পাহাড়-দেশে মাছের ঝরনা (বাকি অংশ)

রেমাক্রি থেকে নাফাখুমের দিকে যেতে হয় এমন ঝিরি পথ ধরেই। কোথাও কোথাও এই পথ বেশ সরু, কোথাও পানিতে পা ডুবিয়েই চলতে হয়, কোথাও আবার পাড় ধরে ধরে চলা। ছবি: তরিকুল ইসলাম জেবিন
রেমাক্রি থেকে নাফাখুমের দিকে যেতে হয় এমন ঝিরি পথ ধরেই। কোথাও কোথাও এই পথ বেশ সরু, কোথাও পানিতে পা ডুবিয়েই চলতে হয়, কোথাও আবার পাড় ধরে ধরে চলা। ছবি: তরিকুল ইসলাম জেবিন

খেতে ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে দীপার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এসএসসি পাস করে সে আর পড়তে পারবে না! থানচিতে কোনো কলেজ নেই। কলেজে পড়তে হলে তাকে বান্দরবান যেতে হবে। কিন্তু দীপার পরিবারের সে আর্থিক সামর্থ্য নেই। দুপুর ১২টার দিকে বাঁশশ্রমিকদের একজন জানালেন, একটি নৌকা পাওয়া গেছে, তবে ভাড়া বেশি দিতে হবে। আমরা রাজি। তবে আদিবাসী দুই ভাইবোনকে রেখে যেতে হবে। কারণ তারা যেখানে যাবেন, এই নৌকা সে পর্যন্ত যাবে না।


বান্দরবান থেকে থানচি আসার সময় আমরা সড়কপথে পাহাড়ের গা বেয়ে, কাঁধ মাড়িয়ে, মাথায় চড়ে এসেছি। এবার পাহাড়ের পায়ে পায়ে চলার পালা। মনে হলো নদীপথে ভ্রমণ না করলে পাহাড় দর্শন সম্পূর্ণ হতো না। দুপাশে সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ জলের নিচে স্পষ্ট নদীর পাথুরে তলদেশ। অপরূপা শঙ্খ নদীতে দুপুর ১২টায় আবারও যাত্রা শুরু করে স্রোতের প্রতিকূলে আমাদের নৌকা চলতে শুরু করল। স্বভাবতই গতি খুবই ধীর। এ নৌকাগুলোর তলায় লোহার পাত লাগানো, যাতে পাথরে ঘষা লেগে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। শঙ্খ নদীর গভীরতা কোথাও অনেক বেশি; স্বচ্ছ পানিতেও তলদেশ দেখা যায় না আবার অনেক জায়গায় পানি দুই-এক ফুটেরও কম, এসব জায়গায় নৌকা থেকে নেমে, ঠেলে ঠেলে নৌকা পার করতে হয়। বেশ কয়েক জায়গায় দুজন মাঝির সঙ্গে আমরাও নৌকা ঠেলে পার করলাম।

‘পদ্মমুখে’ এসে পৌঁছলাম ঘণ্টা খানেক চলার পর। এখানে নদী অনেক গভীর। দুপাশে খাড়া অনেক উঁচু পাহাড়। নদীর পাড়ে পায়ে হাঁটা পথ নেই। শঙ্খ থেকে খাড়া পাহাড় উঠে গেছে। ‘বাঘের মুখ’ এলাকায় এসে নৌকা ভিড়ল। এখানে একটি বড় দোকানঘর আছে। মালিক আদিবাসী একটি পরিবার। ৪/৫ জন আদিবাসী নারী এটি পরিচালনা করেন। চা-সিগারেটসহ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায় এখানে। পাশেই বেশ কয়েকটি টেবিল ও বেঞ্চ পাতা রয়েছে। সেখানে বসে লোকজন ভাত, নাশতা, পাহাড়ি মদ ‘চু’ পান করছে। মাঝি ও ব্যবসায়ীরা এখানে দুপুরের খাবার খাবেন। আমরাও খাওয়ার পর্ব সেরে নিলাম এখানে। বিন্নি চালের ভাতের সঙ্গে শঙ্খ নদীর মাছ। ঝাল অনেক বেশি বটে কিন্তু দুপুর রোদে নদীর পাড়ে বসে এই খাবারের স্বাদ বুঝতে হলে আপনাকে তা নিজের জিবেই চাখতে হবে। এটা বলে বোঝানো যাবে না। ঝালে নাকাল আমাদের অবস্থা দেখে খাওয়া শেষে আমাদের এক প্লেট বিশেষ মিষ্টান্ন দিলেন দোকানি। এটা খেয়েই আমরা ওই যাত্রায় ঝালের হাত থেকে রেহাই পেলাম। নৌকা আবার চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর নৌকা থেকে তিন্দু বাজার দেখাল সহযাত্রীরা। নদীর পাড়েই তিন্দু বাজার। হাটবার বলে অনেক নৌকা ও লোকজন আসা-যাওয়া করছিল তিন্দু বাজারে। মাঝি আমাদের জানালেন, রেমাক্রি আর বেশি দূরে নয়।

