পুরোনো সেই দিনের কথা

আপনার জীবনে সবচেয়ে প্রিয় সময় কোনটি? বেশির ভাগই বলবেন, ছেলেবেলা। সেসব দিনের কথা মনে পড়ে কখনো? শত ব্যস্ত থাকলেও পুরোনো সেই দিনের কথা ভোলার জো নেই। আর ভুলতেই-বা কে বলছে! যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।/ ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়...।’ ছেলেবেলার ছোটখাটো কিছু জিনিস, যা আপনাকে স্মৃতিকাতর করবে, সেসব নিয়ে এই আয়োজন।

মার্বেল
মার্বেল

মার্বেল
স্কুল ফাঁকি দিয়ে বা বিকেলে রাস্তার ধারে মার্বেল খেলার কথা মনে আছে নিশ্চয়? মুঠোভর্তি মার্বেল দাগের বাইরে ছুড়ে মেরে নির্দিষ্ট আরেকটি মার্বেলে লাগানোর সে কী চেষ্টাই না করেছেন এককালে! কখনো সফল হয়েছেন, কখনোবা ব্যর্থ। পকেটভর্তি ঝুনঝুন করতে থাকা মার্বেল নিয়ে কল্পনায় না হয় ঘুরে আসুন সেই মেঠো পথ থেকে।

লাটিম
লাটিম

লাটিম
ডিম্বাকৃতির কাঠের টুকরোর মধ্যে ছোট্ট একটা পেরেক ঠোকা। যেটার বাইরে রশি পেঁচিয়ে মাটিতে ছুড়ে মারলেই ঘুরতে শুরু করে বনবন করে। এই লাটিম খেলেই অনেকে পার করে দিয়েছেন ছেলেবেলার পুরো দিন। প্রতিযোগিতাও চলেছে এটা নিয়ে। এর মধ্যে একজন হয়তো মাটিতে নয়, লাটিমটা ঘোরাতে পারত হাতের তালুতেই!

গুলতি
গুলতি

গুলতি
গাছের ডাল কেটে তৈরি করা হতো ইংরেজি ‘ওয়াই’ আকৃতির একটা কাঠামো। ওপরের দুদিকে বেঁকে থাকা ডালের মাথায় শক্ত করে বেঁধে নেওয়া হতো ইলাস্টিক। এবার ইলাস্টিকের ঠিক মাঝ বরাবর একটা মার্বেল, শক্ত মাটি বা খোয়া রেখে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুড়ে মারলেই ঠুস! লেগে গেলে সে কী আনন্দ!

সুপারিপাতার গাড়ি
সুপারি বা নারকেলগাছের শুকনা পাতার গাড়িতে বসে আছেন আপনি। আর সামনে ধুলো উড়িয়ে সেটা টেনে নিয়ে ছুটছে আপনার বন্ধু। অথবা কাঠের ফ্রেমে তিন চাকার বেয়ারিং লাগিয়ে দড়ি বেঁধে টানাটানির সেই অদ্ভুত বাহনের কথাই ভাবুন না! হালের ঝাঁ-চকচকে গাড়িতে বসে সেসব দিনের কথা ভাবলে শিহরিত হবেন কি না?

কলম খেলা
কলম খেলা

কলম খেলা
স্কুলের মাঠে রোদ বা বৃষ্টি? ক্লাসরুমটাই তখন খেলার মাঠ! প্রতি পিরিওডের ফাঁকে কিছু সময়ের বিরতি পেলেই হলো! ব্যস, স্যারের টেবিলে জমে উঠত কলম খেলার বিশ্বকাপ। ক্যারম খেলার চেয়েও সেটা কিছু কম উত্তেজনাময় নয়। টেবিলের চারদিকে কলম রেখে অন্যের কলমটা টোকা মেরে টেবিলের বাইরে পাঠানোর এই খেলা এখনো হয়তো জনপ্রিয় অনেকের কাছেই।

টিনের জ্যামিতি বক্স
টিনের জ্যামিতি বক্স

টিনের জ্যামিতি বক্স
নতুন ক্লাসে উঠে বইয়ের সঙ্গে হাতে পেয়েছিলেন একটা বক্স। লাল রঙের সেই টিনের বক্সের ওপর একজন শিক্ষার্থীর কালো রঙে আঁকা অবয়ব। বাক্সের ভেতরে কম্পাস, রুলার, ত্রিভুজসহ কত কিছু! এখন হয়তো সন্তানের জন্য আপনাকেও কিনতে হয় জ্যামিতি বক্স। আধুনিক সেসব জ্যামিতি বক্সের ভিড়ে একবার মনে করে দেখুন আপনার ছোটবেলার বক্সটির কথা! বেশ রোমাঞ্চকর অনেক গল্পই হয়তো জমে আছে আপনার সেই জ্যামিতি বক্সের ভেতরে।

