পাসওয়ার্ড আমার জীবন ধ্বংস করে দিল!

অধ্যাপক মেহতাব খানম
অধ্যাপক মেহতাব খানম

সমস্যা
আমি ছাত্রী হিসেবে মোটামুটি মেধাবী। দেড় বছর আগে একটা ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। আমি জানতাম না ছেলেটি মাদকাসক্ত। আমার ইচ্ছে ছিল তাকে নেশার পথ থেকে ফিরিয়ে আনব।
একসময় জানলাম, আমাদের পাশের এলাকার আরেক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। তাকে বোঝালাম। কিন্তু বুঝল না আমাকে। তাদের সম্পর্কটা দুই মাস যেতে না যেতেই সে আবার ফিরে আসতে চাইল। একদিন বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গে যাচ্ছি, সে পাড়ার কিছু মাস্তান ছেলে দিয়ে আমার বন্ধুদের আটকাল। আমাকে ভয় দেখাল।
বলল, সম্পর্ক জোড়া না লাগালে আমার বন্ধুদের পেটাবে। আমি বন্ধুদের বাঁচাতে রাজি হলাম।
ও নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনেক কান্নাকাটি করল। আমার পায়ে পড়ল। শর্ত দিলাম, তার বাজে অভ্যাসগুলো ছাড়তে হবে। সে রাজি হয়। এর মধ্যে একদিন সে আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চাইল। আমি মজা করে ভুল পাসওয়ার্ড দিলাম। কিন্তু এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়াল। সে রেগে গিয়ে সম্পর্ক শেষ করে দিল।
আমার কোনো বড় ভাইবোন বা ভালো বন্ধুবান্ধব নেই যে এসব কথা শেয়ার করব। চুপিচুপি ঘুমের ওষুধ খাই। কিছুই ভালো লাগে না। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। আমাদের সম্পর্কের কথা এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে ওকে বিয়ে করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। সে আমার পাশে থাকলে আমি সব সামলে নিতে পারব। সামান্য একটা পাসওয়ার্ড আমার জীবন ধ্বংস করে দিল! 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শ
ছেলেটি মাদকাসক্ত। সে মাস্তান এবং তার আচরণেও সেটি প্রকাশ হয়ে গেছে। তাকে ভালো করার জন্য তুমি যে দায়িত্ব নিয়েছিলে, সেটি আদৌ সহজ ছিল না। হয়তো তার পরিবার থেকে সঠিক যত্ন ও দিকনির্দেশনা পায়নি বলেই এ ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছে। তার মাদকাসক্তি ও আচরণগত সমস্যার জন্য তাকে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সেবা নিতে হবে।
তোমারও যে কোনো ভালো বন্ধুবান্ধব নেই, সেটিও খুব স্বাভাবিক নয়। এ কারণেই ছেলেটির প্রতি তোমার নির্ভরশীলতা খুব বেশি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোমার এই মানসিক দূরত্ব খুব দুঃখজনক।
লোকজন জেনে গেছে বলে ওকে বিয়ে করাটা হবে তোমার জন্য আরও বড় বিপদের মধ্যে পা দেওয়া। সে তোমার পাশে থাকলে সব সামলে নেওয়ার পরিবর্তে তুমি মানসিকভাবে আরও অনেক বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
তুমি মেধাবী ছাত্রী এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে। আত্মবিশ্বাস ও নিজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তুমি নিশ্চয়ই নিজের এবং অন্য সবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। নিজের চেয়ে অন্যকে বেশি ভালোবাসা দিয়ে দিলে আমরা কখনো নিজের যথেষ্ট যত্ন করতে পারি না।
তোমার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তার কাছে অনুনয়–বিনয় না করে অন্য কোনো ভালো লাগার বিষয় নিয়ে মনকে ব্যস্ত রাখা। পরিবারের
মধ্যে কিছুটা হলেও যাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় তার সঙ্গে মন খুলে কথা বলো।
এ ছাড়া শরীরচর্চা করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ভালো বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদি আমাদের খুব ভালো রাখে। তোমার বিষণ্নতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলরের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.