সাঙ্গু নদীর উজানের এক মারমা বসতি রেমাক্রি। নাফাখুম ঝিরি এসে শঙ্খের সঙ্গে মিশেছে রেমাক্রিতে। ঘাটের পাশেই নদী তীরে অনেক দোকানপাট। বেলা সাড়ে তিনটায় রেমাক্রিতে এসে পৌঁছলাম আমরা। আমাদের সঙ্গে আসা বেলুনবিক্রেতা রুবেল মং প্রু অং মারমা চেয়ারম্যানের দোকান দেখিয়ে দিল। সেখানে গিয়ে জানলাম, চেয়ারম্যান তিন্দু বাজারে। তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে দোকান চালাচ্ছেন। আমরা পরে আসব বলে চলে এলাম নদী থেকে ৪০/৫০ ফুট ওপরে রেমাক্রি বাজারে। সেখানে এসে মং চিং মেম্বারের ছেলে উ সি নোকে খোঁজে বের করলাম। পরিচয় পর্ব শেষে তিনি আমাদের ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করার আমন্ত্রণ জানালেন। কিন্তু আমরা জানালাম, এখনই একজন গাইড নিয়ে নাফাখুমের উদ্দেশে রওনা দিতে চাই আমরা। দ্রুতই একজন গাইডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে আমাদের রওয়ানা করিয়ে দিলেন উ সি নো। তবে, আগে জেনে নিলেন আমরা রাতে কী খেতে চাই।

এক হাতে দা আর আরেক হাতে টর্চ নিয়ে গাইড আমাদের নিয়ে চললেন নাফাখুমের দিকে। নাফাখুম ঝিরির পাড় ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। গাইড তাড়া দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি চলার, নইলে সন্ধ্যার আগে নাফাখুম পৌঁছাতে পারব না। কয়েক ঘণ্টার পথ। বেশির ভাগই ঝিরি ধরে ধরে। এ পথে চলতে গিয়ে আমাদের সাত-আটবার ঝিরি পার হয়ে অন্য পাড়ে যেতে হয়েছে। আমরা মহা আনন্দে তার পিছু পিছু হাঁটু ভিজিয়ে ঝিরি পার হয়েছি। পথে মারমাপাড়া। গাইড তাঁর নবম শ্রেণী পড়ুয়া বোন ও ছোট ভাইকে পথে দেখে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কথায় কথায় তিনি জানালেন, এ পথে তিনি সবচেয়ে পুরোনো গাইড। বড় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ায় বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে লিখতে-পড়তে পারেন। নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও এখন ভাইবোনদের পড়াশোনার দিকে খেয়াল রাখেন। আমরা সামান্য সময়ের জন্য মারমাপাড়ায় থামলাম। এক ঝলক দেখে নিলাম মারমাপাড়া, বৌদ্ধমন্দির। মন্দিরের প্রধান ভিক্ষুর সঙ্গে শুভেচ্ছা-বিনিময় হলো। আবারও চলতে থাকলাম ঝিরির পাড় ধরেই। ঝিরির পানি খুব স্বচ্ছ, পাথুরে তলদেশ। মাঝে মাঝে ছোট-বড় পাথর ছড়ানো-ছিটানো। ঝিরির দুপাড়েই পাহাড়। পাশে সরু পায়ে হাঁটা পথ, একজনের পেছনে একজন হাঁটতে হয়। মাঝে মাঝে গাছের ডাল, লতাপাতা সরিয়ে যেতে হয়। কোথাও কোথাও সামান্য চড়াই-উতরাই। ঝিরির পানিতে এক ধরনের মাছ লাফাচ্ছে। মনে হচ্ছে উড়ুক্কু মাছ। কিছু আদিবাসী নারী-পুরুষ মাছ ধরছে। একজন নারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের দেখা পেলাম; ঝিরির কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে মাছ ধরছেন। গাইড পরিচয় করিয়ে দিলেন। নির্জন পথে আদিবাসী ছাড়া আর কাউকে দেখিনি। দেখা হওয়া সবাই

