পাহাড়ের কোলে উদ্ভিদ উদ্যান

২৫০ একর পাহাড়ি ভূমির ওপর দেখা মিলবে বৈলাম, বাটনা, গর্জন, সোনালুসহ ৫০টি বিরল প্রজাতির গাছের বাগান। পাশাপাশি স্বচ্ছ জলের হ্রদে শোভা পাবে নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ। থাকবে পর্যটকদের জন্য পিকনিক স্পট, বাংলো, শিশুপার্কসহ আরও অনেক কিছু। আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে কক্সবাজারের রামুর উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ।

কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে রামু উপজেলার রাজারকূলের পাহাড়ি এলাকায় তৈরি হচ্ছে এই ইকোটুরিজম কেন্দ্র। এ বছরের ১৩ জুলাই পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এই উদ্যান উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির ছোঁয়া নিতে সেখানে যাচ্ছেন।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছরের মার্চ মাসে রামুর রাজারকূল ইউনিয়নের ২৫০ একরের বিশাল পাহাড়ি ভূমিতে যাত্রা শুরু হয় এই উদ্যানের। প্রথম ধাপে দুই কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ একর ভূমিতে উদ্যানের উন্নয়ন করা হয়। এর মধ্যে পাহাড়ে ওঠার রাস্তা, ফুলের বাগান তৈরি, পুকুর খনন ও আবাসিক ভবন তৈরির কাজ করা হয়। তা ছাড়া বিরল ও বিলুপ্ত উদ্ভিদ বৈলাম, বাটনা, বৌদ্ধ নারকেল, ধলিগর্জন, কাঠবাদাম, সোনালুসহ ৫০ প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়।

কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনটির দ্বিতীয় দফার উন্নয়নকাজ শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে। এ দফায় আরও তিন কোটি ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই পর্যায়ে ৮৫ একর ভূমিতে বাগান সম্প্রসারণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ওষধি, বিরল প্রজাতির ও মূল্যবান গাছের বাগান সৃজনের কাজ। পাশাপাশি টয়লেট, বসার ঘর, পার্কিং লট, পানি সরবরাহের লাইন, পরিবেশবন্ধব কটেজ-বাংলো, জলজ উদ্ভিদের জন্য লেক সংস্কার ও খনন, স্পোর্টস জোন, শিশুপার্ক ও পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হবে। আগামী বছরের জুলাই মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিশাল মাঠে ফুলের বাগান সৃজন করা হচ্ছে। স্থানীয় বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বাগান ঘুরে দেখছে। অনেকে ছবিও তুলছে। রামু ডিগ্রি কলেজের ছাত্র সাইফুল আজিম বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নিয়ে আমরা যেমন অহংকার করি, তেমনি বিনোদনের অন্য কিছু না থাকায় আমাদের হতাশ হতে হয়। এই বোটানিক্যাল গার্ডেন কিছুটা হলেও সেই হতাশা দূর করবে।’

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা সমুদ্রসৈকত আর সূর্যাস্ত ছাড়া আর তেমন কিছু দেখার সুযোগ পান না। তাই পরিবেশবান্ধব বিনোদনসেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর উদ্যানটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই উদ্যান বড় ভূমিকা রাখবে। পুর্ণাঙ্গ রূপ পেলে কেবল কক্সবাজার নয়, সারা দেশের সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে এটি। শিক্ষার্থীরা এখানে এসে গবেষণা করতে পারবেন। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও এটি ভূমিকা রাখবে।