প্রবাসে দেশের পতাকা

ব্রড অ্যাক্রোস এলিমেন্টারি স্কুলের প্রবেশপথে বাংলাদেশের পতাকা।
ব্রড অ্যাক্রোস এলিমেন্টারি স্কুলের প্রবেশপথে বাংলাদেশের পতাকা।

আমরা বাংলাদেশিরা দেশে থাকতে দেশকে কে কতটা ভালোবাসি, তা তেমন চিন্তা করি না। কিন্তু বিদেশে বসবাস করলে দেশের প্রতি টান ও ভালোবাসা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যায়। যখন দেশে ছিলাম, তখন দেশ নিয়ে না ভাবলেও মন এখন আমাকে ভাবায় দেশের জন্য। অজান্তে মনের গহিনে প্রায়ই উঁকি দেয় ফেলে আসা গ্রাম, চির চেনা পথ, সবুজের সমারোহ, ঢাকার ব্যস্ত সড়ক, গাড়ির আওয়াজ, ভিড়, ফার্মগেটের ঠেলাঠেলি, প্রথম আলো বন্ধুসভার আড্ডা, আরও কত কী? দেশে থাকতে এসব চিন্তা কোনো দিন আমার মাথায় আসেনি। এখন আসে দেশের মায়ার টানে, ভালোবাসার টানে।

অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। শত জাতির বাস এই দেশে। বিরাট দেশ। আয়তনে বাংলাদেশের ৭০ গুণ। মনে হতে পারে, এমন একটি দেশে ক্ষুদ্র বাংলাদেশকে কতজন মানুষ চেনে বা জানে? অবশ্য একটা সময় ছিল মানুষ বাংলাদেশের নাম শুনলে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত! কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। সেই দিন আর নেই। এখন বেশির ভাগ আমেরিকান বাংলাদেশকে এক নামে চেনে।

স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে এক বাংলাদেশি ছাত্রী।
স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে এক বাংলাদেশি ছাত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ভাষা হলো স্প্যানিশ। ইংরেজির পাশাপাশি স্প্যানিশ ভাষার প্রাধান্য এখানে বেশি। এটা অবশ্য স্প্যানিশ ভাষাভাষির লোকদের কারণে। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ কি পিছিয়ে? এখন কোথায় নেই বাংলাদেশিরা?

মেরিল্যান্ডের ব্রড অ্যাক্রোস এলিমেন্টারি স্কুলের প্রবেশপথে বিভিন্ন দেশের পতাকার সঙ্গে আমার সোনার বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গর্ব করে বলি, এ আমার রক্তে কেনা সোনার বাংলাদেশের পতাকা। স্কুলের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী কম-বেশি বাংলাদেশকে চেনে। আর অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা বাংলা দু-একটি শব্দ বলতেও পারেন।

সেন্ট ফ্রান্সিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে বিভিন্ন দেশের ভাষার পাশাপাশি বাংলা হরফে বড় করে লেখা স্বাগতম। স্কুলে ঢুকতেই মনে হয়, বাংলাদেশ খুব বেশি দূরে নয়, রয়েছে চোখের সামনে। সেন্ট ক্যামিলাস চার্চ থেকে প্রতি রোববার একটি বুলেটিন বের হয়। সেখানে বাংলা হরফে লেখা গান বা ঘোষণা থাকে। এমনকি রোববারের খ্রিষ্টযোগে বাংলা গানও পরিবেশিত হয়।

প্রবাসে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ক্ষেত্রে বাঙালিদের বিশেষ সুনাম রয়েছে। তাঁরা পরিশ্রমী, সত্ ও বিশ্বাসী। যা অন্য কোনো জাতির মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। এই কারণে এখানে মালিকেরা বাঙালি কর্মীদের নিয়োগে প্রাধান্য দেন, ভালোবাসেন। বাংলাদেশের নাম অনেকেই জানে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের সুনাম দুই যুগ ধরে বহন করছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিপণি, মেসিস, টার্গেট, জেসিপ্যানি, কসকো, সিয়ার্সসহ নানা ছোট-বড় বিপণিতে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি শার্ট ও টি-শার্ট। এসব পোশাক মানসম্পন্ন, টেকসই ও বেশ দামি। শার্ট ও টি-শার্টের দাম ২৫ থেকে ৯০ ডলার পর্যন্ত। দেশে আমরা পোশাকশিল্পীদের অমর্যাদা বা লাঠিপেটা করি। তাঁরা যে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শুধু সময়ের অপেক্ষা। একদিন বাংলা ভাষা যুক্তরাষ্ট্রের বুকে উঁচু আসনে স্থান করে নেবে। আমরা আজ যে স্বপ্ন বুনি, কাল তা বাস্তবায়িত হবেই। আমরা অতি শিগগির মেরিল্যান্ডে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করব, এটাই আমাদের স্বপ্ন।

সুবীর কাস্মীর পেরেরা

সিলভার স্প্রিং, মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র