ইরেজার কামড়ে শেষ
ইরেজার কামড়ে শেষ

ইরেজার কামড়ে শেষ
ইরেজার দরকার পেনসিলের দাগ মুছে ফেলার জন্য। অথচ ইরেজারের অর্ধেকটাই চলে যেত আপনার কামড়ে! স্বাদ-গন্ধহীন ওই ইরেজারে কামড় না দিলে যেন ইঁদুরের মতো দাঁত শিরশির করত অনেকেরই! আর কেউ কেউ মুখে না দিলেও পেনসিল দিয়ে ঠিকই ফুটো করে ফেলতেন বেচারা ইরেজারটাকে! এর জন্য কপালে যে বকুনি জুটত না, তা কে বলবে!

কাগজের নৌকা
কাগজের নৌকা

কাগজের নৌকা
একটা কাগজ ভাঁজ করলেই হয়ে যায় নৌকা; কী আশ্চর্য! বৃষ্টি নামলে এটাই যেন ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের এক কাজ! ইদানীং ‘জলের গান’-এর সেই গানটা শুনেছেন তো? ‘কাগজের নৌকা কেউ বানিয়েছে তা/ চুপ চাপ ভাসিয়েছে জলে।/ রেলগাড়ি ঝমাঝম, কেউ বেশি কেউ কম/ নিজস্ব কথাটুকু বলে।’ গানটা শুনতে শুনতে কি সেই ছেলেবেলার কাগজের নৌকার কথা মনে পড়ে?

ফিল্মের ক্যামেরা
ফিল্মের ক্যামেরা

ফিল্মের ক্যামেরা
ডিএসএলআর ক্যামেরা আর সেলফির রমরমা এখন। ফিল্মের ক্যামেরা এখন বলতে গেলে চলে যাচ্ছে জাদুঘরে! তবে অ্যানালগ দিনে ফিরে গিয়ে দেখুন না! একটা অন্ধকার ঘরে গিয়ে ক্যামেরায় ফিল্ম ভরে আনা। তারপর ফুলের বাগানের সামনে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে বা পরিবারসহ সিরিয়াস মুখে একটা পোজ। ‘একটু হাসুন’ বলেই ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানি। এরপর ছবিটা হাতে পাওয়ার জন্য দিন গোনা...।

চোর-পুলিশ খেলা
চোর-পুলিশ খেলা

চোর-পুলিশ খেলা
চার টুকরো কাগজ। একেকটিতে নম্বরসহ লেখা ‘চোর’, ‘পুলিশ’, ‘ডাকাত’ আর ‘বাবু’। মামুলি সেই কাগজগুলো নিয়েই কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কে চোর হচ্ছে আর কেই-বা বাবু, সেটা নিয়ে অনেক সময় ঝগড়া থেকে হতো হাতাহাতি!


স্মৃতিকাতর হওয়ার জন্য আরও কত বিষয়ই না তুলে আনা যায়! বিটিভিতে দেখানো হতো ‘মীনা কার্টুন’, ‘আলিফ লায়লা’, ‘রবিন হুড’, ‘সিন্দাবাদ’, ‘টারজান’, ‘মোগলি’। তারও আগে ম্যাকগাইভার, লেজার লাইটের কথা একবার ভাবুন! এ ছাড়া প্রথম পাওয়া ক্যাসিও ঘড়ি, পাড়ার দোকানের ইয়ো-ইয়োও কি কম মজার ছিল! টেপ রেকর্ডারের কথা উঠলে সঙ্গে চলে আসবে ক্যাসেটের কথাও। মনে হবে এই তো কদিন আগের কথা! হাওয়াই মিঠাই, টিনের পিস্তল, ফেরিওয়ালার মালাই (আইসক্রিম), ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের বইসহ আরও অনেক কিছুই আপনাকে উদাস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! সেসবের কথা ভেবে ব্যস্ততার ভিড়ে একটু না হয় ছেলেবেলায় ফিরে গেলেন। সময়টা মন্দ কাটবে না মনে হয়!