নাফাখুম জলপ্রপাত। কানে বাজছে মাছের ঝরনার ঝিরি ঝিরি কলতান! তার ছবিটা এভাবেই মনে গাঁথা থাকবে। কিন্তু তার গানের কথা কি আমরা বুঝতে পারব না? ছবি: তরিকুল ইসলাম জেবিন
নাফাখুম জলপ্রপাত। কানে বাজছে মাছের ঝরনার ঝিরি ঝিরি কলতান! তার ছবিটা এভাবেই মনে গাঁথা থাকবে। কিন্তু তার গানের কথা কি আমরা বুঝতে পারব না? ছবি: তরিকুল ইসলাম জেবিন

আমাদের গাইডের পাড়ার লোক, তাঁর আত্মীয়-পরিজন। আরও কিছুক্ষণ চলার পর ঝিরির পাশে একটি দোকান দেখলাম। সেখানে একজন মারমা নারী শিশুসহ বসে আছেন। দোকানের পেছনে তাঁর থাকার জায়গা। একপাশে উনুনে রান্না করছেন তিনি।

বসন্তের পড়ন্ত বিকেল। ঝিরিপথে হাঁটছি আর দুপাশের পাহাড়, গাছপালার অপূর্ব রূপ দেখছি। এমন নৈসর্গিক দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। অনভ্যস্ত পায়ে এতটা পথ হেঁটেও ক্লান্তি নেই যেন। গাইড হঠাৎ থেমে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছি কি না। কান সজাগ করে বুঝতে পারলাম খুবই মৃদু পানির শব্দ। নাফাখুম শৈলপ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে ঘোষণা করলেন গাইড। জানালেন, সামান্য দূরেই ওই পাহাড়ের জলপ্রপাত। কিছুক্ষণ পর দূর থেকে দেখতে পেলাম জলপ্রপাত। জলপ্রপাতের নিচে বিশাল অংশজুড়ে গভীর পানির আধার। জলপ্রপাতের পানি এসে পড়ছে সেখানে। প্রায় আর্ধ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরেট পাথর। সেই পাথরের ওপর দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বেয়ে চলে তীব্র স্রোতে পানি এসে পড়ছে ২৫-৩০ ফুট নিচে। চোখ জুড়িয়ে গেল শেষ বিকেলের আলোয় ‘নাফাখুম’ জলপ্রপাত দেখে। যেন পাহাড় দেশের এক উচ্ছল রাজকন্যা। পানিপ্রবাহের পরিমাণের দিক থেকে এটা সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়, কিংবা সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতগুলোর একটি। জলপ্রপাতের নিচের দিকের পাথরে নেমে তন্ময় হয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। জেবিন ভাই ক্রমাগত ছবি তুলে যাচ্ছেন। জলপ্রপাতের পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে সঙ্গে আনা হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। সাধারণত সন্ধ্যার পর পর্যটক বা বাইরের লোক এদিকে খুব একটা থাকেন না। গাইড ফেরার তাড়া দিলেন। তাঁকে খানিকটা অগ্রাহ্য করেই আমরা আরও আধঘণ্টা সেখানে বসে নাফাখুমের রূপ-সুধা, ঝরনার সংগীত উপভোগ করলাম। আমাদের গাইড জানালেন, মারমা ভাষায় ‘নাফা’ অর্থ মাছ, আর ‘খুম’ অর্থ ঝরনা। নাফাখুম মানে মাছের ঝরনা।

