প্রতিদিন অর্ধেক বোতল মদ, অতঃপর...

জন ডিকক্স: যখন মদ খেতেন (বামে), মদ ছাড়ার পর (ডানে) ছবি: মেইল অনলাইন
জন ডিকক্স: যখন মদ খেতেন (বামে), মদ ছাড়ার পর (ডানে) ছবি: মেইল অনলাইন

মানুষ অনেক কারণেই মদপানের অভ্যাস করে। দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা তার অন্যতম। যদিও সেটা কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু জন ডিকক্স এ পথটাই বেছে নিয়েছিলেন ভাইকে হারানোর পর। প্রতিদিন অন্তত অর্ধেক বোতল স্কচ!
একবার মদ খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেলে খুব কম সময়ই নিজেকে সংবরণ করা যায়। ডিকক্সের খাওয়ার পরিমাণ তাই বাড়তে থাকে। এভাবে একসময় মদই ডিকক্সকে খেতে শুরু করল! নেশায় চুর থাকতেন সব সময়। শরীরে জমল মেদ। কোনো কাজই ঠিকভাবে করতে পারতেন না, শুধু মদের গ্লাসে চুমুক দেওয়া ছাড়া। সহজ কথায় নিরেট ‘অ্যালকোহলিক’।
ডিকক্স যে মদ ছাড়ার চেষ্টা করেননি তা নয়। সেটা অনেকটাই বাঙালির সিগারেট ছাড়ার মতো—প্রতিটি সিগারেটই শেষ সিগারেট! এভাবে একদিন নেশায় চুর হয়ে পান করছিলেন ডিকক্স। প্রতিরোধের দেয়াল তুলে দাঁড়ালেন তাঁর জীবনসঙ্গী লিডিয়া। স্বামীকে এর আগেও তিনি মানা করেছেন। কিন্তু সেদিন ভীষণ কঠোর হয়েই বোঝালেন, ডিকক্স কী পরিমাণ পান করছেন!
জীবনসঙ্গীর কড়া ডোজের ওষুধে কাজ হলো। সুরায় ডুবে যাওয়া মনকে ঝাড়া দিয়ে তুলে ডিকক্স ভাবলেন, অনেক হয়েছে, আর নয়! মদ খাওয়া ছাড়তে হবে। আচার-ব্যবহারও পাল্টাতে হবে। ডিকক্সের ভাষায়, ‘যেদিন আমার জীবনসঙ্গী এসে বলল কী পরিমাণ খেয়েছি, সেদিনই ছিল আমার শেষ চুমুক। সে বলেছিল, অনেক হয়েছে আর নয়। আমিও ঠিক তা-ই ভেবেছি। মদ খাওয়া ছাড়তে সেটাই প্রথম চেষ্টা ছিল না। কিন্তু সেটাই ছিল প্রথমবার যেদিন আমি সত্যি সত্যিই মদ ছাড়তে চেয়েছি, আমার স্ত্রীর সহায়তায়।’

মদ ছাড়ার পর জীবনসঙ্গী লিডিয়াকে নিয়ে সুখের সময় কাটছে ডিকক্সের। ছবি: মেইল অনলাইন
মদ ছাড়ার পর জীবনসঙ্গী লিডিয়াকে নিয়ে সুখের সময় কাটছে ডিকক্সের। ছবি: মেইল অনলাইন

সেদিন ছিল ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল। ডিকক্স সেদিন মনস্থির করার পর বাসা থেকে মদের বোতলগুলো ফেলে দেন লিডিয়া। এমনকি গ্লাসগুলোও তিনি বাসায় রাখেননি। শুরুতে মদ ছাড়া থাকতে বেশ ভোগান্তি গেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ডিকক্স সব ভুলে গেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘শুরুতে আমার দিনগুলো মনে থাকত। কয়দিন গেল, কত মাস গেল! কিন্তু সময়ের সঙ্গে আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম, স্ত্রী মনে করিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত!’
তা, লিডিয়া তাঁকে কী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন? মদ ছাড়া ৬০০ দিন! মানে, ডিকক্স মদ ছাড়ার পর ৬০০ দিন কেটে গেছে। এ সময় তাঁর শারীরিক ও মানসিক উন্নতি ঘটেছে চোখে পড়ার মতো। পরিবারকে সময় দিতে পারছেন। একটি অনলাইন কুকিং প্রোগ্রামে কাজ করার পাশাপাশি বাবাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারিতে কাজ করছেন ডিকক্স, ‘মদ খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক শক্তি ফিরে পেয়েছি। রান্নার অনুষ্ঠান ছাড়াও ডকুমেন্টারিতে কাজ করছি। আমি ও আমার স্ত্রী মিলে একটি বাড়িও কিনেছি। এ কয়দিনে ওজন কমিয়েছি ১৭ কেজি। জিমে যাই সপ্তাহে তিনবার।’
২৭ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান মনে করেন, মদ ছাড়ার জন্য মনের শক্ত ইচ্ছাই যথেষ্ট। যদিও অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডায় মদ না খাওয়াটা বেশ অস্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এমন দেশেও ডিকক্স শিখিয়ে দিলেন মদ ছাড়ার মন্ত্র, ‘সব সময় মনকে বুঝিয়েছি, আজ রাতে মদ না খেলে কাল ভালো থাকব। এখন জীবনটা সত্যিই উপভোগ করছি, আর মদের পেয়ালা হাতে তোলার ইচ্ছা নেই।’ সূত্র: মেইল অনলাইন, ইয়াহু।