পাখি দিয়ে পোকা দমন

ধানখেতের মাঝে ১৫ থেকে ২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপরই উড়ে এসে বসছে আর খেতের পোকা ধরে খাচ্ছে নানা জাতের পাখি। এভাবে কীটনাশক ছাড়া সহজেই দমন হচ্ছে পোকা।
পোকা দমনের পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। পাখি বসে এমন উঁচু ডাল বা খুঁটির নাম পার্চ। আর পার্চ থেকেই পার্চিং নামের উদ্ভব। পোকা দমনের এই পদ্ধতি দেশের নানা জায়গায় এর আগে ব্যবহৃত হলেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু গত বছর থেকে। এখন উপজেলার ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর আমনের জমির মধ্যে চার হাজার হেক্টর জমিতে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি কৃষিজমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, পোকা দমনে এই পদ্ধতি শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ কার্যকর। এ কারণে প্রতি একরে কীটনাশক খাতে চাষিদের খরচ কমেছে এক হাজার টাকারও বেশি। পাশাপাশি কৃষকেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার শুরুর পর পাখির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ধানখেতে পাির্চং পদ্ধতির ব্যবহার দেখা গেছে। আমনের জমিতে পুঁতে দেওয়া গাছের ডাল ও বাঁশের কঞ্চিতে শালিক, ফিঙে, বক, বুলবুলিসহ নানা জাতের এসে বসছে। একটু পরপর ডাল থেকে জমির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল পাখিগুলো। যে জমিতে পোকা বেশি সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি।
এই পদ্ধতির সাফল্যের হার কেমন? পাবলখালী বিল এলাকার চাষি অমলেন্দু চাকমার উত্তর, ‘বেশ ভালো’। তিনি বলেন, ‘আমি এক একর জমিতে আমন চাষ করেছি। আগে পোকামাকড় দমনে প্রচুর কীটনাশক খরচ হতো। এখন পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় কীটনাশক প্রায় লাগছেই না। নামমাত্র কীটনাশক ব্যবহার করছি বলে খরচও কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কীটনাশকের ব্যবহার কম হওয়ায় ইদানীং পাখির সংখ্যাও বেড়েছে। জমিতে বক, শালিক, ফিঙেসহ হরেক রকমের পাখির মেলা বসে।’
কবাখালী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সেলিমও উপজেলায় পাখির সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি করলেন। তিনি বলেন, কবাখালী কৃষি ব্লকে ২২০ জন চাষির সবাই পার্চিং–পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। সহজ এই পদ্ধতিতে প্রায় কোনো খরচই লাগে না। উল্টো চাষিদের কীটনাশকের খরচ কমছে। এর ফলে পাখির সংখ্যাও বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহীনুল ইসলামের দাবি পার্চিং–পদ্ধতির মাধ্যমে শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ পোকা দমন হয়। তিনি বলেন, জমিতে ধানের চারা রোপণের পর মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, শিষ কাটা লেদা পোকাসহ নানান পোকা আক্রমণ করে। এসব পোকা আবার পাখিদের প্রিয় খাবার। পার্চিং–পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে পাখিরা পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এ পদ্ধতির ফলে জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার তিন ভাগের দুই ভাগ কমে গেছে।
উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব বলে পাখির সংখ্যা বাড়ছে। এতে পরিবেশের উপকার হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যও রক্ষা পাচ্ছে। কীটনাশকের অপব্যবহার রোধে এই পদ্ধতি গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।