এবার ফেরার পালা। আসার সময় দিনের আলো ছিল। পথ দেখে চলা গেছে। এখন অন্ধকারে টর্চের আলোয় পথ চলতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বারবার ঝিরি পার হবার সময়। পথে বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালানো দেখলাম। গাইড জানালেন, এসব জায়গায় মাছ ধরা লোকজন মশা ও শীত তাড়ানোর জন্য আগুন জ্বালিয়ে রাখে। লোকজন মাছ ধরা শেষ করে বাড়ি ফিরলেও আগুন তখনও জ্বলছিল। রাত নয়টায় আমরা রেমাক্রি বাজারে ফিরলাম। তখনো অনেক দোকান খোলা। চলে এলাম উ সি নোর ডেরায়, আমাদের রাতের আশ্রয়ে। উ সি নোর বাড়িটা কাঠের তৈরি। নিচে দোকানঘর, চাহিদা আছে এমন সব জিনিসই সেখানে রাখেন তিনি। মা, বোন আর স্ত্রী সাহায্য করেন সব কাজে। মং চিং পরিবারের কৃষি উৎপাদনের উদ্বৃত্তও সেখানে বিক্রি করা হয়। দোকানে টেবিল পাতা। পরিবারের লোকজন ও অতিথিরা সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করেন। দোকানের পেছনে তাঁদের কয়েকটি থাকার ঘর। ওপরে দোতলায় পর্যটক ও অতিথিদের থাকার জায়গা। একটি বড় ঘরে ছয়টা বিছানা পাতা, তবে সেখানে এর দ্বিগুণ লোকও ঘুমাতে পারবে। দীর্ঘ যাত্রা আর হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্ত ছিলাম আমরা। বিন্নি চালের ভাত, সবজি আর পাহাড়ে দুর্লভ ডিম দিয়ে রাতের খাবার সেরে দোতলায় চলে এলাম ঘুমাতে। সেখানে আরো তিন-চারজন আদিবাসী অতিথি আছেন।

সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠেই রেমাক্রি বাজারে হাঁটাহাঁটি করলাম কিছুক্ষণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে থাকা-খাওয়া সব ব্যবস্থাই আছে এখানে। বিদ্যুৎ নেই। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী পরিবার। শুধু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়, এদের সবাই এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসও করেন। পাহাড়ি ঝরনা থেকে পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয় এখানে। পাশেই বিজিবি ক্যাম্প ও হেলিপ্যাড। বেশ কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠানেরও শাখা রয়েছে এখানে। সকাল নয়টায় নৌকা ছাড়ল। আরও পাঁচ-ছয়জন আদিবাসী যাত্রীর সঙ্গে আমরা দুজন। শঙ্খ নদীতে ফিরতি পথে আমাদের সময় কম লাগল। কারণ, এবার আমরা স্রোতের অনুকূলে চলেছি। পথে ছবি তুললাম শঙ্খ নদী আর পাহাড়ের। থানচিতে এলাম। ফোন দিতেই সেলিম ভাই জানালেন, উনি উপজেলা প্রশাসন কম্পাউন্ডেই আছেন। সেখানে গিয়ে দেখি উনি আমাদের জন্য বিশাল আকারের একটা পাহাড়ি পেঁপেসহ খাবারদাবার নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আমরা হাত-মুখ ধুয়ে সেগুলোর সদগতি করলাম। বান্দরবান ফেরার বাস সাড়ে ১২টায় আর বেলা আড়াইটায়। আমরা আর দেরি না করে বান্দরবানের উদ্দেশে থানচি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। শঙ্খ নদীর অপর পারে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে উনি বিদায় নিলেন। আমরা বলী বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে বান্দরবান পৌঁঁছলাম।

রাত সাড়ে আটটার বাসে ঢাকায় ফেরার টিকিট কেটে রওনা দিলাম বান্দরবানের বিখ্যাত স্বর্ণমন্দির দেখতে। অসংখ্য সিঁড়ি মাড়িয়ে পাহাড়চূড়ায় স্বর্ণমন্দির। শেষ বিকেলের আলোয় স্বর্ণমন্দির দেখে প্রাণ জুড়াল। আমরা শেষ সময়ে আসায় স্বর্ণমন্দিরটা প্রায় ফাঁকা। বিভিন্ন বিগ্রহ ও কারুকাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। যতক্ষণ আলো ছিল ছবিও তুলতে পেরেছি। স্বর্ণমন্দির থেকে বান্দরবান শহরসহ আশপাশের অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। সামনের দিগন্তে চোখ মেলে বসে আছি মন্দিরের নৈঃশব্দ্যে। ঝুপ করে সূর্য ডুবে গেল। কিন্তু আকাশে তখনও বহু বর্ণিল আলোর খেলা। সামনে খোলা আকাশ আর বিস্তৃত প্রান্তর। কিন্তু কানে বাজছে এক মাছের ঝরনার ঝিরি ঝিরি কলতান! পাহাড় দেশের ওই উচ্ছল রাজকন্যার ছবি ভাসছে চোখে, শত-সহস্র নূপুরের ছন্দ তুলে যেন সখীদের নিয়ে নেচে নেচে গান গাইছে সে! তার ছবিটা এভাবেই মনে গাঁথা থাকবে কিন্তু তার গানের কথা কি আমরা বুঝতে পারব না?