পপি মামি এবং রুপা

মাস কয়েক হলো ছোট মামা বিয়ে করেছেন। মানে নতুন মামি পেয়েছি আমি। আমার মামি মানে, পপি মামি মামার সংসারে আসার পর থেকে সব কিছু কেমন বদলে গেছে। বাড়িতে সারাক্ষণ অন্য রকম একটা ছন্দ খেলা করে। রাতের বেলায় সবাই একসঙ্গে যখন খেতে বসি, মামা-মামিকে একসঙ্গে পেয়ে তখন বেশ লাগে।
আমি মামাবাড়ি থেকেই পড়াশোনা করি। নানা থাকলেও নানি বেঁচে নেই। এত দিন এই বাড়িতে তাই একটু একলা একলা লাগত। এখন আর তেমনটা লাগে না। পপি মামি এই বাড়িতে আসার সময় আলাদা কিছু নিয়ে এসেছেন হয়তো!
মাস ছয়েক পরের কথা। সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই দেখি বাড়ি কেমন নীরব হয়ে আছে। সবকিছু যেন সেই আগের জায়গায় ফিরে গেছে। দম বন্ধ হওয়া পরিবেশে আমি মামিকে খুঁজতে থাকি। এমন সময় পাশের বাড়ি থেকে ছোট নানি বলে, ‘তোর মামি নাইয়র গেছে।’ নাইয়র যাওয়া কী সেবারই আমি প্রথম জানলাম। তবে মামির এভাবে নাইয়র যাওয়াটা আমি মানতে পারিনি।
শীত বেশ জেঁকে বসল সেবার। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। আমার তাই অবসর আর অবসর। এক সকালে উঠোনে রোদ পোহাচ্ছিলাম। হঠাৎ মামি বলে উঠল, ‘তিন দিনের জন্য নাইয়র যাব কাল।’ মামির মুখে এই কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়। তাঁর নাইয়র যাওয়া মানেই তো তিন দিনের কথা বলে বাপের বাড়িতে গিয়ে সাত দিন থাকা। মামা কেন যে কিছু বলে না! কিন্তু মামির পরের কথায় নিজের মাঝে ফিরি আমি, ‘এবার তোকেও নিয়ে যাব...।’
সেবারের শীতে মামির সঙ্গে তাঁর বাপের বাড়ি যাই আমি। মামি তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেই বলে, ‘এটা তোর আরেক নানাবাড়ি...।’
আমি আমার সেই নতুন নানাবাড়িতে সানন্দে চলতে থাকি। নিজের নানাবাড়ির চেয়ে এই বাড়িটাই আমার বেশি ভালো লাগতে থাকে। এখানে পপি মামি তো আছেই, নানা-নানি আছে, দুইটা মামাও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, খেলার সাথি হিসেবে আছে বড় মামার মেয়ে রুপা। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, এবার মামি তিন দিনের দিনই বাড়ি চলে যেতে চাচ্ছে। অথচ আমার তো যেতে ইচ্ছা করছে না। কেন? মামির বাপের বাড়ির জন্য নাকি রুপার জন্য? আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।
রিকশা করে মামির বাবাবাড়ি থেকে ফিরছি আমরা। কিছু পথ গিয়ে আমার গায়ের দিকে চোখ পড়ে মামির, ‘কিরে তোর জ্যাকেট কই?’
‘তাই তো। আমার জ্যাকেট কই?’ বলি আমি।
আমার শরীর তখন শীতে বরফ হয়ে আছে। কিন্তু এতক্ষণ চুপচাপ ছিলাম। কিছু বলিনি। আসলে জ্যাকেটটা আমি ইচ্ছা করেই আনিনি।
মামি রিকশাওয়ালাকে রিকশা ঘোরাতে বলে। রিকশা ফের চলতে থাকে রুপাদের বাড়ির দিকে। সেদিন আর আমাদের যাওয়া হয় না। ‘বাধা পড়েছে আইজ আর ক্যান যাবি?’ বলে পথ আগলান নানি। আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠি। আমার প্ল্যান যে সফল হয়েছে...।
কিন্তু রুপাকে আমার এই প্ল্যান সফল হওয়ার কথা বলতে গিয়েই পপি মামির হাতে ধরা পড়ি। কী জন্য যে কথাটা বলতে গিয়েছিলাম রুপাকে! এই আফসোস অনেক দিন বয়ে বেড়িয়েছি। আজ সেই কথা মনে হলে আমরা দুই জন কেবল হাসি। রুপার অদ্ভুত সুন্দর হাসি তখন আরও অদ্ভুত লাগে।