পরিবেশ নিয়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, জানার নানা সুযোগ

বৈশ্বিক নানা কারণে পরিবেশ নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ছে। গবেষণার পরিসরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। জেনে নেওয়া যাক পরিবেশসংক্রান্ত পড়ালেখা, বৃত্তি কিংবা সম্মেলন ও কর্মশালায় অংশ নেওয়ার সুযোগগুলোর খবর।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কনফারেন্স অব পার্টিস সিওপি২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন তরুণ পেশাজীবী ও গবেষক লামিয়া মোহসীন

দেশে পড়াশোনা

দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও পরিবেশসংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের অধীন ভূগোল ও পরিবেশ, ভূতত্ত্ব, সমুদ্রবিজ্ঞান, দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা এবং আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাজীবীদের জন্য এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে উইকেন্ড মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক নানা বিষয়ে পড়তে পারেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধীনেও।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ভূমি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিসহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়ে পড়ানো হয়।

ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের নানা সংকটের কারণে অনেক রকম ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণা ও শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তনের আগ্রাসী প্রভাব ও পরিবেশ সুরক্ষার নানা কৌশল শিখতে পারছেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এ নিয়ে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বিস্তৃত। পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে নানা উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থায় শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন।

ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পরিবেশবিজ্ঞান ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ শওকত ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ নীতিমালা, ব্যবস্থাপনাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াই। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বায়োডাইভারসিটিসহ বাংলাদেশ ও বিশ্বের নানা ইস্যু নিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছেন। পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দারুণ সব গবেষণার সুযোগ আছে। জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকি যেহেতু বাংলাদেশের অনেক বেশি, তাই এখানে গবেষণা ও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বাড়ছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।’

দেশের বাইরে পড়ার সুযোগ

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশের আউটরিচ কো–অর্ডিনেটর রুহুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু শিক্ষার্থী পরিবেশ, টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছেন। নানা ধরনের বৃত্তি, আর্থিক সুবিধাসহ গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। স্নাতক পর্যায়ের চেয়ে স্নাতকোত্তরেই এ ধরনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি দেখতে পাচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, কানেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিষয়ে পড়তে ও গবেষণা করতে পারেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে ফেলোশিপসহ নানা আন্তর্জাতিক বৃত্তি, যেমন ফুলব্রাইট ফরেন প্রোগ্রামের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশসংক্রান্ত বিজ্ঞান ও অর্থনীতি নিয়ে পড়তে পারেন।

ফেলোশিপ ও সম্মেলন

পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে সারা বিশ্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তরুণদের অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে। বায়োগ্যাস ও টেকসই জ্বালানি নিয়ে কাজ করেন প্রকৌশলী নিলয় দাশ। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট বিভাগ ও ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাজীবী ফেলোশিপের মাধ্যমে পাঁচ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান তিনি। নিলয় বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি বিষয়ে মাস্টার্স করেছি। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ ও গবেষণার জন্য আমি মাস্টার্সে ভর্তি হই। ২০১৬ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট বিভাগের ফেলোশিপে আবেদন করি। সেই ফেলোশিপ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার বিভিন্ন জ্বালানিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন ও কাজের পরিবেশ দেখার সুযোগ পাই। বায়োগ্যাস নিয়ে বাংলাদেশে কীভাবে পরিবেশ উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়ে জানার চেষ্টা করি। এই ধারণা থেকে পরে আমি স্টার্টআপ–বিষয়ক নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে স্লাশ ২০১৭ প্রতিযোগিতায় পরিবেশ নিয়ে কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করি।’

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কনফারেন্স অব পার্টিস সিওপি২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন তরুণ পেশাজীবী ও গবেষক লামিয়া মোহসীন। তিনি বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে সারা বছরই নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। বাংলাদেশ থেকেও তরুণ শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। বিভিন্ন পরিবেশবিষয়ক ফোরামে সংযুক্তির মাধ্যমে এসব সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তরুণ হিসেবে নিজের অবস্থান প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যায়।

লামিয়া মোহসীনের সঙ্গে যখন হোয়াটসঅ্যাপে কথা হলো, তখনো তিনি স্টকহোমস+৫০ সম্মেলনে ছিলেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ আয়োজিত এই সম্মেলনে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নানা সংকট নিয়ে আলাপ–আলোচনা চলছে।