাপট্টনাম, ওডিশা, কটক প্রভৃতি স্থানে নৃত্য পরিবেশনের সুযোগ পেয়েছি। সেখানকার দর্শক খুব আশ্চর্য হতেন। প্রশ্ন করতেন, বাংলাদেশে নাচ হয়? আমি গর্বের সাথে বাংলাদেশের নৃত্য ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করতাম। তাঁরা মুগ্ধ হতেন। অনেকে এখনো ভাবেন, নৃত্যশিল্প কোনো শিক্ষার অংশ নয় বা পেশা হতে পারে না। আমি তাঁদের ভুল শুধরে দিতে চাই। বর্তমানে বিশ্বে নৃত্য শিক্ষাপদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। সারা বিশ্বে বহু নৃত্যশিল্পীই এই শিল্পকে তাঁদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। উপহার দিচ্ছেন কালজয়ী পরিবেশনা। যা কিনা বেঁচে থাকবে হাজারো বছর। নৃত্য একটি 'Universal Language'। বহুভাষাভাষিদের মাঝে আমরাই কিন্তু বিশ্বের সম্মুখে আমাদের দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে সক্ষম। জানাতে পারি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আজ প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী আকরাম খান নৃত্যের মাধ্যমে আমাদের দেশ ও তার ঐতিহ্য সারা বিশ্বের সম্মুখে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছেন, যা কিনা সত্যিই গর্বের বিষয়। দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি নৃত্য শিক্ষার ক্লাস থাকা একান্ত জরুরি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে নৃত্যের ক্লাস আরম্ভকালীন এর নাম দিয়েছিলেন শারীরিক ব্যায়ামের ক্লাস। তৎকালীন সমাজব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে হয়তোবা এমনটি করতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে নৃত্যের মতো একটি দৃঢ় শিল্পমাধ্যমকে শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিতে বাধা কোথায়? নৃত্যের সুবাদে ভ্রমণ করেছি ভারত, নেপাল, ভুটান, কুয়েত, কাতার, আমেরিকা, জার্মানি, মালয়েশিয়া, জাপান, কোরিয়াসহ আরও অনেক দেশ। নৃত্যশিল্পী হিসেবে অন্যদের তুলনায় সেখানে মর্যাদাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো কমতি হয়নি। বরং একটু বেশিই পেয়েছি। কারণ একজন নৃত্যশিল্পী প্রকৃতপক্ষে একজন দক্ষ সংগঠক হয়ে ওঠেন। নৃত্যশিক্ষা একজন মানুষকে পরিশ্রমী, রুচিশীলতা, পরিমিতিবোধ, দায়িত্বশীলতা শেখায়। আর এগুলোই হচ্ছে একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পীর মূলমন্ত্র। এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই গড়ে তুলেছি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘ধৃতি নর্তনালয়’। সারা দেশ থেকে অনেক ছাত্রছাত্রীই এখানে নৃত্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শুধু নাচই নয়, তাদের নৃত্যের সব বিষয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে একজন পেশাদার দক্ষ নৃত্যশিল্পী তৈরি করাই আমার ‘ধৃতি নর্তনালয়ের’ মূলমন্ত্র। যেন প্রতিটি নৃত্যশিল্পীই আমার মতোই যেন জোর গলায় বলতে পারে, ‘আমি একজন নৃত্যশিল্পী, আর নৃত্যশিল্পই আমার পেশা।’ সফলতা ব্যাপারটি বড়ই আপেক্ষিক। সফলতার আদৌ কোনো মাপকাঠি নেই। তবে বিশ্বাস করি, পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। আমার গুরু শ্রীমতী কলাবতী দেবী বলতেন, ‘পরিশ্রম করবে, ঘাম ঝরাবে, তবেই নাচ হবে।’ কথাটি মেনে চলি এখনো। রবীন্দ্রনাথ কি আমাদের কথা ভেবেই লিখেছিলেন, ‘নৃত্যে তোমার মুক্তির রূপ’। অবাক হয়ে ভাবি, সত্যিই তো! নৃত্যই তো জীবনের সকল গ্লানি, ব্যর্থতা, দুঃখ, বেদনা থেকে মুক্ত করেছে আমাকে। নিয়ে গেছে আলোর পথে। আমি অহংকারী নই। তবে নৃত্যশিল্প আমার অহংকার।
ওয়ার্দা রিহাব: শাস্ত্রীয় মণিপুরি নৃত্যশিল্পী ও গবেষক।