নেচে-গেয়ে বন্ধুর বিয়ে

বন্ধুর বিয়েতে বন্ধুরা মিলেই করেন এমন নাচ-গানের অনুষ্ঠান
বন্ধুর বিয়েতে বন্ধুরা মিলেই করেন এমন নাচ-গানের অনুষ্ঠান

‘অসম্ভব! নাচ তো দূরের কথা, আমাকে দিয়ে হাত-পা ছোড়াছুড়িও হবে না।’ চোখ কপালে তুলে সাফ সাফ বলে দিয়েছিলেন তানজিনা তাবাসসুম। বন্ধু জাকিয়া সুলতানার বিয়ে। দুজন একসঙ্গে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন; একেবারে ‘জিগরি দোস্ত’ যাকে বলে! জাকিয়ার গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে তানজিনাকে নাকি নাচতেই হবে। বন্ধুরা তো বটেই, জাকিয়ার খালাতো-ফুপাতো ভাইবোনও এই ‘ষড়যন্ত্রে’ শামিল। স্বয়ং কনেবন্ধুটিও আদুরে গলায় বলেন, ‘আমার বিয়ে, আর তুই নাচবি না?’ অগত্যা কী আর করা। দুই সপ্তাহ ধরে মহড়া শেষে অনুষ্ঠানের দিন তানজিনাকে নাচতে হলো। ‘কেমন নেচেছি জানি না। সবাই এক রকম শাড়ি পরেছিলাম। আমি শুধু অন্যদের দেখে দেখে তাল মিলিয়েছি। আগে খুব ভয় লাগছিল। অনুষ্ঠানের দিন আশপাশে তাকিয়ে মনে হলো ভয় কিসের, সব তো আমরা আমরাই!’ বলছিলেন তিনি।
গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে বর-কনের কাছের বন্ধু-আত্মীয়রা আজকাল মহা ধুমধাম করে করেন। দলে কেউই হয়তো পেশাদার শিল্পী নন, গান বা নাচের ব্যাকরণটা ঠিকমতো জানা নেই। তাতে কী? সবাই মিলে হাত-পা ছোড়াছুড়িই না হয় হলো! নিজেরা বসে নাচের গান ঠিক করা, এক রকম জামা পরা, সঙ্গে আনাড়ি কোরিওগ্রাফি—সব মিলিয়ে মজাটা অন্য রকম! শুধু নাচ নয়। গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছোটখাটো নাটিকারও চলন শুরু হয়েছে। নাটকের সংলাপের মাধ্যমে চলে বরপক্ষ-কনেপক্ষের খুনসুটি। অনুষ্ঠানটা আরও মজার, উৎসবমুখর করতেই এই আয়োজন।
কোন গানে নাচছেন বরের বন্ধুরা, কনেশিবিরে চলে এ নিয়ে গোপন সলাপরামর্শ। ওদিকে কনেপক্ষকে টেক্কা দিতে বরপক্ষও কম যায় না। দু-তিন সপ্তাহ আগে থেকেই জোর মহড়া চলে। হবু দম্পতি লাজুক মুখ করে স্বজনদের এই রোমাঞ্চ উপভোগ করেন। দুই মাস আগে বিয়ে করেছেন আশফিয়া আতিক। বলছিলেন, ‘আমার বন্ধু মূলত কাজিনরা। গায়েহলুদের সব আয়োজন ওরাই করেছিল। এক মাস আগে থেকে বাসায় কী যে হুলুস্থুল অবস্থা! প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রিহার্সেল হতো। আব্বু, আম্মু, খালামণিরা সব কাজ বাদ দিয়ে রিহার্সাল দেখতে বসে যেত। এখনো মাঝেমধ্যে সেই সময়গুলোর ছবি দেখে আমরা হেসে গড়াগড়ি খাই।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন রেজওয়ানুল হক। কদিন আগে বন্ধু আহমেদ সাদের গায়েহলুদে দলবেঁধে নেচেছেন। জানালেন, মহড়ার দিনগুলো খুব মিস করেন। ‘বন্ধুদের কেউ চাকরি করছে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে পড়ছে। সবারই অনেক ব্যস্ততা। সবকিছুর ফাঁকে সময় বের করে যখন আমরা রিহার্সেল করতাম, কাজের চেয়ে হাসাহাসিই বেশি হতো। মজা করে সাদকে বলছিলাম, “তুই আরেকবার বিয়ে কর, আমরা আরেকবার নাচি!”’