পড়ালেখার দল

একজনের উষ্কখুষ্ক চুল। বোঝাই যায়, রাজ্যের দুশ্চিন্তা তাঁর মাথায়। একটু পরপর বই-খাতা বন্ধ করে বলে, ‘দোস্ত, আমি তো ফেল করব! কী হবে আমার?’ একজন বেশ গোছানো। মনোযোগ দিয়ে পড়ে, বন্ধুদের পড়া বোঝায়। আরেকজন ঝাড়া হাত-পা, একেবারে টেনশন ছাড়া! দুই-চারটা পাতা উল্টিয়েই বলে, ‘উফ্! অনেক পড়ে ফেলেছি। যাই, একটু ঘুরে আসি!’
‘গ্রুপ স্টাডি’র সঙ্গে যদি আপনার পরিচয় থেকে থাকে, নিশ্চয় এই চরিত্রগুলোও আপনার চেনা। একেকজনের পড়ালেখার ধরনটা একেক রকম। তবু সবাই মিলে দল বেঁধে পড়ালেখা করার মজাই আলাদা! পরীক্ষার আগে পড়তে বসে হয়তো চেনা পড়াগুলোও গুলিয়ে যায় আপনার। মোটা মোটা বইগুলোর কালো কালো অক্ষর হয়তো দৈত্য-দানবের মতো লাল চোখে তাকিয়ে থাকে! সবাই মিলে একসঙ্গে পড়তে বসলে সে ভয় নেই, আড্ডার ছলে পড়াটা হয়ে যায়। এ কারণেই মূলত একসঙ্গে পড়তে বসা।
কেউ হয়তো বোঝে কম, কিন্তু ক্লাসে শিক্ষকের কথাগুলো দাঁড়ি-কমাসহ টুকে রাখতে জানে। কেউ আবার ক্লাসে উদাস, কিন্তু বাসায় গিয়ে ঠিকই পড়াটা এগিয়ে রাখে। কারও কাছে আছে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সংগ্রহ করা নোট। সব মাথা একসঙ্গে করে একটা চমৎকার ‘দল’ হলেই পড়ালেখাটা দারুণ হয়!
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলটার কথা যদি বলি, পরীক্ষা সামনে থাকলে ভালো পড়া হয়। তবে পরীক্ষা না থাকলে পড়তে বসে গল্প হয়, মজা হয়, হাসাহাসি হয়; শুধু পড়াটাই হয় না।’ বুয়েটের ছাত্র রিজওয়ান হাসানের ভাষ্য অবশ্য ভিন্ন। ‘সবাই মিলে না বসলে আমার পড়াই হয় না। আর আমার বন্ধুগুলো একেকটা শিক্ষকদের চেয়ে কড়া! পরীক্ষার আগে কানে ধরে পড়তে বসায়! আমি তো একটু অমনোযোগী। ওরা যেকোনো নোট ফটোকপি করার সময় আমার জন্যও একটা করে রাখে। পরে সবাই একসঙ্গে পড়তে বসলে সুবিধা হয়।’ শিক্ষার্থীদের মতে, মেডিকেল আর প্রকৌশলবিদ্যার পড়ালেখা নাকি ‘গ্রুপ স্টাডি’ ছাড়া রীতিমতো অসম্ভব।
সবাই বলছিলেন গ্রুপ স্টাডির উপকারিতার কথা। ব্যতিক্রম ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারিয়া শারমিন। তিনি বলেন, ‘দল বেঁধে পড়তে গেলে আমি সব সময় বলির পাঠা হই! আমার বন্ধুগুলো একটাও পড়তে চায় না। পরীক্ষার আগে সবগুলোকে আমার ধরে ধরে বোঝাতে হয়।’ মুখ গোল করে দল বেঁধে পড়ার অপকারিতা বলা শেষে ফারিয়া অবশ্য হেসে যোগ করলেন, ‘মজার ব্যাপার হলো, বন্ধুদের বকাঝকা করলেও, পরদিন ঠিকই আমি ওদের সঙ্গেই পড়তে বসি। অভ্যাস হয়ে গেছে। সবাইকে বোঝাতে গিয়ে আমার পড়াটাও ভালো হয়।’
গ্রুপ স্টাডি নিয়ে কথা হলো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুস সেলিমের সঙ্গে। তাঁর মতে, ‘কিছু কিছু ছাত্র শিক্ষকদের কাছে শেখার চেয়ে নিজে নিজে শিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের জন্য দল বেঁধে পড়াটা খুবই উপকারী। নিজেরা নিজেরা পড়ে বলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু আবিষ্কারও করে ফেলে। এই আবিষ্কারের আনন্দটা অন্য রকম। নিজে নিজে শিখলে পড়াটাও মজবুত হয়। আমি মনে করি, গ্রুপ স্টাডিই শেখার সর্বোত্তম পন্থা। যদি না পড়তে বসে, পড়ার চেয়ে আড্ডাটা বেশি হয়ে যায়!’