পর্যটন আয়ের মোড় ঘোরাবে টেকনাফ!

নাফ নদীর মাঝখানে গোলাকৃতির জালিয়ারদিয়ার দ্বীপ। ছবিটি ১৮ ফেব্রুয়ারি নদী ঘেঁষা নেটং পাহাড় থেকে তোলা l প্রথম আলো
নাফ নদীর মাঝখানে গোলাকৃতির জালিয়ারদিয়ার দ্বীপ। ছবিটি ১৮ ফেব্রুয়ারি নদী ঘেঁষা নেটং পাহাড় থেকে তোলা l প্রথম আলো

টেকনাফের ‘জািলয়ারদিয়া’ দ্বীপ। নাফ নদীর মাঝখানে এক খণ্ড সবুজের গালিচা। চারপাশে নীল জল। দূরে পাহাড়ের সারি। দ্বীপ ঘেরা কেওড়া বন। গাঙচিলের ওড়াউড়ি। বেড়ানোর জায়গা যদি এমন হয় মুগ্ধ না হয়ে কী উপায় আছে!
সুবজে মোড়ানো এই সৌন্দর্য হতে পারে পর্যটন আয়ের অন্যতম মাধ্যম—এই চিন্তা থেকে জালিয়ারদিয়াতে আধুনিক মানের ‘টুরিজম পার্ক’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া জালিয়ারদিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সাবরাং সৈকতের ১ হাজার ১৪০ একর জমিতে বিদেশিদের জন্য হচ্ছে আরও একটি ‘বিশেষ পর্যটনপল্লি’।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আশা, দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেিশ-বিদেশি পর্যটকেরা ভিড় জমাবে টেকনাফে। যা দেশের পর্যটন আয়ের মোড় ঘোরাবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর বুকে গড়ে ওঠা দ্বীপ জালিয়ারদিয়ার আয়তন ২৭১ দশমিক ৭১ একর। স্বাধীনতার পর থেকে এই দ্বীপে চিংড়ি ও লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। এখন বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভূমি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে প্রতীকী মূল্যে এই দ্বীপটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুকূলে বন্দোবস্তি দিয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ১১ জন সচিবকে নিয়ে তিনি জালিয়ারদিয়া ও সাবরাং এলাকা সফর করেন। জালিয়ারদিয়ার সৌন্দর্য দেখে তখন সবাই মুগ্ধ হন। এরপর দ্বীপটিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ হাতে নেয় বেজা। ইতিমধ্যে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস লিমিটেডকে দিয়ে দ্বীপের প্রাথমিক সমীক্ষা করা হয়েছে।
পবন চৌধুরী আরও জানান, জালিয়ারদিয়াতে সব ধরনের ওয়াটার স্পোর্টস থাকবে। থাকবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। পর্যটকদের জন্য এখানে তৈরি হবে আধুনিক মানের রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। পাহাড় থেকে নদীতে নামার জন্য স্থাপন করা হবে কেব্ল কার। থাকবে কেনাকাটার আধুনিক শপিং মল। জালিয়ারদিয়া হবে অন্য রকম একটি বিনোদনকেন্দ্র। দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করেই এই পল্লি সাজানো হবে। আর এই দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিন খুব দূরে নয়।
বেজা সূত্র জানায়, ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার যে রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তার অংশ হিসেবে বেজা আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশে ১১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের জালিয়ারদিয়া ও সাবরাং অন্যতম।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘ভরা পূর্ণিমায় এই দ্বীপের সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেয়। আবার জোয়ারের সময় অন্য রকম রূপ নেয়। আমরা এই সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে জালিয়ারদিয়াকে সাজানোর চেষ্টা করছি। এখানে দেশি বিদেশি পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তখন এই জালিয়ারদিয়া হবে কক্সবাজারের পর্যটনের অন্য রকম বিনোদনকেন্দ্র। লাখ লাখ পর্যটন এখানে ছুটে আসবেন।’
এদিকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টায় গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবরাংয়ের বিশেষ পর্যটনপল্লির নির্মাণকাজের ভিত্তিফলক উন্মোচন করার কথা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, সাবরাং সৈকত এলাকার ১ হাজার ১৪০ একর জমি চিহ্নিত করে বেজাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের পর সেখানে তিনটি সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। জোয়ারের প্লাবন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে। কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ককে সাবরাং পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজারকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকগুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে। টুরিজম সেক্টরকে আরও এগিয়ে নিতে বেজা কক্সবাজারকে ঘিরে একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কক্সবাজার পর্যটনের অন্য রকম বিনোদনকেন্দ্র হলে লাখ লাখ পর্যটক এখানে ছুটে আসবে। তখন টেকনাফ পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা হবে। যা পর্যটন আয়ের চিত্রই বদলে দেবে।